একবার বুড়ির ছদ্মবেশে নাড়াজোল রাজপরিবারের কাছে অর্থ সাহায্য চাইতে এসেছিলেন শ্রীঅরবিন্দ

  • বাপি ঘোষ ঃ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি ঘিরে গোটা দেশ জুড়েই বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে জন্মসার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে শ্রীঅরবিন্দকেও স্মরন করা হচ্ছে। আর এ প্রসঙ্গেই চলে আসছে মেদিনীপুরের নাড়াজোল রাজপরিবারের কথা।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিপ্লব আন্দোলনে নাড়াজোল রাজপরিবারের ভূমিকা অসামান্য। নাড়াজোল রাজবাড়ি মেদিনীপুর জেলায়। তবে সেই রাজবাড়িতে কেউ থাকেন না।স্কুল কলেজের জন্য দানধ্যান করে দেওয়া হয়েছে। এই রাজ পরিবারেরই বহু নিদর্শনের মধ্যে একটি নিদর্শন হলো কলকাতা পি জি হাসপাতালের পিছনে দেবেন্দ্রলাল খান রোড।ওই রাস্তারই সাত নম্বর বাড়ি হলো ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যমন্ডিত নাড়াজোল হাউস।সেই নাড়াজোল রাজপরিবারের রানি অঞ্জলি খানের পুতি দেবরাজ ঘোষ তাঁদের নাড়াজোল রাজপরিবারের অসামান্য ভূমিকার কথা মেলে ধরেছেন খবরের ঘন্টার কাছে।বিশ্বরুপ মুখোপাধ্যায় লিখিত অস্তমিত রাজমহিমা বইতে উল্লেখ করা আছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিপ্লব আন্দোলনে রাজ পরিবারের অসামান্য ভূমিকার কথা।
    ঐতিহাসিক নাড়াজোল রাজপরিবারের রানি অঞ্জলি খানের পুতি দেবরাজ এবং অস্তমিত রাজমহিমা বই থেকে জানা যাচ্ছে, ” রাজা নরেন্দ্রলাল খান সরাসরি স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় বাঙালি সমাজ চমকে গিয়েছিল। অরবিন্দ ঘোষ,হেম কানুনগো তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। মেদিনীপুরে বোমার মামলায় নরেন্দ্রলাল গ্রেপ্তার হন।কারাবরনও করেন।শহিদ ক্ষুদিরামের বাবা ছিলেন নাড়াজোলের তহশীলদার।ক্ষুদিরামের পরিবারকে বহুভাবে সাহায্য করেছেন নরেন্দ্রলাল।— দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তাঁকে প্রথম প্রাদেশিক কাউন্সিলে নির্বাচিত করে পাঠিয়েছিলেন।তাঁর ছেলে দেবেন্দ্রলাল খান ছিলেন বাবার মতই।তিনি রাজা উপাধিও নেননি।দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও নেতাজির পরিবারের সঙ্গে তাঁর নিবিড় ঘনিষ্ঠতা ছিল। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে তিনি ব্ল্যাংক চেক লিখে দিতেন,যখনই তাঁদের কোন টাকার দরকার হত। সুভাসচন্দ্র যখন চিকিৎসার জন্য ভিয়েনায় গেলেন তখনও তিনি প্রচুর সাহায্য করেছিলেন। ”
    অস্তমিত রাজমহিমা জানাচ্ছে, “শ্রীঅরবিন্দের মামার বাড়ি ছিলো মেদিনীপুরে।সেই সূত্রেই রাজা নরেন্দ্রলাল খানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। কলকাতায় বৌবাজারে রাজা নরেন্দ্রলাল খানের বাড়ি ছিলো। তিনি যখন কলকাতার বাড়িতে থাকতেন তখন শ্রীঅরবিন্দ তাঁর কাছে আসতেন অর্থ সাহায্যের জন্য। শ্রীঅরবিন্দ একবার বুড়ির ছদ্মবেশে এসেছিলেন, তখন রাজা নরেন্দ্রলাল খান তাঁর নাতি অমরেন্দ্রলাল খানের হাত দিয়ে কাপড়ের পুঁটলি বেঁধে তারমধ্যে টাকা দিয়ে পাঠিয়েছিলেন শ্রীঅরবিন্দের জন্য। ”
    ⭕এই নাড়াজোল রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা উদয় নারায়ন ঘোষ।পঞ্চম পুরুষ কার্তিক রাম “রায়” উপাধি পান।ওই সময় থেকেই রায় হিসাবে পদবি ব্যবহৃত হতে থাকে। অষ্টম পুরুষ শ্রীবলবন্তকে “খান” উপাধি দিয়েছিলেন তৎকালীন বাংলার নবাব নাজিম।সেই থেকেই এই বংশে খান উপাধি চলে আসছে।নবাব মুর্শিদকুলী খাঁয়ের আমলে চুণীলাল রায় রাজা উপাধি পেয়েছিলেন।
    ⭕রাজা চুণীলাল খানের পুত্র ছিলেন রাজা অযোধ্যালাল খান।তারই প্রপৌত্র রাজা নরেন্দ্রলাল খান।নরেন্দ্রলালের দুই পুত্র ছিলো, দেবেন্দ্রলাল ও বিজয়কৃষ্ণ।দেবেন্দ্রলালের পুত্র ছিলেন অমরেন্দ্রলাল খান।আর অমরেন্দ্রলাল খানেরই স্ত্রী হলেন অঞ্জলি খান অর্থাৎ দেবরাজ ঘোষের বড়মা।প্রয়াত রানি অঞ্জলি খানের পুতি হলেন দেবরাজ।অঞ্জলি খানের কন্যা হলেন রাজ্যশ্রী দেবী, আর রাজ্যশ্রীদেবীর পুত্র হলেন রাজদীপ ঘোষ এবং রাজদীপবাবুর স্ত্রী হলেন কাবেরি ঘোষ।রাজদীপবাবুর দুই পুত্র দেবরাজ ও রনদীপ। এখন নাড়াজোল রাজপরিবারের সেই সব সম্পত্তি দেখশোনা করেন দেবরাজের বাবা রাজদীপবাবু।শিলিগুড়িতে শিক্ষকতার সূত্রে এখন বসবাস করেন প্রতিভাবান দেবরাজ।দেবরাজ জানালেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর এবং শ্রীঅরবিন্দের ১৫০ বছর পূর্তিতে তিনি কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। তিনি চান ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার ফাঁকে দেশের মনিষীদের স্মরন করুক। শ্রীঅরবিন্দের যোগ শক্তি ও বিজ্ঞানের সঙ্গে মেলবন্ধনের যুক্তিও মেলে ধরেন দেবরাজ।