লকডাউনের জেরে হারিয়েছে কাজ, হাটে হাটে শালুক বিক্রি করে চলছে অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধার পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা,৩০ সেপ্টেম্বর: লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে চরম সংকটে পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলি। শুরু হয়েছে অভাব-অনটন। আরও খারাপ অবস্থা ষাটোর্ধ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। অগত্যা খাল-বিল থেকে শালুক তুলে হাটে হাটে বিক্রি করে চলছে সংসার। প্রতিদিন সকাল হতেই দল বেঁধে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বাস ধরে ছুটে যাচ্ছেন ওল্ড মালদা ও মানিকচক এলাকার খাল-বিল পুকুরে। সন্ধ্যার সময় ৪-৫ কেজি শালুক তুলে ফিরছেন বাড়ি। সেদ্ধ করে হাটে হাটে বিক্রি করে যা অর্থ উপার্জন হচ্ছে তা দিয়েই চলছে সংসার।

মালদা জেলার চাঁচল-১ নম্বর ব্লকের চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের পাহাড়পুর গিলাবাড়ি ও ওলিহন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাস্তি পাড়া এলাকার একাংশের জীবন চলছে শালুক বিক্রি করেই। লকডাউনের জেরে কাজ প্রায় নেই বললেই চলে। সঞ্চিত অর্থও শেষ হয়ে পড়েছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে ও সংসার চালাতে তাই বাধ্য হয়েই এই পেশা গ্রহণ করেছেন তারা। ভাঙাচোরা ঘরেই কাটছে তাদের জীবন। সরকারি সাহায্যের আশায় দিন গুনছে তারা।

মাস্তি পাড়া এলাকার ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধা সাদু দাস জানান, তাদের এক ছেলে, এক মেয়ে এবং স্বামী-স্ত্রী সহ মোট চারজনের পরিবার। একটিমাত্র ভাঙাচোরা ঘরেই কাটছে তাদের জীবন। বাস্তু ভিটে ছাড়া নেই তাদের কোনো জমি। অন্যের জমিতে ধান কেটে, কখনো আবার দিনমজুরি করে বা পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। তাও বেশীরভাগ সময়েই মেলে না কাজ। তাই অগত্যা শালুক বিক্রি করেই সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

অপরদিকে চাঁচল পাহাড়পুর গিলাবাড়ি এলাকার বয়স সত্তরের এক বৃদ্ধা ময়া ঋষি অশ্রু-সজল চোখে জানান, তার তিন ছেলে দুই মেয়ে। সকলেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলেরা বিয়ে করে বউ-বাচ্চাকে নিয়ে আলাদা সংসার করছে। স্বামী খোলাই ঋষির বয়স ৮০ ছুই ছুই। বয়সের ভারে কাজ করতে পারেন না। অন্যদিকে, এই লকডাউনে বেহাল হয়েছে সংসারের হাল। তাই সংসারের হাল ফেরাতে চাঁচল থেকে ওল্ড মালদা ও মানিকচক এলাকার খাল-বিল পুকুর থেকে শালুক তুলে এনে চাঁচল, তুলসীহাটা ও সামসী হাটে বিক্রি করে চলছে সংসার।