বই-ই তাঁর বড় সম্পত্তি, বাড়িতে এক কোটি টাকার ওপর বই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের

বাপি ঘোষ ঃবইই তাঁর কাছে বড় সম্পত্তি। একটি ঘরে শুধু বই আর বই।আরেকটি ঘরে চারটে বড় আলমারি বোঝাই বই।ঘর থেকে ওপরে মানে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির সর্বত্র বই আর বই।ঘরের মধ্যে বই রাখার আর জায়গা নেই। তাই বইয়েরা সব সিঁড়ির মধ্যে গাদাগাদি অবস্থায় জায়গা করে নিয়েছে!! তাঁর হিসাবে বাড়িতে এক কোটি টাকার ওপর বই রয়েছে। আর প্রতিমাসে যে টাকা তিনি পেনশন পান তার থেকে দশ হাজার টাকা প্রতি মাসেই খরচ হয়ে যায় বই কিনতে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া শিবমন্দিরে বাড়ি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃ ইছামুদ্দিন সরকারের। তাঁর সে বাড়িটাই যেন একটা লাইব্রেরি। এই করোনা পর্বে তাঁর এই বইয়ের নেশা যেন আরও বেড়েছে। শুধু বই সংগ্রহ, বই পড়ার নেশাই তাঁর নেই —লেখালেখিও তাঁর নেশা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনবরত লিখছেন আর পড়ছেন। করোনা পর্বেই তাঁর চারটে বই প্রকাশিত হয়েছে। শীঘ্রই আরও সাতটা বই প্রকাশিত হতে চলেছে। চারটে বাংলায়, তিনটি ইংরেজিতে। স্বামী বিবেকানন্দের সমন্বয় ভাবনার ওপরও তাঁর আরও একটি বই ৪৬০ পৃষ্ঠার প্রকাশিত হতে চলেছে আগামী বছর। করোনা লকডাউন পর্বকে তিনি পুরোপুরি আরও বেশি করে লেখালেখি এবং পড়াশোনার ওপর কাজে লাগিয়েছেন।
১৯৭৭ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম এ পাশ করেন। তারপর ১৯৮৩ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ডক্টরেট করেন হিস্টোরিক্যাল জিওগ্রাফি অফ প্রাগজ্যোতিষ কামরুপা এনসিয়েন্ট অসম।১৯৮৩ সালে তিনি প্রথমে কালিম্পং কলেজে অধ্যাপনা করেন।তারপর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৪ সালে ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপনা শুরু। ২০০০ —২০০২ সালে ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। আবার ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। শেষে ২০১৮ সালে অবসরগ্রহণ। ঐতিহ্যে ও ইতিহাসে উত্তরবঙ্গ, দার্জিলিংয়ের ইতিহাস, ওম্যান ইন চেঞ্জিং সোসাইটি, হিস্টরিকাল স্টাডি অফ দ্য বাউলস এন্ড ইটস সিনক্রেটিক এটিটিউড টুয়ার্ডস মেন এন্ড সোসাইটি ইন রুরাল বেঙ্গল প্রভৃতি তারই লেখা। এসবের কিছু বইতে আবার তাঁর কন্যা অঞ্জসি সরকারও লেখায় সহায়তা করেছেন তাঁকে। ইংল্যান্ড, জার্মানি,অস্ট্রেলিয়া সহ পৃথিবীর ৩৭টি দেশের লাইব্রেরিতে তাঁর লেখা বই ঠাঁই পেয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় তাঁর লেখা বই থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনাও করে। আর তিনি ইতিহাস বিষয়ে বক্তব্য রাখতে বহু বার গিয়েছেন ঢাকা, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর সহ অন্য দেশে। তাঁর কথায়, অনেকে টাকা দিয়ে সোনাগহনা তৈরি করে। আমি কিনি বই।কারন বই সোনার চেয়েও মূল্যবান।
যখন করোনা পর্বে অনলাইনে সর্বত্র পড়াশোনা শুরু হয়েছে, যখন বইয়ের দিন গেলো গেলো বলে একটা হাওয়া উঠেছে তখন এই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিশ্বাস করেন, বইয়ের কোনও বিকল্প হয় না। একইসঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ইতিহাস সংরক্ষণের কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে না। বহু ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাসকে ধরে রাখার কাজ মন দিয়ে না করা হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেমন অন্ধকারে চলে যাবে তেমনই আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো। ডঃ সরকার আরও বলেন, “বইয়ের মধ্যে আমাদের জ্ঞানকে খুঁজতে হবে। বই আমার কাছে ওষুধের মতো কাজ করে। আমি শারীরিকভাবে বয়সের কারণে কিছুটা অসুস্থ হলেও বইয়ের নেশাই আমার সব অসুস্থতা চলে যায়।”