রায়গঞ্জ ব্লকের দুর্গাপুর রাজবাড়ির পুজোর বয়স প্রায় ৫০০ বছর, প্রাচীনত্বের ঐতিহ্য আজও অম্লান

নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ ব্লকের দুর্গাপুর রাজবাড়ীর পুজোর বয়স প্রায় পাঁচশো বছর। বর্তমানে রাজা না থাকলেও রয়েছেন তার বংশধরেরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজবাড়ীর জৌলুস অনেকটা কমলেও প্রাচীনত্বের ঐতিহ্য আজো অম্লান। তবে করোনা সংক্রমনের কারনে এবছর শুধু ঘটপুজো হচ্ছে এই প্রাচীন রাজবাড়ীতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এই বংশের পূর্বপুরুষদের বাংলা-বিহার-ওড়িশার বিরাট অংশে জমিদারী ছিলো। শেরশাহের আমলেই এই পরিবারে দুর্গাপূজার প্রচলন হয়। প্রথমে ইটাহারের চূড়ামন এস্টেটে পুজো হতো,পরে কৃষ্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী, ভূপাল চন্দ্র রায়চৌধুরীর হাত ধরে পুজো শুরু হয় দুর্গাপুর রাজবাড়ীতেও। ইতিহাসের পথবেয়ে আজো পরবর্তী প্রজন্ম পুজোর ঐতিহ্য মেনে দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন প্রাচীনত্বের গন্ধমাখা কয়েকশো বছরের পুরানো মন্দিরে। তবে সময়ের সাথে সাথে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে পুজোতে। আগে মহালয়ার দিন থেকেই দেবী আরাধনায় মেতে উঠতেন রাজপরিবারের সদস্যরা। দেবীর কাছে মহিষ ও ছাগ বলির প্রথা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে দেবীর বোধন হয় ষষ্ঠীতে,উঠে গিয়েছে বলিপ্রথাও। তবে প্রতিমার আদল ও পুজো পদ্ধতি রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। এই পুজোয় অসুরের গায়ের রঙ ঘন সবুজ,দুর্গাপ্রতিমার মাথার ঊপর গঙ্গা,বিষ্ণু এবং মহেশ্বরের অবস্থান। দেবী মূর্তির দুদিকে থাকে রাম ও লক্ষনের মুর্তি। তবে এবছর করোনা সংক্রমনের কারনে মূর্তি পূজার বদলে ঘটপুজোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্য অভিষেক রায় চৌধুরী বলেন,” বাড়িতে বয়স্ক ও শিশুরা রয়েছে। সবার কথা মাথায় রেখেই এবারে ঘট পুজো হচ্ছে। সেকারনে মনটা খুব খারাপ। প্রতিবছর জাঁকজমকভাবে পুজো হয়। এবারে সেটা হচ্ছে না।

পড়াশোনা বা জীবিকার কারনে রাজবাড়ীর সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু পুজোর সময় সবার বাড়িতে ফেরা চাই-ই। ফলে পুজোর চারটে দিন যেন আগের মতোই জমজমাট হয়ে ওঠে রাজবাড়ী। আলোর রোশনাই আর মানুষের কোলাহলে যেন কয়েকশো বছর পিছিয়ে যায় সময়,পৌঁছে যায় রাজ-রাজরাদের আমলে। প্রাচীনত্বের রহস্যময় পরিবেশে দশমীতে মেলা বসে রাজবাড়ী প্রাঙ্গনে। সমাগম হয় হাজার হাজার মানুষের। আদিবাসী নাচ, পৌরানিক যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়। তবে কোভিড আবহে এবারে এসব কিছুই বন্ধ রাখা হয়েছে। স্রেফ ঘটপুজোর মাধ্যমে মাতৃ আরাধনায় মাতবেন রাজপরিবারের সদস্যরা।