শিল্পী পালিত ঃ আজ আমাদের খবরের ঘন্টার আত্মকথা বিভাগে জয়া গুহ লিখেছেন তার নাট্য চর্চা নিয়ে। চলুন পড়ে নেওয়া যাক। আপনারা আরও বেশি বেশি করে লাইক, শেয়ার, কমেন্টের মাধ্যমে খবরের ঘন্টাকে এগিয়ে দিতে সহযোগিতা করুন —
দু’ধারে সবুজ চা বাগান, দূরে পাহাড় ঘেরা গাছ আর লতাগুল্ম। আদিবাসী মাদলের দ্রিম্ দ্রিম্ ছন্দে বেড়ে ওঠা আমার শৈশব। ভীষণ ভাবে মাদলের ছন্দে মেতে উঠত আমার মন। জলপাইগুড়ি জেলায় ছোট্ট জনবসতি বিন্নাগুড়িতে কেটেছে আমার শৈশব ও স্কুল জীবন। ছোটবেলা থেকেই নাচ,গান, নাটকে ব্যস্ত থাকতে দেখেছি বড়দের — সেখান থেকেই আমার হাতে খড়ি, খুব ছোট্ট বয়সে মঞ্চে প্রথম উঠেছিলাম। কবে ঠিক মনে পড়ে না — শুনেছি একটি নাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল আমার যাত্রা।
তারপর একে একে ছোটদের নাটকে অভিনয় শুরু — প্রথম নাটক করেছিলাম “দেবতার ভয় “। তখন সঠিক ভাবে বুলি ফোটোনি। অল্প বয়সে ‘পোষ্ট মাষ্টার’ নাটক করে আমি খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। এরপর একে একে শুরু হল— ‘ভালো মানুষ’, ‘নটীর পূজা’, ‘তুরপের তাস’, ‘ইতিহাস কাঁদে’, ‘আলিবাবা’ ইত্যাদি নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে আনন্দ পেয়েছিলাম। দর্শকদের মন জয় করা একজন অভিনেতা, অভিনেত্রীর দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারলে সত্যিই খুব আনন্দ হয়। বাড়িতে সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল। বাবা, মা, দাদার উৎসাহ ছিল প্রবল।
বানারহাট স্কুলে লেখা পড়া। সেখানে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। প্রতি বছর নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকের প্রতিযোগিতা হত। নাচের প্রথম পুরস্কারটি থাকতো আমার ঝুলিতে —তাছাড়া গান, নাটকেও প্রাইজ পেতাম। আমার খুব সৌভাগ্য আমি একজন খুব ভালো গুরুমা পেয়েছিলাম – শ্রীমতী লীনা দে। যিনি আমাকে যত্ন করে এই শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই (কাকিমা তোমাকে প্রণাম)।
অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়। পড়াশোনা আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। শিলিগুড়ি মহিলা কলেজ থেকে B.A complete করি। তারপর দীর্ঘদিন সংসার নিয়েই মেতেছিলাম। কিন্তু কোথায় যেন আমার মধ্যে এক শূন্যতা আমাকে তাড়া করে বেড়াত। শ্রদ্ধেয় কবি সমর চক্রবর্তীর স্নেহ ও সান্নিধ্য পেলাম। তাঁর উৎসাহে শিশুদের নিয়ে আবার শুরু হল আমার সাংস্কৃতিক চর্চা। সমরদা, কাবেরীদি খুব উৎসাহ দিতেন। এক সময় CCN এ ‘সিনেম্যানিয়া’ বলে একটা প্রোগ্রাম হতো, সেখানে সমরদার উৎসাহে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলাম সিনেমা সংক্রান্ত আলোচনায়।
স্বামী চাকরি সূত্রে বাইরে থাকতেন, মেয়ে পড়াশোনার জন্য hostel এ। আবার আমাকে হতাশা গ্রাস করতে লাগল। মেয়ে ভীষন ভালো বেসে নাচ করত। আমাকে খুব উৎসাহ যোগাত ‘আবার সাংস্কৃতিক জগতে ফিরে যাও, আবার নাটক কর মা’। অবশেষে আমার দিদি-জামাইবাবু — শ্রীমতী স্বাতী ব্যানার্জি, বিকাশ দেব আমাকে প্রথম নিয়ে গেলেন ‘দামামা’ নাট্য গোষ্ঠীতে সেখান থেকে আবার নতুন করে শুরু হল নাট্য চর্চা। পরিচালক পার্থ চৌধুরীর কাছ থেকে আবার নতুন ভাবে শুরু হল নাট্য শিক্ষা। বিভিন্ন মঞ্চে সুযোগ পেলাম আবার অভিনয় করার, তাঁর পরিচালনায়—‘লাঠি’, ‘ত্রিংশ শতাব্দী’, ‘বৃষ্টি বৃষ্টি’, ‘কাল মুকুর’, ‘ইজ্জত’ একাধিক বার মঞ্চস্থ করেছি বিভিন্ন জায়গায়। এই মূহুর্তে নতুন নাটকের মহড়া চলছে। অসাধারণ পরিচালক পার্থ চৌধুরী। অনেক কিছু নতুন করে এখনও শিখছি। এছাড়া স্বল্প দৈর্ঘের কিছু সিনেমাতেও অভিনয় করবার সুযোগ হয়েছে আমার। স্বামীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা ছাড়া এই পথ চলা কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না। অভিনয়ের সূত্রে শিল্পী পালিত (বীণাপাণি) তোমার সঙ্গে দেখা। দেবী বন্দনায় বীণাপাণিকে পেলাম এ আমার সৌভাগ্য।
জয়া গুহ, 84/2 নজরুল সরণি, আশ্রম পাড়া, শিলিগুড়ি।