বাপী ঘোষ ,শিলিগুড়িঃ বাংলা কথা সাহিত্যের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব তারাশঙ্করের বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৮৯৮ সালের ২৪ জুলাই তার জন্ম। আর তার জন্মদিনে তাকে নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা করলেন উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ডঃ গৌরমোহন রায়। তিনি জানালেন, তারাশঙ্করের বড় উপন্যাস থেকে ছোট উপন্যাসগুলো নিয়ে ভালো ভাবে কাজ হওয়া দরকার।
প্রয়াত স্বনামধন্য সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর বিশেষ গবেষণা করে ১৯৭৮ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন ডঃ গৌরমোহন রায়। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তারাশঙ্করের ওপর বিশেষ গবেষণা করেন গৌরমোহনবাবু। আর এই গবেষণা করার জন্য তাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তারাশঙ্করের টালা পার্কের বাড়িতে প্রতিদিন যেতে হয়েছে। সকালবেলা প্রয়াত তারাশঙ্করের বাড়িতে যাওয়া আর সন্ধ্যে পর্যন্ত সেখানে পড়ে থাকা। কোনোকোনো সময় অনেক রাত পর্যন্ত পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। বিশিষ্ট ওই সাহিত্যিকের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে তাকে তার স্ত্রী, পুত্র, পুত্র বধুদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। তারপর ৫০০ পৃষ্ঠার ওপর গবেষণা পত্র তিনি পেশ করেন। সেই হিসাবে তারাশঙ্করের ওপর এভাবে গবেষণা করার মানুষ খুব কমই আছেন। তার গবেষণার আগে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক তারাশঙ্করের ওপর মাত্র দুটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। একটি হরপ্রসাদ মিত্রের ,অপরটি ডঃ নিতাই বসুর। কিন্তু গবেষণা শেষ করার পর ডঃ গৌরমোহন রায়ের পরপর দুটি বই প্রকাশিত হয়। একটি ,তারাশঙ্করঃ জীবন ও সাধনা। অপরটি , তারাশঙ্কর সাহিত্য সমীক্ষা। একটি বইয়ে তিনি তারাশঙ্করকে লেখা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর চিঠি ছাড়া আরও অনেক তথ্য প্রমান মেলে ধরেছেন। তাসখণ্ড কনফারেন্স নিয়ে অনেক বর্ণনা আছে। গৌরমোহনবাবু দাবি করেন, তিনি তারাশঙ্করের ওপর গবেষণা করে যে দুটো বই লিখেছেন তা ভারতে কেও লেখেনি। গৌরমোহনবাবুর বয়স এখন ৮৬ বছর। এই বয়সেও তিনি তারাশঙ্করের ওপর আরও কাজ করতে চান। তিনি জানালেন, তারাশঙ্কর জীবনে ১৯ টি সরকারি পুরস্কার পেয়েছিলেন। পদ্মভূষণ থেকে আরও অনেক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। তিনি ছিলেন ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ। তিনি দেশকে ভালোবাসতেন। তার স্বদেশপ্রেম ছিল তুলনাহীন। সাধারন মানুষের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ছিল। আজকের জীবনে একটা নকল ভাব চলে এসেছে। অথচ তারাশঙ্করের মধ্যে আত্মপ্রদর্শনের মনোভাব ছিল না। তিনি ছিলেন সত্যান্বেষী। ছোট গল্পেও তার যেসব নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে সেটাও আজ ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা দরকার। অন্যদিকে তার ধাত্রী দেবতা, গন দেবতা,আরোগ্যনিকেতন নিয়ে আরও কাজ করতে চান গৌরমোহনবাবু।