নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ পরাধীন ভারতে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম একটি কবিতায় লিখেছিলেন, “মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম,হিন্দু মুসলমান। /মুসলিম তার নয়ন- মনি, হিন্দু তাহার প্রান।।/এক সে আকাশ মায়ের কোলে–যেন রবি-শশি দোলে,/এক রক্ত বুকের তলে,এক সে নাড়ীর টান।।”আবার আর একটি কবিতায় দেশপ্রেমিক কবি লিখেছিলেন, “অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া,জানে না সন্তরন/কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন!/ হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?/ কান্ডারী! বল,ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র। ” স্বাধীন ভারতে আজও বড় প্রাসঙ্গিক কাজী নজরুল ইসলামের এইসব অসামান্য কবিতার লাইন।
আজ আমাদের মনিপুরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি, চরম অসভ এবং বর্বরোচিত কাজ সেখানে হয়ে চলেছে। মনিপুরের বিভিন্ন ঘটনা আমাদের মানুষ হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ তৈরি করছে।এরমধ্যেই কিন্তু যাঁরা ভালো কাজ করার তাঁরা নিঃশব্দে ভালো কাজ করে চলেছেন।দেশের কথা ভেবে জাতি ও ধর্মের উর্ধ্বে উঠে কিছু মানুষ এখনো কাজ করে চলেছেন।মানবতাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম, সেই কথা মনে করে হিন্দু পুন্যার্থীদরের সেবা দিয়ে চলেছেম মহম্মদ মইনুল।
মনিপুরের কি পরিস্থিতি তা অনেকের জানা। আর এরমধ্যেই উল্টো ছবি দেখা গেলো উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে নজির গড়লো এক মুসলিম পরিবার।*
রাস্তার পর রাস্তা হেঁটে এই শ্রাবন মাসে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাচ্ছেন হিন্দু ভক্তরা। দীর্ঘ পথ হেঁটে মন্দিরে পৌঁছানোর আগেই কারোর পায়ে ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে । কারোর পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। আর এই সমস্ত তীর্থ যাত্রীদের হাতে জলের বোতল কিংবা তাদের পায়ে পেইন কিলার স্প্রে করে সেবা দিচ্ছে এক মুসলিম পরিবার।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বিরল নজির দেখা গেলো জলপাইগুড়ি পাহাড়পুর এলাকায়।
জল্পেশ হলো
উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ শৈব তীর্থক্ষেত্র । শ্রাবন মাসের সব সোমবারে এই মন্দিরের অনাদি শিবলিঙ্গে জল ঢালতে আসেন ভক্তরা। এবারেও সেই নিয়মের ব্যাতিক্রম হয়নি।রবিবার রাত থেকেই জাতীয় সড়ক ধরে ভোলে বোম ধ্বনি দিয়ে ভক্তদের ঢল নামে ময়নাগুড়ির জল্পেশ মন্দিরের দিকে ।*
আর অবাক কান্ড।
এই সমস্ত ভক্তদের পায়ে হাত দিয়ে প্রনামের পর তাদের পায়ে পেইন কিলার স্প্রে করে দিচ্ছেন মইনুল। আর তাকে এই কাজে সহায়তা করে চলেছেন তার স্ত্রী এবং তার আট বছরের মেয়ে। শুধু পেইন কিলারের সঙ্গে তারা সপরিবারে তীর্থ যাত্রীদের বিনামূল্যে জলের বোতল উপহার দিচ্ছেন । ঠান্ডা পানীয়ও তুলে দিচ্ছেন।আর ভিন্ন ধর্মের এক মানুষের কাছ থেকে এই জাতীয় পরিসেবা পেয়ে হতবাক হয়ে যাচ্ছেন ভক্তরা।তারাও দু হাতে আশীর্বাদ করে চলেছেন এই সংখ্যালঘু পরিবারকে।
মহম্মদ মইনুল বলেন, শৈশব থেকেই তিনি জলপাইগুড়ি শহরে বড় হয়েছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এই শহরের একটা অন্যতম দৃষ্টান্ত। তাই হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদ না দেখে সম্প্রতির নজির বজায় রাখতে তিনি ওই প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।সেই কারনেই তিনি হিন্দু তীর্থযাত্রীদের পায়ে পেইন কিলার স্প্রে করে দিচ্ছেন ।*
মইনুলের স্ত্রী রঞ্জিতা এবং মেয়ে মুসকানের বক্তব্য, মানুষের সেবা করা পরম ধর্ম। তাই আজ তারা প্রায় এক হাজার তীর্থ যাত্রীর হাতে জলের বোতল তুলে দিয়েছেন। দিয়েছেন সফট ড্রিংকস। কয়েক হাজার মানুষের পায়ে পেইন কিলার স্প্রে করে দিয়েছেন।*
শুভঙ্কর রায়, সুরজিত দেবনাথ নামে তীর্থ যাত্রীরা এক মুসলিম পরিবারের এই কাজে হতবাক। তারাও এই পরিবারের সমৃদ্ধি কামনা করলেন।*তাঁরা আরও বলেন,” স্বামী বিবেকানন্দের বানী— জীবে প্রেম করে যেইজন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর শুধু বইয়ে পড়ে মুখস্থ করলেই চলবে না।বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।তবেই হবে শিব সেবা।সেই দিক থেকে এই মুসলিম পরিবারকে বারবার কুর্নিশ জানাতে হয়।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —