নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে আমেরিকানদের মধ্যে।তাই আবারও আমেরিকানদের তবলা শেখাতে জুন মাসের তেইশ তারিখে আমেরিকায় যাচ্ছেন উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট তবলা শিল্পী সুবীর অধিকারী। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আমেরিকার লস এঞ্জেলসে অনুষ্ঠান রয়েছে সুবীরবাবুর। সেখানকার একটি থিয়েটার হলে তবলা বাজানোর অনুষ্ঠান ছাড়াও একটি কর্মশালায় যোগ দিয়ে তিনি দেশে ফিরবেন। সেই কর্মশালাতে সুবীরবাবুর কাছে আমেরিকার নিবাসী কিছু মানুষের তবলা শেখার কথা রয়েছে। এর আগেও কয়েকবার আমেরিকায় গিয়েছেন সুবীরবাবু।
শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের তবলা শিল্পের জগতে একটি পরিচিত নাম সুবীর অধিকারী। শিলিগুড়ি হাকিমপাড়ায় তার বাড়ি। সারা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে তার ছাত্র-ছাত্রী ছড়িয়ে রয়েছে। ছোট থেকে তবলার নেশায় মেতে আছেন সুবীরবাবু। তবলা শিল্পে বিশেষ প্রতিভার জন্য তিনি বহু স্থানে পুরস্কৃত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তিনি তবলা বাজিয়েছেন। সম্প্রতি দিল্লি আকাশবাণীর সেন্ট্রাল অডিশন বোর্ড তাকে এ গ্রেড তবলা শিল্পী হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তবে এবার তার নিয়ে মোট চারবার তিনি আমেরিকা যাচ্ছেন। সেখানে একটি সংস্থার তবলা বিষয়ক ফ্যাকাল্টি হিসেবেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সুবীরবাবু বলেন, আমেরিকানদের মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। আমেরিকানরা অনেকেই তাদের সংস্কৃতি ছেড়ে ভারতীয় সেতার, ক্লাসিক্যাল ডান্স, ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত ও তবলা শিখতে চাইছেন। ২০০৪ সালে হলিউডের একটি মিউজিকে ফিউশন বাজানোর সুযোগ হয়েছিল সুবীরবাবুর। অনাবাসী ভারতীয় নৃত্য শিল্পী প্রাচী দীক্ষিতের নৃত্য প্রতিষ্ঠানেও নিয়মিত তবলা বাজিয়েছেন সুবীরবাবু। এবারও প্রাচী দেবীর ওখানে তিনি যাবেন।
শিলিগুড়ি ছাড়া উত্তরবঙ্গে অনেক উঠতি প্রতিভাবান ও আর্থিকভাবে অনগ্রসর ছেলেমেয়ে সুন্দর তবলা বাজায়।অথচ সুযোগের অভাবে তারা অনেকে হারিয়ে যায়। তাদেরকেও সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কাজে নেমেছেন সুবীরবাবু। শীঘ্রই তিনি চালু করতে চলেছেন তার পিতা প্রয়াত তবলা শিল্পী বেনু অধিকারীর নামে তবলার স্মৃতি পুরস্কার। ভালো এবং আর্থিকভাবে অনগ্রসর এরকম পাঁচ জনকে বাছাই করে তবলা উপহার দিতে চান সুবীরবাবু। তিনি বলেন, আর্থিকভাবে অনগ্রসর অনেককেই আমি তবলা শিখিয়ে চলেছি বিনে পয়সায়। সুবীরবাবুর মতে, অনেক অসুস্থ মানুষের জন্য থেরাপি হিসেবেও কাজ করে তবলা। বহুদিন আগে শিলিগুড়িতে একজন সংগীত অনুরাগী বয়স্ক ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী ছিলেন। তিনি তবলা শুনতে ভালবাসতেন। তাকে দিনের পর দিন আমি এক ঘন্টা করে তবলা বাজিয়ে শুনেছি এবং তা ওই ব্যক্তির কাছে ওষুধ হিসেবে কাজ করেছে। সেই ব্যক্তি তবলা শুনলে অনেকটাই চনমনে থাকতেন। যেদিন তবলা শুনতেন না সেদিন তিনি অসুস্থ বোধ করতেন। সুবীরবাবুর মতে, তবলা ছাড়া সংগীত ও নৃত্য চলতে পারে না। আজকাল বহু সংগীত এবং নৃত্য শিল্পী তার কাছে আসছেন তবলা শেখার জন্য। আর তারা অনেকেই তাদের সংগীত ও নৃত্যকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। তার প্রশ্ন, বিভিন্ন স্থানে নৃত্য ও সঙ্গীত প্রতিযোগিতা হলে তবলা বাজানোর প্রতিযোগিতা কেন হবে না?