নিজস্ব সংবাদদাতা,মালদা : নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনাকে জয় করে এখন সুস্থ। কিন্তু করোনা আক্রান্তদের প্রতি, তাদের পরিবারের প্রতি এখনও যে অনেকের অসহযোগিতা রয়েছে, কেউ আবার যে তাদের ঘৃনার চোখে দেখেন তা অজানা নয় তার। আর তাই করোনায় আক্রান্ত এক পরিবারের প্রতি প্রতিবেশীদের অসহয়োগিতার কথা জেনেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন এক যুবক ও তার সঙ্গীরা।
মালদহের রতুয়ার ভাদো এলাকার করোনা জয়ী ওই যুবকের নাম মহম্মদ সাহিদ আখতার। ইদের আগের সন্ধ্যায় ২৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মালদহের চাঁচল শহরে এসে করোনা আক্রান্ত এক পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন তারা। কয়েকদিন ধরে বাড়ির পাম্পসেট খারাপ হয়ে থাকায় পানীয় জলের কষ্টে ভুগছিল পরিবারটি। বাইরে তাদের জল নিতে দেওয়া হচ্ছিল না বলেও অভিযোগ। স্থানীয় প্রশাসন, পঞ্চায়েতের কর্তারা চেষ্টা করলেও কোনও মিস্ত্রি করোনা আক্রান্ত পরিবারটির বাড়িতে যেতে চাননি। কিন্তু সাহিদের উদ্যোগে তাদেরই দলের দুই সদস্য ঝুঁকি নিয়েও বাড়িতে ঢুকে ঠিক করে দিয়েছেন পাম্পসেটটি। পাশাপাশি দু সপ্তাহের খাবারের চাল, ডাল, পেয়াজ, আলু, ফল, আনাজ, সোয়াবিনও দিয়েছেন তারা।
চাঁচলে এর আগেও করোনা আক্রান্ত একটি পরিবারের ব্যবহারের জল বাইরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন প্রতিবেশীদের একাংশ। আর আমলাপাড়া এলাকার এই পরিবারটিকেও প্রতিবেশীরা সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ পরিবারটির। স্থানীয় একটি শপিং মলে কাজ করতেন গৃহকর্তার ছেলে। তারপর লালারস পরীক্ষায় তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরিবারটিকে প্রশাসনের তরফে খাবারও দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় পাম্পসেট খারাপ হওয়ার পর। পরিবারটির অভিযোগ, তাদের বাইরে জল নিতে দেওয়া হচ্ছে না। চেষ্টা করলেও কোনও মিস্ত্রি তাদের বাড়িতে যেতে চাননি। এরপরেই সঙ্গীদের নিয়ে ছুটে আসেন সাহিদ।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে কয়েকমাস ধরে মুমূর্ষ রোগীদের রক্তের যোগান দিয়ে চলেছেন সাহিদ। পাশাপাশি অরাজনৈতিক সংস্থা সাথী ফাউন্ডেশন নাম দিয়ে গরিব মানুষদের সাহায্য করে চলেছেন তিনি। তার সঙ্গে রয়েছেন বিপ্লব মজুমদার, শেখ আদি, সৌরভ কুমার ঘোষ, তালেক শেখ, অভীক মণ্ডল, মৃনাল মণ্ডলদের মতো অনেকেই। চাঁচলে করোনা আক্রান্তের বাড়ি গিয়ে পাম্পসেট ঠিক করে দেন দলেরই দুই সদস্য রাশেদুজ্জামান ও নুর ইসলাম। সম্প্রতি নিজে করোনায় আক্রান্ত হন। কিন্তু হার মানেননি তিনি। সাহিদ বলেন, ঈদের এই সময় করোনা আক্রান্ত পরিবারটির সমস্যার কথা ভেবে স্থির থাকতে পারিনি। তাই ছুটে যাই। আক্রান্ত বা তাদের পরিবার কোনও অন্যায় করেনি এটা ভেবে আক্রান্তদের সঙ্গে সহানুভূতির সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। এমন কোনও সমস্যায় পড়লে আমরা আবারও তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াব।