শিলিগুড়ির বহু ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে, ১০৬ বছর বয়স্ক কবিলাল বর্মন শোনাচ্ছেন পরাধীন শিলিগুড়ির কথা

বাপি ঘোষ ঃ শিলিগুড়ি বিধান মার্কেট বলে আজ আমরা যে জায়গাকে চিনি পরাধীন ভারতে সেই স্থান ছিল মানুষের মলমূত্র ত্যাগের জায়গা। শিলিগুড়ি হাকিমপাড়ায় থাকতেন এক বিচারক বা হাকিম। কাঠের প্লাঙ্কিং করা তিন তলা খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরে থাকতেন এক হাকিম। সেই থেকে নাম হাকিমপাড়া। আবার শিলিগুড়ি ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া একটিয়াশালে ছিল একটি শাল গাছ। সেই গাছের নিচে খড়ের ছাউনি দেওয়া একটি ঘরেই তখন ছিল একটিয়াশাল স্কুল। আজ আমরা শিলিগুড়ি বাঘাযতীন পার্ক বলে যে স্থানকে জানি সেখানে একসময় মাছ ধরা হোত। পরাধীন ভারতে শিলিগুড়ির ইতিহাস নিয়ে এরকম অজানা অনেক তথ্য খবরের ঘন্টার কাছে মেলে ধরলেন ১০৬ বছর বয়স্ক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব কবিলাল বর্মন। শিলিগুড়ি সেভক রোড লাগোয়া বর্মন পাড়ায় তাঁর বাড়ি।

আধার কার্ড অনুযায়ী কবিলাল বর্মনের বয়স ১০৪ বছর। কিন্তু তাঁর দাবি, তাঁর বয়স ১০৬ বছর। কবিলাল বর্মনের বাবা প্রয়াত পল্টন সিং বর্মন ছিলো একজন জোতদার। প্রচুর জমি ছিল তাদের। অনেক জমি বেহাত হয়ে গিয়েছে। বাবার কাছ থেকে জমিজমা সংগ্রহের কাজ শিখেছিলেন একসময়ের তরুন কৃষক-জোতদার কবিলাল। নকশালবাড়িতে অনেক জমিও সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু নকশালবাড়ি আন্দোলনের সময় তাদের অনেক জমি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। শিলিগুড়িতে দাদাভাই কলোনি তৈরি হয়েছে কবিলাল বর্মনদের দান করা জমিতেই। কবিলাল বর্মন বলেন, তাদের দান করা জমিতেই তাঁর বাবা, ঠাকুরদা এবং তাঁর নামে একটি প্রাথমিক, একটি ছেলেদের এবং একটি মেয়েদের স্কুল গড়ে উঠেছে।

কবিলাল বর্মন জানিয়েছেন, পুরনো শিলিগুড়িতে বিভিন্ন কাঠের সেতুর নিচে দিনের বেলায় শিয়াল লুকিয়ে থাকতো আর রাত হলেই শহরে শিয়াল টহল দিতো। তখন শিলিগুড়ি বলতে ধু ধু মাঠ, কৃষি জমি। মহানন্দা নদীর নাম গুলমা নদী হিসাবে পরিচিত ছিলো । এখন কংক্রিটের জঙ্গল বিস্তৃত হতে থাকায় তাদের পুরনো সব জমি হারিয়ে যেতে বসেছে। শিলিগুড়ির বহু প্রাচীন ইতিহাস হারিয়ে গিয়েছে, এখনও বহু ইতিহাস হারিয়ে যেতে বসেছে। কারও কোনও উদ্যোগ নেই সংরক্ষণের। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাস ঘাঁটতে বসে যে বর্তমান মানুষগুলোকেই দায়ী করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কবিলাল বর্মনের বিষয়ে আরও বিশদভাবে জানতে হলে Khabarer Ghanta Facebook page এ দেখুন।