নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়ি ঃবেশ কিছুদিন আগে তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। ফলে আর বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। দিনের বেশিরভাগ সময়টাই তার কেটে যায় দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বই পড়ে। আর বিভিন্ন সংবাদপত্রের পাতা উল্টে পাল্টে দেখতে থাকেন। শিলিগুড়িতে 94 বছর বয়স্ক স্বাধীনতা সংগ্রামী টিকেন্দ্রজিত মুখার্জির এভাবেই দিন কাটছে।
গত পয়লা জানুয়ারি 94 বছরে পা দিয়েছেন তিনি। আর সেই সময় তার সারদাপল্লীর বাড়িতে পুত্রবধূ- শিক্ষিকা সুদীপ্তা মুখার্জির উদ্যোগে তার জন্মদিন পালিত হয়েছে। তার পুত্র বিশ্বজিত মুখার্জি তাকে উপহার দিয়েছেন মহাভারত। তার কন্যা সোমা সান্যাল, মহুয়া মৈত্রের মধ্যে কেও উপহার দিয়েছেন রামায়ণ, কেউ অন্য বই। আবার গোয়েন্দা গল্পের বইও উপহার হিসেবে পেয়েছেন। সেসব বই পড়তে পড়তেই তার দিন কাটে এখন। অথচ দেশ যখন পরাধীন ছিল তখন তার সময় কাটতো ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কৈশোর অবস্থা থেকেই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। অবিভক্ত বাংলায় খুলনা জেলার বাগেরহাট জেলখানায় তিনি বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন। 1942 সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে দীর্ঘদিন তাকে জেলও খাটতে হয়েছে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলেও দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে এপার বাংলায় চলে আসতে হয়েছে। শনিবার দেশের সাধারনতন্ত্র দিবসে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশভাগের পর বহু মানুষ ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে এসেছেন। তাদের অনেকেই উত্তরবঙ্গে বসবাস করছেন। এইসব মানুষদের মধ্যে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী রয়েছেন। তারমধ্যে তিনিও একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। শিলিগুড়িতে এই মুহূর্তে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে একমাত্র তিনি জীবিত রয়েছেন। কিন্তু তার আক্ষেপ, অনেকেই তাদেরকে রিফিউজি হিসেবে চিহ্নিত করেন। রিফিউজি মানে রিফিউজ করা। তার প্রশ্ন, কেন স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়েও তাকে রিফিউজি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে? দেশের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল এর কাছ থেকে তিনি দিল্লি গিয়ে সম্মান নিয়ে এসেছেন । আবার ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে সম্মান পেয়েছেন। এখন বেশ কয়েক বছর ধরে গৃহবন্দি অবস্থায় তার দিন কাটছে। দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর তার চলাফেরা করার সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে নেতাজির বইয়ে তিনি ডুবে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, নেতাজিকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়নি স্বাধীন ভারতে।শনিবার দেশের সাধারনতন্ত্র দিবসে ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটির শিলিগুড়ি শাখা তার বাড়িতে গিয়ে তাকে একটি হুইল চেয়ার উপহার হিসেবে দিয়ে এসেছে।