নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ এবারে শিলিগুড়ি থানা চত্বরে ২৪ ঘন্টা চাইল্ড লাইন পরিষেবা তার সঙ্গে কাউন্সেলিং সেন্টার শুরু হতে চলেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনির তত্ত্বাবধানে চলবে চাইল্ড লাইন পরিষেবা। শিলিগুড়িকে শিশু বান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিভিন্ন কাজ শুরু করেছে সিনি। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারগুলোকে মুক্ত বাজার হিসেবে ঘোষনা করার কাজ শুরু হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু শিশু শ্রমিক। এই সমস্ত কর্মসূচির মাধ্যমে শিলিগুড়িকে শিশু বান্ধব শহর হিসেবে ঘোষণা করার পদক্ষেপ অনেকটাই এগিয়েছে। ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি জংশন স্টেশন চত্বর শিশুবান্ধব স্টেশন হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। শিলিগুড়ি থানাকেও শিশু আদর্শ থানা হিসেবে রূপায়িত করতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে সিনি।
বহু বছর ধরে শিশুদের অধিকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি নিয়ে কাজ করে চলেছেন সমাজসেবী শেখর সাহা। বর্তমানে তিনি সিনির উত্তরবঙ্গ শাখার ইউনিট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। তার প্রিয় শহর শিলিগুড়ি একদিন শিশু বান্ধব শহর হয়ে উঠবে,এ স্বপ্ন তিনি দেখছেন। তবে এই কাজের জন্য তিনি সমস্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহ প্রশাসনিক সাহায্য চাইছেন।
সিনি অর্থাৎ চাইল্ড ইন নিড ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে প্রখ্যাত শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সমীর চৌধুরির উদ্যোগে। মূলত শিশুদের সার্বিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঠাকুরপুকুরে এর প্রতিষ্ঠা হয়। পিছিয়ে পড়া শিশু,কিশোরকিশোরী ও মহিলাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা সুরক্ষার স্থায়ী উন্নয়নই হল সিনির অন্যতম লক্ষ্য। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য পুষ্টি দিয়ে কাজ শুরু হলেও ধীরে ধীরে শিক্ষা ও সুরক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সিনি তার পথ চলা শুরু করে। ঠাকুরপুকুর থেকে শুরু করে এখন তার ব্যাপ্তি পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, ছত্তিসগড় সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। পশ্চিমবঙ্গে তাদের মোট ছটি ইউনিট কাজ করছে। উত্তরবঙ্গের কথা চিন্তা করে ২০০২ সালে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এখান থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর যোগসূত্র তৈরি করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পের সহযোগিতায় শিলিগুড়ির বস্তি সহ ডুয়ার্সের চা বাগানের প্রান্তিক জায়গায় সিনি সহায়ক এর ভূমিকায় কাজ করে চলেছে। উত্তরবঙ্গ সহ উত্তর পূর্ব ভারত, নেপাল, ভুটানের বাণিজ্যিক করিডর হিসেবে চিহ্নিত শিলিগুড়ি। সেই সঙ্গে শিশু ও নারী পাচার, শিশুদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্যও শিলিগুড়ি করিডর ব্যবহার করা হয়।আর সিনি সেখানে শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণ করে। এরজন্য একদিকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বস্তি এলাকায় নিরন্তরভাবে শিশুদের স্কুলমুখী করা, অন্যদিকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। তরুণ স্বেচ্ছাসেবী শেখর সাহা জানাচ্ছেন, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন, শিলিগুড়ি জংশন বাস টার্মিনাস এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সজাগভাবে পাহারাদারের ভূমিকায় রয়েছে সিনি। শিশুদের উদ্ধার বিশেষ করে কন্যা শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয়ের
ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এই বহু মুখী প্রয়াসে গত তিন বছরে প্রায় ৫০০ জন বস্তির শিশুকে স্কুলমুখী করা হয়েছে। ১০০ শিশুকে নিয়ে শিশু দল গঠন করা হয়েছে, যারা নিজ নিজ এলাকায় সচেতনতার সঙ্গে কাজ করছে। আর এসবেরই ফল সীমা শা। সম্প্রতি স্কুল ছাত্রী সীমা রাজ্য বীরাঙ্গনা পুরস্কার পেয়েছে। নানান প্রশিক্ষণ, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করছে সিনি। অন্যদিকে চাইল্ড লাইন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে এনজেপি সহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় আড়াই হাজার শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।