নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ একদিন তিনি না খেয়ে থাকতে পারবেন কিন্তু একদিন তবলার রেওয়াজ না করে থাকতে পারবেন না। এটাই মুলকথা শিলিগুড়ির প্রখ্যাত তবলা শিল্পী সুবীর অধিকারীর। দিনরাত তিনি তবলার নেশায় মেতে আছেন। তবলা বাজাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি গিয়েছেন এমনকি আমেরিকাতেও গিয়েছেন তিন তিনবার। একবার আমেরিকায় গিয়েছেন ছয় মাসের জন্য, একবার তিন মাস, আরেকবার দেড় মাস। সেখানে গিয়ে শুধু তবলা বাজানো নয়, তবলার ওপর কর্মশালাও করে এসেছেন। এখন সারা উত্তরবঙ্গে তার ছাত্রছাত্রী ছড়িয়ে পড়েছে।
শিলিগুড়ি হাকিমপাড়ায় বাড়ি তবলা শিল্পী সুবীরবাবুর। এখন তার বয়স ৩৮ বছর। প্রথম তার তবলা শেখা ছেলেবেলায় বাবার কাছ থেকে। তার কথায়, জন্মের পরপরই বাড়িতে তবলার তাধিননা শুনতে শুনতে তার মন তবলায় আরও মজে যায়। সেই ছোটবেলার নেশা আজও ছাড়তে পারেননি। তবলার সোলোতে অনবরত ৪ ঘন্টা ধরে অনুষ্ঠান করার রেকর্ড রয়েছে তার। অনবরত ৫ থেকে ৬ ঘন্টা তিনি তবলা বাজাতে পারে। প্রতিদিনই রেওয়াজ করেন ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। তার কথায়, তবলা আমার কাছে খাদ্যের মতো। একদিন খাবার না খেয়ে থাকতে পারবো। কিন্তু একদিন তবলার আওয়াজ না করে থাকতে পারবো না। তবলা বাজানোর জন্য তার অনেক পুরস্কার রয়েছে। ৯৭ সালে আকাশবাণী আয়োজিত সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তাছাড়া গোটা বাংলাতে তবলা বাজানো প্রতিযোগিতায় তার প্রথম স্থান অধিকার করার শংসাপত্র রয়েছে। তিনি বলেন, আধুনিক মেশিন এলেও হাতের জাদুতে তবলার জনপ্রিয়তা কমেনি। বরং নতুনদের কাছে তবলার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এমনকি মেয়েরাও তবলা শিখতে আসছে। তার কাছে এখন ছয় বছর বয়সের মেয়ে থেকে শুরু করে ৪৩ বছরের মেয়েও তবলা শিখছে। সপ্তাহের সোম, মঙ্গল, বুধ, শুক্র, শনি তার বাড়িতে তবলার ক্লাস হয়। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে ছেলেমেয়েরা আসছে তবলা শিখতে। সুবীরবাবু বলেন, ভারতীয় ধ্রুপদীতে তবলার বিরাট গুরুত্ব। সেই গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়াস চলছে। আর নৃত্য যেমন কত্থকও তবলা ছাড়া চলতে পারে না। আর নিয়মিত তবলা চর্চায় শরীর ও মন ভালো থাকে। তবলার বোল মনের অনেক সমস্যা দূর করতে পারে। তার তবলা বাজানোর হাতের জাদুতে ছাত্র-ছাত্রীরাও নেচে উঠে। কথক নৃত্য শিল্পীদের অনুষ্ঠানে দীর্ঘসময় ধরে অনবরত তবলায় হাত নেড়ে তিনি বহু প্রশংসা কুড়িয়েছেন।