শিক্ষকতার পাশাপাশি সঙ্গীত ও লেখালেখি নিয়ে বেশ আছেন নকশালবাড়ির শুভজিৎ

শিল্পী পালিত ঃঃ আজ আত্মকথা বিভাগে নকশালবাড়ির স্কুল শিক্ষক তথা সঙ্গীত শিল্পী শুভজিৎ বোসের কথা মেলে ধরা হচ্ছে —

সঙ্গীত আমার আত্মার সাথে জড়িয়ে আছে ,তেমনই জড়িয়ে আছে লেখালেখি, আমার চিন্তন মননের সাথে।সঙ্গীত ও সাহিত্য চর্চা জীবনে বেঁচে থাকার অঙ্গনে আমাকে অনেকখানি আলো জুগিয়েছে।লেখালেখি আমার কাছে সাধনা,সে সাধনারই ফসল আমি রোপন করে চলেছি বইয়ের পাতার সাদা পৃষ্ঠায়।আমার সাহিত্য সাধনার প্রথম পথ চলা কবিতার হাত ধরে,তারপর ধীরে ধীরে প্রবেশ করা ছোটগল্প,গদ্য,ফিচার,প্রতিবেদন,সাংস্কৃতিক সংবাদে।আমি লিখে চলেছি দেশ হতে বিদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় শুধুমাত্র নিজের আত্মতুষ্টির উদ্দেশ্যে।আমার লেখা বেরিয়েছে আজ পর্যন্ত অসংখ্য পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে।এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি যৌথ সংকলনে আমার ছোটগল্প,অণুগল্প,কবিতা,গদ্য প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে।আমার লেখালেখির আগ্রহ জন্মেছিল আমার পিতা স্বর্গীয় ভূপেন্দ্র নাথ বোসের অনুপ্রেরনায়,তার অসম্ভব কলমের জোর ছিল,তা শুধু গীত রচনা ও কবিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না,তার কলম চলত বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কষ্ট যন্ত্রনাতেও।উনি প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন,ইংরেজীতে বাবার ছিল অগাধ পান্ডিত্য।বাবা নিজেও সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন।আমার মা সন্ধ্যা বোস একজন গৃহবধূ,তবে এক সময় খুবই ভালো গান গাইতেন,বহু অনুষ্ঠানও করেছেন বিভিন্ন মঞ্চে,ভাই অভিজিৎ বোস শিক্ষকতা করে এবং ও একজন তবলা ও গীটার বাদক,একটি মিউজিকের স্কুল চালায়।পুত্র অরিত্র বোস গীটার-তবলা বাদ্যশিক্ষা ও অঙ্কন শিক্ষা গ্রহণ করছে ও পড়াশোনা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত।স্ত্রী অন্তরা বোসের সহযোগিতায় ও ওর আন্তরিক সহায়তায় আমি মন খুলে সঙ্গীত ও লেখালেখিতে এতটুকু স্থান অর্জন করতে পেরেছি।আমার তিনটি বই কিছু দিনের মধ্যেই আসতে চলেছে সাহিত্য জগতে ও সাহিত্য প্রিয় মানুষের কাছে।যার প্রথমটি আসছে কবিতার,দ্বিতীয়টি ছোটগল্পের ও তৃতীয়টি আসছে প্রবন্ধ-ফিচারের।তবে কৈশোর বয়স থেকে লেখালেখি করলেও যে পত্রিকায় আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়,সে পত্রিকাটি ছিল বাগডোগরা থেকে প্রকাশিত চিত্তরঞ্জন দেবভূতি সম্পাদিত পত্রিকা ‘ পাহাড় থেকে সাগর’ পত্রিকা।তবে কৈশোর বেলা থেকেই আমার মনের মধ্যে কবিতা সৃষ্টির খোরাক জোগাতো আমার পিতা ও পারিপার্শ্বিক সামাজিক আবহাওয়া।আমার স্কুলের শিশুরা আমার খুব প্রিয়,ওরাও আমাকে খুব ভালোবাসে।আমি সপ্তাহে দুদিন ওদের কলাকৃষ্টি ক্লাসে কবিতা লেখা ও সঙ্গীত শিক্ষা দেই,ওদের নিয়ে আমি অনুষ্ঠানও করেছি।আমি টিভি চ্যানেলেও আমার সঙ্গীত পরিবেশন করেছি।আমার প্রথম সঙ্গীতে হাতেখড়ি আমার মায়ের হাতেই,তারপর শিখেছি সুশীল পাল মহাশয়ের কাছে নকশালবাড়িতেই,তারপর আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিয়েছি দক্ষিণবঙ্গ থেকে আগত শ্রী বিশ্বনাথ মন্ডলের কাছে।আমি কলকাতার যাদবপুর স্টেডিয়ামে,টালিগঞ্জে অনুষ্ঠান করেছি সঙ্গীতের।এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যন্য মন্ত্রীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেছি।সঙ্গীত পরিবেশন করেছি উত্তরবঙ্গ উৎসব,যুব উৎসব,কৃষিমেলা উৎসব,তিস্তা গঙ্গা উৎসব,পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল ভিত্তিক জেলা স্পোর্টসে,পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুবকল্যাণ দপ্তর পরিচালিত সংস্কৃতি দিবসে ও আরো অন্যান্য অনুষ্ঠানে।ভবিষ্যতে গান নিয়ে এগিয়ে চলতে আমাকে অনেকটা ইন্ধন জোগায় টিভি চ্যানেলগুলি,আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা যদি বলেন,আমার অন্তর আমাকে অবগত করে দেয় আমি যেন গানের সিডি রিলিজ করি।আমার আরেকটি ইচ্ছে নিয়ে সুর-ছন্দ-তালের জগতে এগিয়ে যাওয়া সেটি হল আরো টিভি চ্যানেলে আমি গান গাইতে আগ্রহী,যদি সুযোগ হয়ে ওঠে কোনদিন অবশ্যই গাইব।
কবিতার ক্ষেত্রে যদি বলেন দু একটি টিভি চ্যানেল কলকাতার আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে,সময় করে উঠতে পারলে আমি অবশ্যই সেখানে আমার স্বরচিত কবিতা পাঠ করতে সেখানে অংশগ্রহণ করবো।
সঙ্গীতের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অঙ্গ আমাকে বারে বারে নাড়া দেয় সেটা হল গানের মেলোডি,আমি যে গানগুলি গাই,সেগুলি নির্বাচনের একটি বিশেষ দিক অবশ্যই বলতে পারেন এই মেলোডি।তবে আমি আমার গান গাইবার পছন্দের তালিকায় প্রথমেই রাখি রবীন্দ্র সঙ্গীতকে,তারপর নজরুল অন্যান্য।তারপর স্বর্ণযুগের বাংলা আধুনিক গান,দেশাত্মবোধক,ও বাছাই করা কিছু আজকের গানকে।আমার কবিতার কিছু লাইন –
(১)যে রাত্রির ফসল এখনো শরীরে জড়িয়ে নেয় বর্ষার যৌবন,
(২)জন্ম মানে সমুখে কারাগার আর শিকল
জন্ম মানে রক্তে ভরা মায়ের আঁচল

(৩)হিসেবের ভয়-ঘরে যন্ত্রণা মোছে সমাজকোষ
হিংসা ভোলানো দ্বেষ আমায় ক্লান্ত করে।
(৩)জীবনের শেকড়গুলি সব উপড়ে আনে সন্ধের চাঁদ
(৪)ভোরের দেহে সূর্যরঙা সোনালী পথ
মেঘবালিকার শ্বেতাভ খামে জয়গানের চিঠি।
———————————————————————————–
শুভজিৎ বোস
পোঃনকশালবাড়ি,জেলাঃদার্জিলিং,পিনঃ734429
ফোন -9851204032