করোনার সঙ্কটে মানবিক কর্মসূচি পালনে স্কুল শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ ছেলেবেলায় যখন জমিতে লাঙল দিতেন বা জমিতে ধানের রোয়া বপন করতেন তখন থেকেই তাঁর মাথায় ঘুরপাক খেতো স্কুলের শিক্ষক হবেন, আজ কৃষিকাজ করেন না বটে তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে অন্যরকম অনুভূতি হয় বইকি।শিলিগুড়ি দক্ষিন শান্তি নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সরকার এই করোনা পরিস্থিতিতে অন্যরকম কাজই করে চলেছেন। করোনার জন্য স্কুল বন্ধ, কিন্তু শিক্ষকদের রয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা এই ভাবনা থেকে চিত্তরঞ্জনবাবু মানবিক বিভিন্ন কাজ করে চলেছেন। গতবছর লকডাউনের সময় ২৪ এপ্রিল থেকে পয়লা মে পর্যন্ত প্রতিদিন তিনশ জন গরিব মানুষকে ডিম ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।আবার আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিনি বইখাতা বিলি করেছেন নিজ উদ্যোগে।উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে আগ্রহী ছাত্রছাত্রদের আবার মোবাইলও বিলি করেছেন। একইসঙ্গে বর্ষার সময় গরিব বৃদ্ধবৃদ্ধাদের মধ্যে বিলি করেছেন ত্রিপল, শীতের মধ্যে দিয়েছেন কম্বল।এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্তর বাড়িতে তাঁর উদ্যোগে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও কোনও ছাত্র বাড়িতে ঠিকঠাক পড়ছে কিনা তারও খোঁজখবর করছেন।
কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি কাশিয়াবাড়িতে কৃষক পরিবারে জন্ম চিত্তরঞ্জন সরকারের। তাঁর বাবা জীবন চন্দ্র সরকারও ছিলেন একজন কৃষক। মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত বাবার সঙ্গে জমিতে ধানের রোয়া বপন, মাথায় পাটের বোঝা চাপানো, জমিতে লাঙল দেওয়ার মতো কাজ করতে হয়েছে। নানা সমস্যার মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে শিক্ষকতার জীবনে প্রবেশ।১৯৮০ সালে সুকনা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষক হিসাবে কাজে যোগদান, তারপর ১৯৮১ এবং ২০০২তে বাগডোগরা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় এবং গোসাইপুর ভুজিয়াপানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষক।সেখান থেকে শিলিগুড়ি পাটেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সবশেষে দক্ষিন শান্তিনগর হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২০০৮ সালে। একদিকে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন আরেকদিকে ছাত্র হিসাবে এখনও আরও উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের অধ্যবসয়ে তিনি ক্লান্তিহীন। সমাজের কথা চিন্তা করেই দুঃস্থ ও মেধাবীদের বিনা পয়সায় টিউশনও দিয়ে থাকেন তিনি।আবার অবসর পেলেই নানা বিষয়ে লিখে চলেছেন কবিতাও।সামাজিক নানা সমস্যা এবং করোনা সচেতনতার ওপরও তিনি কবিতা লিখেছেন। করোনার এই দুর্যোগের সময়ও শিক্ষকরাও বিভিন্ন ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বলেই তিনি বিশ্বাস করেন। তাঁর কথায়, একজন ডাক্তার বা নার্স হতে গেলেও ভালো শিক্ষক প্রয়োজন। শিক্ষকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল চাবিকাঠি।