মাটির কাজেই স্বনির্ভরতার রাস্তায় মাটিগাড়ার মাটি শিল্পীরা

শিল্পী পালিতঃ মাটির কাজেই স্বনির্ভরতার রাস্তায় মাটিগাড়ার মাটি শিল্পীরা। পড়ুন নিচের লেখায়—

আমি একজন মৃৎশিল্পী। আমার নাম গোপাল পাল। বর্তমান বাংলাদেশের পাবনায় আমাদের বাড়ি ছিল। একাত্তরের দাঙ্গায় বাবাকে গুলি করে মারে পাঠান সৈন্যরা। বাবাকে হারিয়ে মা, দাদা, বোন, স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে শিলিগুড়ি সংলগ্ন মাটিগাড়া গভর্ণমেন্ট কলোনীতে বসবাস শুরু করি। আমার বাবার নাম ঁযোগেন্রনাথ পাল , ঁমায়ের নাম বাসন্তী পাল। আমরা বংশ পরম্পরায় মাটির কাজ করে আসছি । এখানে এসেও চাক বসিয়ে নিয়ে মাটির কাজ শুরু করি বাড়িতেই। এখন অবশ্য আমরা মেশিনেই মাটির জিনিষ তৈরী করি।ভাটির উনুন ও বাড়িতেই বসিয়েছি। আমার স্ত্রী পবিত্রা পাল ছোটবেলা থেকেই মাটির কাজ করে এসেছেন। তিনিও খুব পারদর্শীতার সাথে কাজ করেন। আমাদের একটি মেয়ে । বিয়ে হয়ে গেছে। আমার মেয়ে কাজ শেখেনি। দাদা , বৌদি দুজনেই গত হয়েছেন। তাদের চার ছেলে । ওদের তিন ভাই অন্যান্য কাজে ব্যস্ত। দাদার এক ছেলে পরিমলকে কাজ শিখিয়েছি। ও এখন নিজেই ব্যবসা করে। এই কাজে নিষ্ঠা ও খাটনির খুবই প্রয়োজন।

আমাদের এই শিল্পের জন্য কাঁচামাল হিসেবে চাই ভাল মাটি। এই মাটি আসে মালদা, কালাগছ থেকে। ট্রাক বোঝাই মাটি বাড়ীতে দিয়ে যায়। আমরা বড় বড় জিনিষ তৈরী করি। মাটীর হাঁড়ি ,কলসী, গবাদি পশুর খাদ্যের বড় গামলা, বড় বড় গাছের পট, টব, বড় স্ট্যাণ্ড ,বড় বড় ফুলদানি,ইত্যাদি। বাসন্তী দেবী ঘোড়া ও বানান। ছোটবেলায় তিনি পুতুল , হাঁড়ি ,কড়াই, কলসী, খেলনা কূয়োর রিং সবই বানাতেন। এখন চাহিদা মত জিনিষ তৈরী করতে হয়।কেউ কোন ডিজাইন দিলে সেইমত বানিয়েও দিতে পারেন। আমার সব কাজে তিনি সহযোগিতা করেন। আমি আসামের ডিব্রুগড়, গৌহাট তে গিয়ে কাজ করেছি,শিলং, ডিমাপুরেও কাজ করেছি ,কাজ শিখিয়ছি। তবে আজকাল আর বাইরে যাই না। তখন বাসন্তী দেবী একলাই সব সামলেছেন। মাটি কেনা, জিনিষ তৈরী করা, বিক্রি করা সংসার সামলানো সব কিছু একা হাতে করেছেন।

চৈত্র সংক্রান্তিতে ব্রহ্মা ও বিশ্বকর্মার পূজো করে একমাস বন্ধ থাকে মাটির কাজ , ভাটি পোড়ানো। বৈশাখের সংক্রান্তিতে আবার ব্রহ্মা ও বিশ্বকর্মার পূজো করে কাজ শুরু হয়। মেলায় বিক্রির জন্য ক্রেতারা জিনিষ কিনে নিয়ে যায়। আমাদের মাটির জিনিষ কলকাতা মেলায়, শিলিগুড়ি মেলায় তো নেয়ই অন্য জায়গার মেলার জন্যও ক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে মাটির জিনিষ কিনে নিয়ে যায় বিক্রি করার জন্য। মহারাষ্ট্রের নানান জায়গা থেকে যেমন নাসিক, মুম্বাই, ঔরঙ্গাবাদ আরও কিছু জায়গা আর গোয়া থেকেও সরাসরি বাড়ি থেকেই জিনিষ ট্রাকে করে কিনে নিয়ে যায়। কাজের মধ্যে খুব আনন্দ পাই। মাটিকে ভালবেসে মাটির জিনিষ গড়ে প্রণাম জানাই পরমেশ্বরের কাছে কবির ভাষায়— “ধূলির ধনকে করো স্বর্গীয়!”( সৌজন্যে কবিতা বনিক)