নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার একটি ঐতিহাসিক স্থান হল গোসানিমারি। কামতা রাজ্যের রাজবাড়ী এই গোসানিমারি। বর্তমানে তা রাজপাট নামে পরিচিত। এই গোসানিমারিতেই অবস্থিত প্রাচীন কামতেশ্বরি মন্দির যা গোসানীদেবীর মন্দির নামে পরিচিত। পুরনো দিনের লোকেরা বিশ্বাস করেন বা তাদের মুখে জনশ্রুতি আছে যে মা কামতেশ্বরীর আদেশে বিশ্বকর্মা এক রাত্রিতে মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। আবার নতুনদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন যে ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোচবিহারের মহারাজা প্রাননারায়ন এই মন্দিরটি তৈরি করেন।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তরফে জানানো হয়েছে, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী গোসানিমারির বর্তমান রাজপাট ঢিপিটি হল কামতাপুরের এর মূল দুর্গ। কামতাপুর ছিল এই অঞ্চলে পঞ্চদশ শতকের কামতা রাজ্যের রাজধানী যেখানে খেন বংশীয় নৃপতিরা রাজত্ব করতেন। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের দুবর্ষব্যাপী উৎখনন ও অনুসন্ধানে এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে বিশাল ইটের প্রাচীর, পাতকুয়া, প্রস্তর নির্মিত সৌধের ধ্বংসাবশেষ, দক্ষিণ দিকে ইটের তৈরি সমান্তরাল দুটি দেওয়াল, একটি পুষ্করনী, প্রলম্বিত দেওয়ালের ভিত ইত্যাদি। এগুলির নির্মাণকাল আনুমানিক নবম-দশম থেকে অষ্টাদশ ঊনবিংশ শতক। উৎখনন থেকে প্রাপ্ত উল্লেখ্য প্রত্ন বস্তুগুলি হল পোড়ামাটির দেবদেবী ও জীবজন্তুর মূর্তি, ফলক, সুলতানি আমলের রৌপ্যমুদ্রা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রৌপ্য ও তাম্রমুদ্রা, লৌহ নির্মিত জিনিসপত্র ইত্যাদি। এছাড়াও অসংখ্য ভগ্ন প্রস্তর ভাস্কর্য শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে, যাদের গঠন প্রকৃতি পাল সেন যুগের ভাস্কর শৈলীর দ্বারা প্রভাবিত বলে অনুমান করা হয়।
সেখানে রয়েছে একটি বহু পুরনো পুকুর। স্থানীয় লোকজনের মুখে কথিত রয়েছে যে পুকুরটি কামতেশ্বর মহারাজের পদ্ম পুকুর। কারো বাড়িতে শুভ বিবাহ বা অনুষ্ঠানের জন্য বাসনপত্রের প্রয়োজন হলে ওই পুকুরে নাকি মানত করা হতো। আর মানত করার পরদিন নাকি পুকুরে বাসনপত্র ভেসে উঠতো। কিন্তু কিছু মানুষের অতিরিক্ত লোভের ফলে সেই পুকুর থেকে বাসনপত্র ভেসে ওঠার প্রাচীন রহস্যজনক ঘটনা বিলুপ্ত হয়ে যায়। পুরাতত্ত্ব বিভাগ খনন করে সেখানে অনেক দেবদেবীর মূর্তি এবং বাসনপত্র পেয়েছে। ঐতিহাসিক এই গোসানিমারি ঘিরে আজও অনেক রহস্য উদঘাটিত হচ্ছে। এই স্থান ঘিরে বহু গল্প, বহু কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। শিলিগুড়ি শিব মন্দিরের অটোচালক ও কবি গনেশ বিশ্বাস গোসানিমারি বেড়াতে গিয়ে কিছু ছবি মেলে ধরেছেন খবরের ঘন্টার দর্শকদের জন্য