সমস্ত ক্লান্তি, মন খারাপ থেকে মুক্তির রাস্তা অঙ্কন –এমনটাই মনে করেন সঙ্ঘমিত্রা

শিল্পী পালিতঃ সৃজন কাজ মানুষের মনকে চাঙ্গা করে। কবিতা, গান, লেখালেখি, অঙ্কন এসব মানুষের মনকে বাড়তি অক্সিজেন দেয়। আজ ইতিবাচক ভাবনার ভাবনায় নিজের অঙ্কন নিয়ে লিখেছেন শিলিগুড়ি মধ্য শান্তিনগরের সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য–

নিজের আঁকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথমেই কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা বীণাপাণি শিল্পীদিকে কারণ আমাকে নিয়েও যে কভারেজ করা যেতে পারে সেটা কখনো ভাবিইনি,কারণ আমি কোনো অর্থেই শিল্পী নই বা আমাকে নিয়ে কোথাও কিছু বলার মত যোগ্যতাও আমার নেই ,দিদিকে অকপটে সেটা বলতেই উনি বুঝিয়ে বললেন যে আমি যা করছি তা অনেক গৃহবধূর অনুপ্রেরণা হতে পারে,তারাও কোনো সৃষ্টির মধ্যে নিজেদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে, যথার্থই বলেছেন উনি কারণ উনি নিজে একজন বড়ো শিল্পী তাই ওনার কাছে মানুষের সৃষ্টির পূর্ণবিকাশটাই তাৎপর্যপূর্ণ। আমার নিজের কথা মানে আঁকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথমেই বলি, আঁকার প্রতি ভালোবাসা আমার খুব ছোটো বয়স থেকে।আমার এক দাদা খুব সুন্দর আঁকতেন।আমি খুব ছোট থেকেই কাছ থেকে ওঁর আঁকা লক্ষ্য করতাম।শুধুমাত্র একটি ডট পেনের সাহায্যে কি অদ্ভুত সব ছবি তৈরি করে ফেলার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল ওর! আমিও আঁকতাম ,পারতাম না কিন্তু চেষ্টা করতাম। কোনোদিন শিখিনি কোথাও কিন্তু আঁকাটা অভ‍্যেসে পরিনত হয়ে গিয়েছিল। আমি মনের খুশীতেও আঁকতাম,আবার মন খারাপ হলেও আঁকতাম,পড়তে বসে পড়া বাদ দিয়ে একমনে খাতার পাতায় এঁকে চলতাম।তবে সেগুলো বেশিরভাগই আল্পনা,লতা পাতা, এসবই। প্রাইমারি স্কুলে আমার এক বান্ধবী খুব সুন্দর আঁকতো ওর মতো করে চেষ্টা করতাম। ও চাইতো আমরা একসাথে একই আঁকা আঁকি। এভাবেই আমার আঁকা।লক্ষী পুজোর সময় বাড়িতে সহ পাড়ার এবাড়ী ওবাড়ী থেকে ডাক পরত আল্পনা দিয়ে দেবার জন্যে। ব্যস এর বাইরে কখনো আঁকা নিয়ে ভাবিওনি আঁকিওনি। আসলে পড়াশুনো , রেজাল্ট, নাম্বার এর বাইরে কেউ তেমন করে আমার আঁকা নিয়ে ভাবেওনি,বলেও নি। মা খুব খুশি হতো আমার আঁকা দেখে এবং অনেকসময় প্রশংসাও করত আমার।বিয়ের পর আমার যেকোনো কিছুতেই বরের খুব উৎসাহ দেখতাম আঁকাটাও ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু সংসার বড়ো হতে থাকলে এসব সৃষ্টিশীল মননস্বত্তা কোথায় যেনো হারিয়ে যায়! আমিও সব ভুলতে বসেছিলাম। ঠিক এমন মুহূর্তে দেবদূতের মতো একজন মানুষ আমার জীবনে আসেন । কিভাবে যে উনি আমার সমস্ত সৃজনের সাথে মিশে গেলেন বুঝতেও পারিনি। ওনার অপূর্ব কবিতা লেখা নিয়ে বন্ধুত্ব ।

প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি, আমি কবিতা ভীষন ভালোবাসি,পড়তে এবং বলতে।সেই কবিতা যিনি এত সুন্দর লেখেন তার যে আঁকার হাত এত বলিষ্ঠ ভাবিনি! উনি ৬৪ বছর বয়সে এসে আঁকা শিখছেন, আরো পারদর্শী হয়ে উঠতে। ওনার এই আগ্রহ আমাকেও উৎসাহিত করত। উনি সেটা বুঝতে পেরেই ভীষণভাবে আমাকে আঁকার জগতে টেনে নিয়ে এলেন। নুতুন করে আমি আঁকাকে আবিষ্কার করলাম! আমার সমস্ত ক্লান্তি মনখারাপ থেকে রিলিফের একটা পথ দেখালেন। আমি কোনোদিন কল্পনাও করিনি আমি এরকম আঁকবো! সুদূর নয়ডাতে বসে উনি আমাকে একনিষ্ঠ ভাবে শিখিয়ে চলেছেন । অমিত দাস, এমন একজন মানুষ যাঁর কোনো ক্লান্তি নেই, কোনো চাহিদা নেই, কোনো প্রচারের নেশা নেই, সৃষ্টিতেই ওনার আনন্দ! আজ যেখানে সামান্য কিছু জ্ঞান নিয়েই মানুষ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সাধনে নিয়োজিত হয় সেখানে শুধুমাত্র আমার একটি সুন্দর স্কেচই ওনার গুরুদক্ষিণা! এভাবেই প্রতিমুহূর্তে উনি আমাকে উৎসাহিত করে চলেছেন । সাথে আমার হাসব্যান্ড, তাঁর সার্পোট না থাকলে আমি সংসার, সন্তান সব সামলে কোনোদিন আঁকতে পারতাম না।ভীষন খুশী হয় আমার আঁকা দেখে,বা কেউ আমার আঁকার প্রশংসা করলে। সাথে কিছু বন্ধুবান্ধব তাদের প্রশংসা, উৎসাহ আমাকে একটা তাগিদ অনুভব করায় নিজের মধ্যে। তবে নিজের সৃষ্টির মধ্যে নিজের একটা ভালোবাসা একাগ্রতা থাকলে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো সময়েই কিছু শুরু করা যায়! শ্রী অমিত দাসের কাছে আমি কৃতজ্ঞ উনি আমাকে এভাবে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন,আমিও চলছি। আগামীতে সাদা কালোর পেন্সিল স্কেচ এর জায়গায় হয়তো রঙিন কিছু ছবি জীবনটাকে আরো আকর্ষণীয়,আরো সুন্দর করে তুলবে।কারণ সৃষ্টিতেই তো সব আনন্দসম্ভার।

Sanghamitra Bhattacharjee
Madhya Shantinagar
Siliguri
Dist,,Jalpaiguri