বাপি ঘোষ ঃ কখনো তিনি শুনছেন আমার মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন।কখনো আবার শুনছেন মাগো আনন্দময়ী নিরানন্দ করুনা।শারদীয়া দুর্গোৎসবের আগে পালা করে শুনেছেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ, মহালয়া বা মহিষাসুর মর্দিনী। এসব শুনতে শুনতে তিনি চলে যাচ্ছেন পুরনো দিনের গানে।শুনছেন কাননদেবীর গান বা পুরনো দিনের অন্য কোনো গান।গান শুনতে শুনতে কখন যে তিনি কৈশোরে চলে যাচ্ছেন তা তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না। আর অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এবং মজার ঘটনা হলো,সঙ্গীত শোনার নেশায় ডুব দিলে তিনি তাঁর শরীরের যন্ত্রণা বা কষ্ট অনেকটা ভুলে থাকতে পারছেন।
একাশি বছর পার করেছেন শিলিগুড়ি বাবুপাড়া নিবাসী কেশব চন্দ্র খাসনবীশ। কিছুদিন ধরে তিনি ক্যান্সারে ভুগছেন।কেমোথেরাপি নিয়েছেন, রেডিওথেরাপিও হয়েছে। অন্যান্য ওষুধও গ্রহণ করছেন।কিন্তু তারপরও ঘাড়ে,পিঠে যন্ত্রণা যায় না।আসলে এ যে ক্যান্সার নামক ব্যাধি।যার সেই রোগ হয় সেই বোঝে এর কি জ্বালা বা যন্ত্রণা। চিকিৎসকরা তাদের সাধ্য অনুযায়ী ওষুধ দিলেও রোগী বা তার পরিবারকে ইতিবাচক ভাবনা বা পজিটিভ ভাবনা নিয়ে চলার পরামর্শ দেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী বা তাদের পরিবার আরতো বাঁচবে না এমন একটা নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলেন।ফলে দ্রুত রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। কিন্তু ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েও সৃজনশীল ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে চলতে পারাটাও একটি বড় আর্ট বা যুদ্ধ। শিলিগুড়ি বাবুপাড়া নিবাসী বৃদ্ধ কেশব চন্দ্র খাসনবীশ তেমনই একজন ব্যতিক্রমী ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। তাঁর কথায়,” যখনই সঙ্গীত শুনি মনে পজিটিভ ভাবনা তৈরি হয়।মনে একটা ভাব তৈরি হয়।শরীর মন এক হয়ে গান শোনার নেশায় ডুব দেয়। তখন শরীরের জ্বালা যন্ত্রণা প্রায় থাকে না। একটা আলাদা অনুভূতি মনে চলতে থাকায় ক্যান্সার যন্ত্রণা ভুলে যাই।” তাই কখনো শ্যামাসঙ্গীত, কখনো চণ্ডীপাঠ বা পুরনো দিনের গান তিনি শুনতে থাকেন।আর তাঁর চিকিৎসা প্রথম যিনি শুরু করেন সেই বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং রাঙাপানি মেডিকো ক্যান্সার হাসপাতালের ইনচার্জ ডাঃ মনীশ গোস্বামী বৃহস্পতিবার ফোনে খবরের ঘন্টাকে জানালেন,তাঁরা বারবার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী বা তাদের পরিবারকে ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু অধিকাংশ রোগী বা তাদের পরিবার ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে থাকার অভ্যেস করেন না।অথচ তাঁরা এমনও দেখেছেন,শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী দীর্ঘ সাত বছর ধরে বেঁচে রয়েছেন স্রেফ ইতিবাচক ভাবনার জোরে।অবাক করার মতোই ঘটনা। যেসব ক্যান্সার আক্রান্ত সঙ্গীত শোনেন বা অন্য সৃজনমূলক ইতিবাচক ভাবনায় মনোনিবেশ করেন তাদের শরীরে একরকম বিশেষ তরঙ্গ বা থেরাপি হয়।তাতে রোগীর কষ্ট অনেক কমে বা রোগী বেশিদিন বেঁচে থাকে।
সেদিক থেকে ক্যান্সার আক্রান্তদের কাছে বৃদ্ধ কেশব চন্দ্র খাসনবীশ যে অন্যরকম অনুপ্রেরণার উদাহরণ তাতো বলাই বাহুল্য।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন—