নিজস্ব প্রতিবেদনঃ সুন্দর পাহাড় আছে উত্তরবঙ্গে। পাহাড়ের সঙ্গে নদী, জঙ্গল, বন্য প্রাণী সবমিলিয়ে প্রকৃতি যেন অন্যভাবে সৌন্দর্যের ডালি মেলে ধরেছে উত্তরবঙ্গে। আর এই সুন্দর পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে সিনেমা ট্যুরিজমের ব্যাপক প্রয়াস শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ি দেশবন্ধু পাড়ার চলচ্চিত্রপ্রেমী ব্যক্তি বাবলু ব্যানার্জী এনিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। বলিউড এবং টলিউডের সিনেমা পরিচালকদের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ রেখে উত্তরবঙ্গের সিনেমা ট্যুরিজমে তিনি ফলও পেতে শুরু করেছেন।
হিন্দি ছবি বরফি, পরিণীতা, ম্যায় হু না, দেশ ছবির শ্যুটিং হয়েছে দার্জিলিং পাহাড়ে। তার বাইরে জেল ৫০ ছবিরও শ্যুটিং হয়েছে যাতে অভয় দেওল, পঙ্কজ কাপুরের মতো অভিনেতারাা অভিনয় করেছেন। সবগুলোর শ্যুটিং স্পট বাছাই সহ অন্য কাজে যুক্ত থেকেছেন সিনেমাপ্রেমী বাবলু ব্যানার্জী। আবার টলিউডের বাংলা ছবি পরিযায়ী,প্রতিঘাত, টেনিদার মতো ছবির লোকেশন সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক পরিবেশ তৈরির পূর্ণ সহযোগিতাও করেছেন বাবলুবাবু। আসলে বাবলুবাবু একজন লাইন প্রডিউসার। তিনি সিনেমা ভালোবাসেন। খাদ ছবিতে একজন স্টেশন মাস্টার, রক্ত ছবিতে পুলিশের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
সিনেমার প্রতি টান থাকাতেই তার মাথায় অনেকদিন ধরে ঘুরপাক খায় উত্তরবঙ্গে সিনেমা ট্যুরিজমের বিষয়টি। তবে ১৯৯৭ সালের দিকে অঞ্জন চোধুরি, প্রভাত রায়দের মতো পরিচালকরা প্রথম তার মাথায় চিন্তাটি প্রবেশ করান। কলকাতা থেকে বড় বড় পরিচালকরা উত্তরবঙ্গে সিনেমা করতে আসেন আউটডোর লোকেশনের জন্য। পাহাড়নদীঝরনাজঙ্গল সবুজ তাদের গল্পের প্রয়োজনে টেনে আনলেও এখানে নেমে গাড়ি ভাড়া নেওয়া, লোকেশন ঠিক করা, হোটেল লজ বুকিং, ট্রেন বা বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করা, যে লোকেশনে শ্যুটিং হবে সেখানে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, পুলিশের অনুমতি নেওয়া এরকম বহু কাজ থাকে। এসব নিয়ে একটি প্যাকেজিংয়ের কাজ কেও করলে পরিচালকরা সেই সংস্থা বা ব্যক্তির ওপর টাকা নিয়ে দায়িত্ব দিয়ে দিলে অনেকটা নিশ্চিন্ত হতে পারেন। ঠিক সেই কাজটিই লাইন প্রডিউসার হিসাবে বিগত কয়েকবছর ধরে নিঃশব্দে বাবলু ব্যানার্জী করে চলেছেন তার মুভি ক্রাফট মিডিয়ার মাধ্যমে।
বাবলুবাবু বলেন, দার্জিলিং পাহাড় থেকে সিকিম, অসম, ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শ্যুটিং লোকেশন অনবরত দেখে চলেছেন তার টিমের সদস্যরা। কারও হয়তো কিডন্যাপিং সিনের জন্য জঙ্গল চাই, কারও হয়তো রোমান্টিক সিনের ঝর্ণা চাই তাদের টিম নানান লোকেশনের ছবি তুলে পরিচালকদের কাছে হোয়াটস আপে তা পাঠিয়ে দিচ্ছে। এরপর সেখান থেকে একটা লোকেশন হয়তো ঠিক হলো। তারপর একদিন তারিখ ঠিক করে লোকেশন দেখা ও শ্যুটিং। এমনকি বাংলা টিভি সিরিয়াল ফাগুন বৌ, কে আপন কে পর, ঠাকুরমার ঝুলি, রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ের মতো সিরিয়ালগুলোর অনেক শ্যুটিং হয়েছে উত্তরবঙ্গে। সবেতেই লাইন প্রডিউসার হিসাবে কাজ করেছেন বাবলুবাবু।
পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি, রাজা চন্দ, হরনাথ চক্রবর্তী , রাজীব বিশ্বাস, অরিন্দম শীল, সায়ন্তন ঘোষাল, সুজিত গুহ সহ আরও অনেক সিনেমা পরিচালক এবং অভিনেতাঅভিনেত্রীর সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রেখে চলেছেন বাবলুবাবু। আর তার এই যোগাযোগ এবং সিনেমা ট্যুরিজম গুরুত্ব পেতে থাকায় মুভি ক্রাফট মিডিয়া ঘিরেই বহু কর্মসংস্থান শুরু হয়েছে। এই মুহুর্তে দুশোর বেশি বেকার যুবকের কাজ হয়েছে এই ট্যুরিজমের মাধ্যমে। আবার স্থানীয় অনেক ছেলেমেয়ে সিনেমায় অভিনয় করারও সুযোগ পাচ্ছে। বাবলুবাবু বলেন, তারা চাইছেন উত্তরবঙ্গে সিনেমা তৈরির জন্য আরও দক্ষতা বৃদ্ধি পাক।যেমন ক্যামেরাম্যান, ভিডিও এডিটিং। তারা একটি ফিল্ম শেখানোর স্কুলও খুলতে চলেছেন শিলিগুড়িতে। কীভাবে অভিনয় করতে হয়, কীভাবে মেক আপ করতে হয়, সব শেখাবেন তারা। উত্তরবঙ্গের প্রতিভা বিকাশে তারা সবসময় কাজ করছেন। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও তাদের এই সিনেমা ট্যুরিজমের বিকাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে বাবলুবাবু জানান।
বাবলুবাবুর স্ত্রী চৈতালি ব্যানার্জী, তার ভাই সীতম মৈত্র, শান্তনু শীল, রাহুল, পম্পা বৈদ্য, সুশান্ত দুর্জয় মন্ডল, রিঙ্কু বিশ্বাস প্রমুখ এই সিনেমা ট্যুরিজমের নতুন ধরনের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।