বাপি ঘোষ ঃ সব মেয়ে নয়,যাদের আর্থিক পরিস্থিতি একটু ভালো ছিলো সেই পরিবারের মেয়েরাই স্কুলে যেতো।সেই মেয়েরা স্কুলে যেতো পালকিতে চেপে।সঙ্গে বাড়ির একজন করে লোক যেতো পাহারা দিতে দিতে, কেননা পিছনে ভয় করতো।যদি সেই মেয়েকে ইংরেজ সাহেবরা ভোগ করার জন্য তুলে নিয়ে যায়! পরাধীন ভারতে মেয়েদের ছিলো খুব কষ্ট। একবার একটি মেয়ে নদীর ধারে একাই সাহস করে নদী দেখতে গিয়েছিল। ইংরেজরা নৌকা করে সেই মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। অনেক দিন বাদে সেই মেয়েকে আবার সেই নদীর ধারে ছেড়েও দিয়ে যায়। কিন্তু যখন তাঁকে ছেড়ে দিয়ে যায় তখন তাঁর সঙ্গে উপহার হিসাবে সন্তানও দিয়ে যেতো।কেও প্রতিবাদ করার ছিলো না।
৯৮ বছর পার করে পরাধীন ভারতে মেয়েদের দুঃখকষ্ট এভাবেই খবরের ঘন্টার কাছে জানালেন মুকুল দাস।শিলিগুড়ি হায়দরপাড়া শরৎ পল্লীতে তাঁর বাড়ি।
১৯২৫ সালে অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইলের জামালপুর অঞ্চলের ঝড়পাথারিয়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। শৈশব থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন মুকুলদেবী।তাঁর ইচ্ছে ছিলো, প্রচুর পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গীত চর্চা করবেন। ১২ বছর বয়সে অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্থির হয়েছিল ঢাকার মির্জাপুর হস্টেলে থেকে আরও পড়াশোনা করবেন।কিন্তু তখনকার দিনে ছিলো এক সামাজিক কুসংস্কার। তখনকার সময়ে একটি কথা প্রচলিত ছিলো মেয়েদের জন্য। সেটি হলো—পাঁচ বছর কন্যাদান, বারো বছরে গৌরি দান না করলে বাবা-মা এর চৌদ্দ পুরুষ নরকে যাবে।তাই ১২ বছরে পা দিয়ে আরও পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিলো না মুকুলদেবীর।তখনকার দিনে মেয়েদের কোনো স্বাধীনতা ছিলো না। নিজের চোখে পরাধীন ভারতে মেয়েদের দুঃখকষ্ট তিনি দেখেছেন।আজ ভারতবর্ষ যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিক্রম করেছে সেই স্বাধীনতা দিবস স্মরণ করতে গিয়ে পুরনো দিনের স্মৃতিচারনায় প্রতিভাময়ী এই বৃদ্ধা বলেন,তখনকার দিনে পাঁচ সাত বছরের মেয়েদের সঙ্গে ত্রিশ চল্লিশ পঞ্চাশ বছর বয়স্ক পুরুষদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হোত।
মুকুলদেবী যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েন তখনও স্লেট পেন্সিল আসেনি।কলাপাতায় তিনি লিখেছেন, বাঁশের কঞ্চিকে চোখা করে তা দিয়ে লিখতে হোত।আর শিক্ষক বা গুরু মহাশয় পড়ানো বা শিক্ষা দানের জন্য কোনো টাকাপয়সা নিতেন না।শিষ্য বা শিষ্যারা বা ছাত্রছাত্রীরা যে যাঁর বাড়িতে সপ্তাহে এক মুঠ করে চাল জমা করতেন হাঁড়িতে। সপ্তাহ শেষে গুরু বা শিক্ষক মহাশয় সপ্তাহ শেষে এসে সেই চাল গ্রহণ করে নিয়ে যেতেন নিজের অন্ন সংস্থানের জন্য। আর যেদিন স্কুলে স্লেট পেন্সিল এলো সেদিনটি ছিলো অতীব আনন্দের দিন।গুরু মহাশয়কে গিয়ে তাঁরা সবাই মিলে বারবার প্রনাম করতে থাকেন,কলা পাতায় লেখার দুঃখ ঘোচানোর জন্য।
ব্রিটিশ ভারতের এইসব ঘটনার সাক্ষী শিলিগুড়ির এই বৃদ্ধা মুকুল দাস। তিনি হারিয়ে যাওয়ার আগে শুনুন তার মুখ থেকে সব রোমহষর্ক কাহিনী।
দেশ ভাগ হওয়ার সময় এক বস্ত্রে এপার বাংলায় এসে অনেকদিন তাঁকে ছেঁড়া বস্ত্রে তাঁবুতে রাত কাটাতে হয়েছে। প্রায় সময়ই অভুক্ত থাকতে হয়েছে। পরবর্তীতে তাঁর স্বামী প্রয়াত বীরেন্দ্র মোহন দাস কৃষি দপ্তরে চাকরি পেয়ে যাওয়াতে তিনি পুত্র কন্যাকে মানুষ করে তুলতে পারেন।তবে শৈশব থেকে আজও কাগজ কলম মানে কবিতা লেখার অসামান্য নেশা ছাড়তে পারেননি মুকুলদেবী।এই বয়সে পৌঁছেও তিনি সুন্দর গদ্য রচনাও লিখতে পারেন। প্রয়াত বিশ্ব বিখ্যাত মেঘনাদ সাহার বাড়ির কাছেই ছিলো তাঁর জন্ম স্থান।এখনো বাংলাদেশে সেই পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। খবরের ঘন্টার কাছে সব মেলে ধরেছেন এই প্রতিভাময়ী নারী। তাঁর কবিতার বইও বেরিয়েছে প্রচুর। তিনি বলেন,ইংরেজরা নীতি নিয়েছিলো ভারতবাসীদের হাতে মারবো না,ভাতে মারবো।কৃষকদের জমি থেকে সব ফসল ইংরেজরা কেড়ে নিয়ে যেতো। বহু কষ্টের পর আজ যে স্বাধীনতা এসেছে সেই স্বাধীনতার স্বাদ কেমন অনুভব করেন সবই মেলে ধরেছেন তিনি।তবে চলুন শোনা যাক।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —