নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ নদী ছাড়া এই জীবন অচল,এই সভ্যতা অচল। আমাদের সংস্কৃতিতে পঞ্চভূতের কথা বলা হয়েছে। এই পঞ্চভূতের অন্যতম প্রধান বিষয় হলো, জল বা পানি।জীবনের জন্য জীবন সৃষ্টিকারী অন্যতম মৌলিক উপাদান হল জল।আমাদের দেহের ৭২ শতাংশের বেশি হলো জল।এই শরীর পঞ্চভূতে একদিন মিশে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি, এই পঞ্চভূতের ৭২ শতাংশ জল ধরলে বাকি ১২ শতাংশ এই পৃথিবী, ৬ শতাংশ বায়ু বা বাতাস,৪ শতাংশ অগ্নি এবং বাকি অংশ আকাশ। আর আমাদের জলের উৎস হলো সমুদ্র বা নদী।পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল। তাই ভারতীয় সংস্কৃতিতে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। গঙ্গাকেতো হিন্দুরা দেবী হিসাবে পুজো করেন।কবি তথা দার্শনিক শংকরাচার্য গঙ্গার প্রতি ভক্তি নিবেদনস্বরুপ লিখেছেন শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম।তাঁর সেই স্তুতির একটি সংক্ষিপ্ত ভাব এইরকম, “দেবী গঙ্গা সুরেশ্বরী,ত্রিভুবনের ত্রান কত্রী, দেবাদিদেব শংকরের জটায় আবদ্ধ থেকে হয়েছেন শংকরমৌলিবিহারিনী।এবং তিনিই পবিত্র তরঙ্গবিশিষ্টা চিরপ্রবাহিনী স্রোতস্বিনী গঙ্গা। কথিত আছে ভগীরথ তাঁকে স্বর্গ থেকে এনেছেন বলে তাঁর আরেক নাম ভাগীরথী, আবার হিন্দু শাস্ত্রে বিশ্বাস করা হয় এই গঙ্গাই হরিপাদপদ্ম তরঙ্গিনী কারন তিনি শ্রীবিষ্ণুর চরন থেকে নির্গত হয়েছেন।তাই গঙ্গা যেমন হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী তেমনই অন্যান্য নদীও দেবতার ন্যায়। সেই সূত্রে অবশ্যই শ্রদ্ধার স্থানে রয়েছে শিলিগুড়ির মহানন্দা নদী। মহানন্দা শুধু শিলিগুড়ির লাইফ লাইন নয়, মহানন্দার জল বিশুদ্ধ করে তা পান করেন শিলিগুড়ির মানুষ। শিলিগুড়ির প্রতিমা বিসর্জন থেকে মৃত্যুর পরও মহানন্দা আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তাছাড়া জল ছাড়া কি মানুষ এক মুহুর্ত বাঁচতে পারে? কিন্তু আমাদের অশ্রদ্ধা, অবহেলা থেকে আজ প্রকৃতি বিপন্ন। প্রকৃতিতে গাছের যেমন অসামান্য গুরুত্ব রয়েছে তেমনই নদীগুলোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু আমাদের মূর্খতার জেরে আজ প্রকৃতি এবং নদীগুলো বিপন্ন।এই বিপন্নতা আগামীতে আমাদের সামনে আরও বিপদ ডেকে আনছে।শিলিগুড়িতে মহানন্দা বাঁচাও কমিটি বিশিষ্ট সমাজসেবী ও পরিবেশবিদ জ্যোৎস্না আগরওয়ালার নেতৃত্বে মহানন্দা বাঁচাতে বহু দিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও কিছু অসভ্য মানুষের হুঁশ ফিরছে না।রোজকার প্রাতঃকৃত্য সারা থেকে শুরু করে মহিষ স্নান করানো,নদীতে নোংরা বর্জ্য ফেলা কিছু মানুষের কুঅভ্যাসে দাড়িয়ে গিয়েছে। এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে লড়াই প্রচার শুরু করেছেন জ্যোৎস্নাদেবীরা।এবার মহানন্দার প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি বৃদ্ধি করতে জ্যোৎস্নাদেবীরা শুরু করেছেন মহানন্দা আরতি।প্রতি পূর্নিমার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি মহানন্দা নদীর ধারে মহানন্দা আরতি শুরু হয়েছে মহানন্দা বাঁচাও কমিটি এবং নমামি গঙ্গের যৌথ উদ্যোগে।নদী বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার নাম নমামি গঙ্গে। সেই নমামি গঙ্গের সঙ্গে যৌথ ভাবে মঙ্গলবার পূর্নিমা তিথিতে মহানন্দা আরতি ও পুজো হয়।প্রতি পূর্নিমা তিথিতে তাদের এই মহানন্দা আরতি কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জ্যোৎস্নাদেবী জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও পরিবেশপ্রেমী নিধুভূষন দাস ছাড়াও মহানন্দা বাঁচাও কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক নিধুভূষন দাস বলেন,মহানন্দা ছাড়াও অন্য সব নদীর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ভক্তি বৃদ্ধি করার সময় এসেছে। আর সেই ভক্তি যদি বৃদ্ধি না হয় তবে সামনে মানুষের সামনে আরও বিপদ অপেক্ষা করছে। এদিন মহানন্দা আরতি চলার সময়ই গুরুংবস্তির পাশ থেকে একদল মহিষ এসে মহানন্দায় অবগাহন করতে থাকে। সেইসব মহিষগুলোকে মহানন্দায় নামিয়ে স্নান করাতে দেখা যায় একদল অজ্ঞ ও অসভ্য মানুষকে।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —