বাবলী রায় দেব ঃবাংলার তরে দিলে যাঁরা প্রাণ
পূণ্য প্রভাতে তাঁদের জানাই প্রনাম….
একুশে ফেব্রুয়ারি।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিতে মাতৃভাষা বাংলার জন্য ঢাকার বুকে জীবন উৎসর্গ করে যারা অক্ষয় অমর হয়ে আছেন তাদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করতে ইউনেস্ক ১৯৯৯ সালের ১৭ মে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দিয়ে দিনটিকে মহিমান্বিত করেছে।তাঁদের জন্যই বাংলা ভাষা আজ পৃথিবীর মিষ্টতম ভাষার সম্মান অর্জন করেছে।একুশের ভাষা শহীদদের চরণে হাজারো প্রনাম জানিয়ে তাদের সঙ্গে সঙ্গে স্মরণ করছি ভারতের মাটিতে শহীদ হওয়া ভাষা সেনানীদের।
হ্যাঁ ভারতের মাটিতেও সংঘটিত হয়েছে বাংলা ভাষা আন্দোলন, যার কথা হয়তো অনেক বাঙ্গালীই জানেন না।আসামের বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন ছিল আসাম সরকারের অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।১৯৬১ সালের ১৯ মে ঘটনার দিন শিলচরের রেল স্টেশনে বাংলা ভাষা সেনানীদের ওপর আসাম পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে করে হত্যা করে এগারো জন ভাষা সংগ্রামীকে যাদের মধ্যে ছিলেন কানাইলাল নিয়োগী,চন্ডীচরণ সূত্রধর,হিতেশ বিশ্বাস,সত্যেন্দ্রকুমার দেব,কুমুদরঞ্জন দাস,সুনীল সরকার,তরণী দেবনাথ,শচীন্দ্র চন্দ্র পাল,বীরেন্দ্র সূত্রধর,সুকোমল পুরকায়স্থ এবং কমলা ভট্টাচার্য। তাঁদের সম্মান জানাতে শিলচরের গান্ধিবাগে নির্মিত হয় ‘শিলচর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার’ যেখানে প্রতি বছর উনিশে মে বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের চরণে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে দিনটিতে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। ১৯শে মে’র আন্দোলনে আঘাতপ্রাপ্ত কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস চরম শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করে মারা যান দীর্ঘ চব্বিশ বছর পর।
এরপরও আসামের ব্রহ্মপুত্র উপতাক্যয় বাংলা ভাষার জন্য শহীদ হয়েছিলেন বিজন চক্রবর্তী এবং ডা. মনীষী দাস।দিনটি ছিল
১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট।১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই বাংলার জন্য আন্দোলনে নেমে শহীদ হন জগন্ময় দেব এবংদিব্যেন্দু দাস।
বাঙ্গালী হিসেবে প্রতিটি বাঙ্গালী ২১শে ফেব্রুয়ারির সকাল থেকেই নিজেদের আপামর বাঙ্গালী প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যাব। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা,নাটক গান কবিতার মাধ্যমে আবেগমথিত হয়ে স্মরণ করবো রফিকউদ্দিন আহমদ, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ ২২ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ হওয়া শফিকুর রহমান, আব্দুল আউয়াল, অহিউল্লাহ ছাড়াও সেই অজ্ঞাত বালকটিকে কিন্তু আশ্চর্যভাবে এড়িয়ে যাব ভারতের বুকে ভাষা বাংলার জন্য শহীদ হওয়া প্রাণগুলোকে।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’?”…যেমন সত্যি তেমনি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ের জন্য শিলচরের বাংলা ভাষা আন্দোলনকারীদেরকেও কি আমরা ভুলতে পারি??
ঠিক যেমন আমরা ভুলতে পারি না মানভূমের বাংলা ভাষা সংগ্রামীদের।বাংলার জন্য কেবল বাংলাদেশেই নয় ভারতের মাটিতেও রক্তপ্লাবন বয়ে গেছে এবং সেটা ১৯৫২ সালের অনেক আগেই,সে খবর কয়জন রাখেন??
অথচ বাংলা ভাষা আন্দোলনের পথিকৃত কিন্তু মানভূমের মাটি।
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ঘৃণ্য বঙ্গবিচ্ছেদের সময় ভারতের মূল ভূখণ্ডকে বিভক্ত করে পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ তৈরির ফলে জাতিসংকটের সঙ্গে সঙ্গে তৈরী হয়েছিল বাংলা ভাষার অস্তিত্ব সংকট।উত্তরবঙ্গ-অসম-ত্রিপুরার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত পূর্ব বঙ্গে দেখা দেয় বাংলার ওপর উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার সংকট আর বিহার-ওড়িশাসহ বাংলার বাকী অংশ নিয়ে গঠিত পশ্চিমবঙ্গে দেখা দেয় বাংলার ওপর হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের সংকট যাকে কেন্দ্র করে ১৯১২ সালে মানভূমে শুরু হয় বাংলা ভাষা আন্দোলন যা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ে মানভূমের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে এবং মানভূমের এই ভাষা আন্দোলনই ছিল পৃথিবীতে দীর্ঘতম ভাষা আন্দোলন যা আজ বিস্মৃতির অন্তরালে।
১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বক্সার যুদ্ধে দ্বিতীয় শাহ আলমকে পরাজিত করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিহার ও উড়িষ্যাসহ অবিভক্ত বাংলা অধিগ্রহণ করে।কর আদায়ের সুবিধার জন্য কোম্পানি এই অধিকৃত এলাকাকে তিন ভাগে ভাগ করে যথাক্রমে… ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পাঞ্চেত, ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে জঙ্গল মহল এবং ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মানভূম।মানভূম জেলার সদর দপ্তর তখন মানবাজার। এই জেলা বর্তমানের বর্ধমানসহ ঝাড়খন্ডের ধানবান,ধলভূম,
সেরাইকেলা-খার্সোয়ান নিয়ে গঠিত হয় যদিও পরবর্তীকালে যথাক্রমে ১৮৪৫, ১৮৪৬, ১৮৭১ ও ১৮৭৯ সালে মানভূমকে ক্রমান্বয়ে ভাগ করা হতে থাকে।
১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে কার্জনের বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও বাংলাভাষী মানুষদের ভূমি মানভূম-ধলভূমকে বিহার-উড়িষ্যার সঙ্গে সংযুক্তিকরণ করা হয়।এই বিভক্তি ছিল বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের প্রতি চরম আঘাত।ফলে শুরু হয় আন্দোলন।১৯২০ সালে জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ পুনর্গঠনের দাবী গৃহীত হয়।১৯৩১ সালের আগের আদমসুমারি অনুযায়ী,
মানভূমের সদর মহকুমার শতকরা ৮৭ জন বাসিন্দা তখন বাংলাভাষী।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বিহারে জাতীয় কংগ্রেস মন্ত্রীত্ব লাভ করে এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে গড়ে ওঠা ‘মানভূম বিহারী সমিতি’ নামক সংগঠনের আওতায় থেকে বিহার সরকার আদিবাসী ও উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে প্রাথমিক স্তরে হিন্দিভাষীদের জন্য বিদ্যালয় খুলতে শুরু করে,সেই সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে স্কুল-কলেজসহ সরকারি দফতরে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়।
বাংলা ভাষা তথা বাঙ্গালীদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণ ক্ষিপ্ত করে তোলে মানভূমের বাংলাভাষী মানুষজনদের। ব্যারিস্টার পি আর দাসের সভাপতিত্বে ‘মানভূম সমিতি’ নামক সংগঠন তৈরী করে সেখানকার বাঙ্গালীরা বাংলা স্কুল খুলতে তৎপর হন।এই সময় সতীশচন্দ্র সিংহ রাঁচি, পালামৌ, সিংভূম ও মানভূম জেলা নিয়ে ছোটনাগপুর নামক এক নতুন প্রদেশ গঠন অথবা বাংলার সঙ্গে পুনরায় সংযুক্তিকরণের দাবী জানান।প্রকট হতে থাকে এই অঞ্চলের সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলা ভাষার নাড়ির টান।সেই সময় পুরুলিয়া ছিল বিহারের অন্তর্ভুক্ত।
হিন্দি আগ্রাসনে বিরুদ্ধে বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতারা অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটিতে প্রতিবাদ জানালেন কিন্তু প্রতিকার না পেয়ে জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল ‘লোকসেবক সঙ্ঘ’ গড়ে তুলে বাংলা ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সোচ্চার হয়ে উঠলেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন যে কি পরিমান তীব্র এবং দৃঢ়কল্প ছিল সেটা জানা যায়
বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত সম্পাদিত ‘মুক্তি’ পত্রিকার সংকলন থেকে।এই আন্দোলনের কর্ণধার ছিলেন পুরুলিয়া কোর্টের আইনজীবী রজনীকান্ত সরকার, শরৎচন্দ্র সেন এবং গুণেন্দ্রনাথ রায়।
বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে সংসদের ভিতরে-বাইরে ওঠে তুমুল ঝড়।শুরু হয় টুসু সত্যাগ্রহ। ১৯৫৪ সালের ৯ই জানুয়ারী থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারী চলে এই টুসু সত্যাগ্রহ।তাদের দমনের জন্য শুরু হলো অত্যাচার। ৭৩ বছর বয়সী অসুস্থ নেতা অতুল চন্দ্র ঘোষকে বন্দী করে, খোলা ট্রেনে চাপিয়ে পাঠানো হলো ১৩৫ মাইল দুরে অবস্থিত হাজারিবাগ জেলে। সাংসদ ভজহরি মাহাতোকে হাত কড়া পরিয়ে, কোমরে দড়ি বেঁধে পেশ করা হলো কোর্টে।বিধায়ক সমরেন্দ্র ওঝার দু বছর এবং লাবণ্যপ্রভা দেবীর এক দফা কারাবাস হল। বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান রাঘব কর্মকার।বাবুলাল মাহাতো নামে এক জন্মান্ধ বালকও ছাড় পায় না।বান্দোয়ানের মধুপর গ্রামের কুশধ্বজ মাহাতো’র সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাঁর শিশু পুত্রকে বন্দী করা হয়।মানবাজার থানার পিটিদিরি গ্রামে মহিলা সত্যাগ্রহীদের উপর চলে নগ্ন আক্রমণ।লাবণ্যপ্রভা দেবী, ভজহরি মাহাতোর সঙ্গে বন্দী করা হয় কালীরাম মাহাতো,ভাবিনী দেবীসহ আরও অনেককে।সেই সঙ্গে চলে নারী- পুরুষ, নবীন-প্রবীনদের ওপর বিহার পুলিশের অকথ্য অত্যাচার।
লোকসেবক সঙ্গ থেকে নির্বাচিত সাংসদ চৈতন মাঝি তীব্র ভাষায় এই অত্যাচারের প্রতিবাদ জানালেন লোকসভায়।তাঁর সঙ্গে গলা মেলালেন সুচেতা কৃপালনী,লোকসভার প্রাক্তন স্পীকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পিতা নির্মলকুমার চট্টোপাধ্যায়, কমলকুমার বসু, তুষার চট্টোপাধ্যায়, হীরেন মুখোপাধ্যায়, মোহিত মৈত্র, ভজহরি মাহাতোপ্রমুখ।
মধুসূদন মাহাতো,ভজহরি মাহাতোরা গান বাঁধলেন।জগবন্ধু লিখলেন…
“…প্রাণে আর সহে না
হিন্দি কংগ্রেসীদের ছলনা।
ইংরেজ আমলে যারা গো
করতো মোসাবিয়ানা
এখন তার হিন্দি-কংগ্রেসি
মানভূমে দেয় যাতনা।”
অরুণ চন্দ্র ঘোষ লিখলেন…
“…দেশের মানুস ছাড়িস যদি
ভাষার চির অধিকার।
দেশের শাসন অচল হবে
ঘটবে দেশে অনাচার।”
ভজহরি মাহাতো লিখলেন…
“…বাংলা ভাষার দাবীতে ভাই
কোন ভেদের কথা নাই।
এক ভারতে ভাইয়ে ভাইয়ে
মাতৃভাষার রাজ্য চাই।”
১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার পাকবিড়রা গ্রাম থেকে লাবণ্যপ্রভা দেবী, অতুলচন্দ্র ঘোষসহ বিশিষ্টজনদের নেতৃত্বে সহস্রাধিক মানুষ এক ঐতিহাসিক পদযাত্রায় অংশ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন কলকাতার উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার পথে গ্রাম-গঞ্জ থেকে কাতারে কাতারে মানুষ যোগ দিতে থাকেন সেই পদযাত্রায়।অভ্যর্থনা আর সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চললো পদযাত্রা সঙ্গে ধ্বনিত হতে থাকে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’।প্রবীন -নবীনের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে প্রতিফলিত হয় মাতৃভাষার প্রতি অমোঘ টান।১৯৫৬ সালের ৬ মে কলকাতায় পৌঁছে শেষ হয় পদযাত্রা।৭ই মে ১৯৫৬, মহাকরণ অবরোধ করে গ্রেপ্তার বরণ করলেন ৯৬৫ জন ভাষা সেনানী।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হল থেকে বিজ্ঞাণী মেঘনাদ সাহা, ভাষাচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় বিহার সরকারের দমন নীতির তীব্র সমালোচনা করে ভাষা আন্দোলনকে সমর্থন জানালেন। ভাষার দাবীতে এই দীর্ঘ আন্দোলন শেষ হয়, ১৯৫৬ সালের ১লা নভেম্বর নবগঠিত পুরুলিয়া জেলা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে।
শিলচর বাংলা ভাষা শহীদদের স্মরণে সৌধ নির্মাণ করে তাদের প্রতি অঞ্চলভিত্তিক শ্রদ্ধা নিবেদন করার সুযোগ থাকলেও মানভূম ভাষা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতবিক্ষত পুরুলিয়াকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সেখানকার বাঙ্গালীভাষী মানুষদের। তাদের জন্য নেই কোনো পদক,নেই কোনো ভাতা, বিশ্ব প্রাঙ্গণে নেই কোনো স্বীকৃতি।
‘১লা নভেম্বর, পশ্চিম বাংলা ভাষা দিবস’…এইটুকু প্রাপ্তিকে আলিঙ্গন করে পুরুলিয়ার শুকনো মাটিতে স্মরণ করা হয় অতীতের ভাষা সেনানীদের যাদের খুঁজে পাওয়া যাবে
সিধো-কানহো-বিরশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ১৩২ জন ছাত্রের নোট বুকে।
একুশে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্ব প্রাঙ্গণে বিজয় কেতন উড়িয়ে বাংলার জয়গান গাইছে।সেটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের বাংলা প্রেমী মানুষগুলোর একান্ত সদিচ্ছায় যার চূড়ান্ত অভাব দেখা যায় এপাড় বাংলার মাটিতে নইলে কলকাতার বুকেও তো হাজারো আন্দোলন হয়েছে,হয়নি কেবল ভাষা আন্দোলন।তাই কি এই আন্দোলনকে বিশ্বের আঙিনায় পৌঁছে দেওয়ার এই অনীহা!!!
ভাষা তো সেই একই, বাংলা।আর আমরাও বাঙ্গালী।পুরো পৃথিবীজুড়ে প্রায় বিশ কোটির বেশি মানুষ বাংলায় কথা বলেন।বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীতে সপ্তম স্থানে রয়েছে আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা অথচ খেদের সঙ্গে বলতে হয় যত ঘটা করে আমরা বাংলাদেশের ভাষা সংগ্রামীদের স্মরণ করে মাতৃভাষা দিবস পালন করার জন্য প্রাণপাত করি তার সিকিটুকু দেখা যায় না ভারতের বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদ এবং সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার ক্ষেত্রে।মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কি কিছু কম ছিল…
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে মনে।
সময় এসেছে,একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবস পালনের সঙ্গে সঙ্গে শিলচরের ভাষা শহীদদের কথা গর্বের সঙ্গে তুলে ধরা,সেই সঙ্গে দেশের মাটি মানভূমে সংঘঠিত প্রথম বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং তার ফলাফল জনসমক্ষে তুলে ধরার দায়ভার গ্রহণ করার নইলে যে প্রজন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা মায়ের এক সন্তান জেলা পুরুলিয়া থেকে যাবে ‘চির জনম দুখিনী….’!!