নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ মানিক একসময় এনজিপি স্টেশনের প্লাটফর্মে বসে গাঁজায় দম দিতো।কোনো কাজ ছিল না তার। একসময় ও ছিল নেশাগ্রস্ত প্ল্যাটফর্ম শিশু। আজ ও একজন চিত্রশিল্পী। মুকেশও তাই। এভাবে আরো কয়েকজন প্ল্যাটফর্ম শিশু চিত্রশিল্পী হিসাবে নিজেদের নাম প্রতিষ্ঠা করতে মাঠে নেমেছে। আর এদের নেপথ্যে রয়েছেন ৩৫ বছরের যুবক অভিজিৎ দাস। নিজে ছবি আঁকেন অভিজিৎ। শুধু নিজেই আঁকেন না, পিছিয়ে পড়া প্ল্যাটফর্ম শিশুদের ছবি আঁকা শিখিয়ে চেষ্টা করছেন এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরির।
নারী ও শিশু পাচারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে লড়ে যাচ্ছেন অভিজিৎ। ওর বাড়ি শিলিগুড়ি ঘোঘোমালিতে। ছবি আঁকা ওর নেশা ও পেশা। সম্প্রতি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ছবি এঁকেছেন অভিজিৎ। তার পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ এবং আরো অনেক ছবি। কোথাও ফুটিয়ে তুলেছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। কোথাও পর্যটকদের আকর্ষণ করতে রংতুলিতে ফুটিয়েছেন টয়ট্রেন। ভারতের জাতীয় পতাকা অথবা বিভিন্ন রাজ্যের সংস্কৃতিও তার রংতুলিতে ফুটে উঠেছে। এনজিপিতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা নেমে অভিজিতের সব ছবি দেখে তারিফ করছেন। এভাবে শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনেও অনেক ছবি এঁকেছেন অভিজিৎ। সদ্যসমাপ্ত শিলিগুড়ি ম্যারাথনের শ্লোগান লেখা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তৃতীয় পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছেন এই তরুন। আর ছবি আঁকা থেকে যা রোজগার হয় তার সামান্য অংশ দিয়ে প্ল্যাটফর্ম শিশুদের পাশে দাঁড়ান তিনি। অনেক শিশুই তার কাছে ছবি আঁকা শিখে আজ চিত্রশিল্পীতে পরিণত। এ এক অন্যরকম সামাজিক দায়বদ্ধতা। কদিন আগে কেরালার বন্যা দুর্গতদের কাছে গিয়েও অভিজিৎ মানবিক ও সামাজিক কাজের নজির রেখে এসেছেন। এবারে শিলিগুড়ি কমার্স কলেজের সরস্বতী পুজোর ছবি ও বিভিন্ন ডিজাইন করে দিয়েছেন অভিজিৎ। অভিজিৎ বলেন, ছবি আঁকা তার নেশা ও পেশা। ছবি আঁকা থেকে তিনি যেমন রোজগার করেন তেমনি ছবি আঁকার পরিবেশ ছড়িয়ে তিনি প্ল্যাটফর্ম শিশুদের মধ্যে অন্য নেশা ধরিয়ে দিতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তার এই প্রয়াস এর প্রশংসা করেন রেল আধিকারিকরাও। তারাও অভিজিৎ এর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।