নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ একসময় তিনি তার বাবা মায়ের সঙ্গে চা পাতা তুলতেন। তার বাবা সীমন কুজুর কদিন আগেও শিলিগুড়ি মহকুমার গয়াগঙ্গা চা বাগানে চা পাতা তোলার মতো শ্রমিকের কাজ করেছেন। আর তার প্রয়াত মা জুলিয়া বেকও চা পাতা তোলার কাজ করতেন। আর্থিক এই অনগ্রসরতা এবং প্রতিকূল নানান পরিবেশের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে ভরত নাট্যম নৃত্যে আজ এক অন্যরকম আলো উত্তরবঙ্গের সুচিতা কুজুর।
চা বাগানের পরিবেশে লড়াই চালিয়ে বড় হওয়া সুচিতা কুজুর আজ অধ্যাপিকা। বোলপুরের পূর্ণিদেবী চৌধুরী গার্লস কলেজের তিনি একজন মিউজিক শিক্ষিকা। সেখানে মিউজিক শিক্ষিকা হলেও তিনি ভুলে যাননি তার চা বাগানের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর কথা। তিনি চান, উত্তরবঙ্গের চা বাগানের আদিবাসী ছেলেমেয়েরা ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যে এগিয়ে যাক বেশি করে। তাই পালা করে তিনি এখন বোলপুর থেকে শিলিগুড়ি আসছেন। আর মাটিগাড়ার জেভিয়ার সঙ্গীতাঞ্জলিতে ভরত নাট্যম শিখিয়ে অন্য
সুচিতাদেবী শুধু একটি লড়াইয়ের নাম নয়, তিনি একটি দিশাও।২০১৬ সালে এক দুর্ঘটনায় তার একটি পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়ানকভাবে ছিঁড়ে যায় লিগামেন্ট। বেঙ্গালুরুতে অপারেশনও হয়। সাময়িকভাবে তার নৃত্য বন্ধ হয়ে যায়। তিনি অবসাদ যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন। কিন্তু মনে রাখেন অদম্য জেদ। ভরত নাট্যম তাকে ছাড়া চলবে না, ধীরে ধীরে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শমতো নৃত্যের অনুশীলন করতে থাকেন। সে নৃত্য তাকে দেশেবিদেশে সম্মান এনে দিতে থাকে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ততো বটেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স,কানাডা, স্যুইডেন সহ অন্য অনেক দেশে তিনি ভরত নাট্যমের ওপর অনুষ্ঠান করেছেন। সুচিতাদেবী বলেন, ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য আমরা ভুলতে বসেছি। নাচে যাদের বেশ উৎসাহ রয়েছে সেই ছেলেমেয়েরা অনায়াসে ভরত নাট্যম শিখতে পারে। ভবিষ্যৎ ভালোই রয়েছে।
বারানসির নব সাধনা কলা কেন্দ্র থেকে নৃত্যে স্নাতক হন সুচিতাদেবী। ভূপালের কলাপদ্ম ডান্স একাডেমি থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। পরে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি করেন। তার পি এইচ ডির বিষয়, আদিবাসীয়ো কি জীবন শৈলী আউর নৃত্য পরম্পরা।তার স্বামী ভূষণ অধিকারীও তাকে সবসময় উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। জেভিয়ার সঙ্গীতাঞ্জলির ফাদার কল্যান কিশোর তির্কী শুরু থেকে সুচিতাদেবীর নৃত্য প্রতিভা বুঝতে পেরে তাকে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। আর চা বাগানে পাতা তুললেও ছোট থেকে নৃত্যের প্রতি নেশা তাকে আজ এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ পৌষ মেলা কমিটি সুচিতাদেবীকে সংবর্ধনা দিয়ে ইতিমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে।