নিরাশ্রয়দের আশ্রয় দেওয়াতেই তৃপ্তি খুঁজে পান সাজুবাবু

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ তাদের খাবারের জন্য প্রতিদিন দরকার নয় কেজি চাল।তার সঙ্গে অন্য খাদ্য সামগ্রীতো আছেই। তার পাশাপাশি ওষুধ, বস্ত্র সবই প্রয়োজন। প্রতি মাসে তাদের পিছনে খরচ রয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। আসলে তাদের প্রিয়জন বলতে কেও নেই। তারা এখন মোট ১৮ জন। কেও শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, কেও মানসিকভাবে অসুস্থ। আসলে তারা রোদ বৃষ্টিতে রাস্তায় পড়ে থাকতেন।কিন্তু তাদেরকে রাস্তা থেকে তুলে এনে শেল্টার হোমে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। নাম হেভেন শেল্টার হোম।উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়া থানার ডিমডিমাতে দিনের পর দিন নিজের উদ্যোগে এরকম একটি শেল্টার হোম গড়ে এক অনন্য মানবিক কাজের উদাহরন তৈরি করেছেন সেখানকার বিশিষ্ট সমাজসেবী সাজু তালুকদার।
করোনা শুরু হওয়ার আগে সাজুবাবু মূলত বস্ত্র ব্যাঙ্ক নিয়ে মেতে থাকতেন।বিভিন্ন মানুষের থেকে বস্ত্র সংগ্রহ করে চা বাগানে বস্ত্র হীনদের মধ্যে তা তিনি বিলি করতেন। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর জমায়েত নিষিদ্ধ হওয়ায় বস্ত্র ব্যাঙ্কের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে সাজুবাবুর।এখন তাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান হেভেন শেল্টার হোম। যদিও করোনা শুরু হওয়ার আগেও চলছিল তার এই শেল্টার হোম। কিন্তু তখন সাজুবাবু তাঁর একটি গাড়ি ভাড়া থেকে সংগৃহীত অর্থ হেভেন শেল্টার হোমের অসহায় আবাসিকদের প্রদান করতে পারতেন। কিন্তু করোনার পর আর সেই গাড়ি ভাড়া তাঁর হয় না।তবে এখন হেভেনের অসহায় আঠারো জনের দুবেলা অন্নের ব্যবস্থা হচ্ছে কি করে? সাজুবাবু বলেন, এদের কেও নেই। এরাতো না খেয়ে থাকতে পারে না। তাই বিভিন্ন মানুষের কাছে এদের পেট চালানোর জন্য সাহায্য চাইতে হচ্ছে। সেই সাহায্য দিয়েই চলছে হেভেন শেল্টার হোম। আট জন ব্যক্তি প্রতি মাসে প্রদান করেন তিন হাজার টাকা করে, কেও দেন চাল ডাল। তা দিয়েই শেল্টার হোমের মনোজ গুপ্তা, কুনাল, বিজয়, পিয়ালিদের মতো আবাসিকদের মুখে হাসি ফুটছে।১৮ জনের মধ্যে নজন পুরুষ, নজন মহিলা। তিন জনের বয়স ২৪ থেকে ৩০, বাকিরা পঞ্চাশের ওপর।
আসলে সাজুবাবু চা বাগানে বস্ত্র দান করার সময়ই ২০১৪ সালে প্রথম নাগরাকাটার নন্দু মোড় থেকে অভুক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন সত্তর বছরের বৃদ্ধ বুধু ওরাওকে।কেও নেই বুধুর,শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন।প্রথমে এই বুধু ওরাকে নিজের বাড়িতে এনে অন্যরকম এক মানবিক কাজের যাত্রা শুরু করেন তিনি। তারপর ভাবেন, এদের জন্য একটি শেল্টার হোম করলে কেমন হয়। সেই থেকে শুরু তাঁর এক লড়াই, অসহায় নিরাশ্রয়দের তুলে এনে আশ্রয় দান এবং অন্ন দানের মতে পবিত্র কাজের। কেন এমন কাজ, প্রশ্নে সাজুবাবু বলেন, আমরাতো কেও চিরকাল বাঁচবো না।তবে যেকদিন বাঁচবো নিরাশ্রয়দের আশ্রয় দিয়ে বাঁচি না কেন।