শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারিতে শকুন দত্তক নিলেন এই চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ যে সে পাখি নয়,একেবারে শকুন দত্তক নিলেন চিকিৎসক ডাঃ পার্থপ্রতিম।
জটায়ু-কে পেয়ে খুশির হাওয়া পরিবারে। বাড়িতে তিনজন সদস্য। শিক্ষিকা মা ও চিকিৎসকের বাবার সাথে রয়েছে পুত্রসন্তান ‘সাম্য’। সেই পরিবারে এবার আরেকজন যুক্ত হল। জটায়ু বসু। জটায়ুকে পেয়ে খুশির হাওয়া পরিবারের সকল সদস্য-সদস্যাদের। ‘জটায়ু’ সে অর্থে মানব শিশু নয়; হিমালয়ান গ্রিফন  ভালচার, অর্থাৎ হিমালয়ের শকুন। বৈজ্ঞানিক নাম- গিপস্ হিমালয়ানসিস (Gyps himalayensis))। এটা মূলত হিমালয় ও তিব্বতীয় মালভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। শকুনের মধ্যে যেসব প্রজাতি বহু আগে এই পৃথিবীতে এসেছে হিমালয়ান গ্রিফন তাদের মধ্যে অন্যতম। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ান ফর কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN) অনুসারে এটি লাল তালিকাভুক্ত অর্থাৎ এটি বিলুপ্তির পথে চলেছে। যেটাকে পরিভাষায় বলা হয় নিয়ার থ্রেডেন্ট (Near Threatened)।
উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণী উদ্যান, বেঙ্গলসাফারি থেকে ডুয়ার্সের বানারহাট নিবাসী চিকিৎসক পার্থপ্রতিমবাবু এই পাখিটি দত্তক নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ জু-অথিরিটি তার হাতে দত্তক সংক্রান্ত নথিপত্র ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য সৌজন্যমূলক উদ্যানপ্রবেশ পাশ তুলে দেন।
ভারত ছাড়াও নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান, কির্গিজস্তান প্রভৃতি দেশে একসময় এর অবাধ বিচরণ ছিল। বেশ কয়েকদশক ধরে ব্যাপক হারে এই পাখিটির মৃত্যু হয়। বিশেষত গবাদি পুশুর মাংস খাওয়াই এই মৃত্যুর কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন। গবাদি পশুর চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ড্রাই-ক্লোরোফেনিক ওষুধই এই মৃত্যুর কারণ। IUCN এর তালিকা অনুসারে এর সংরক্ষণ সূচক ৩.১।
শকুন এই পাখিটিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক রকমের কুসংস্কার রয়েছে। হিন্দুদের গুরুত্বপূর্ণ দেবতা শনিমহারাজ-এর বাহন হলেও; পাখীটি সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিশেষত মহাভারতের চতুর শকুনিমামা-র কল্যাণে এই পাখিটি অনেকক্ষেত্রেই গালিগালাজের স্তরে স্থান পেয়েছে।
তবে রামায়ণের সেই পাখি যে কিনা নিশ্চিত পরাজয় জেনেও মহাবীর রাবণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। মৃত‌্যুভয় কে তুচ্ছ ক‌রে জীবন দি‌য়ে ল‌ড়ে‌ছি‌লেন জটায়ু। ভারতীয় জনমান‌সে আজও স্মরণীয়। পৌরাণিক গবেষকদের মতে জটায়ু- ‘শকুন’ বা মতান্তরে বাজপাখি শ্রেণীভুক্ত।
দত্তক পিতা পার্থপ্রতিম বলেন- বর্তমানে দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অাকাশে নৈতিকতাহীন, দূর্নীতিগ্রস্ত, বলশালী নেতাদের অবাধ বিচরণ। তাদের নক্কারজনক কান্ডকারখানা নিত্যদিন সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জটায়ুর মত সংগ্রামী যুব সমাজের বিশেষ প্রয়োজন। তাই নতুন সদস্যের নাম রাখ হয়েছে ‘জটায়ু’। তার এই শকুন দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত সে অর্থে প্রতীকী ও দ্যোতনা মেশা। পার্থপ্রতিম ডুয়ার্সের জনমানসে চিকিৎসার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞান সাংবাদিকতার ও বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে চলেছেন। এ বিষয়ে তিনি জাতীয়স্তরেও পুরস্কৃত হয়েছেন।
জটায়ুর বর্তমান মা বানারহাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুকন্যা বসু বলেন- আমি নতুনভাবে মা হতে পেরে খুবই আপ্লুত। শকুন ঘিরে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। যদিও এই পাখিটি আমাদের বাস্তুসংস্থান বা ইকোসিস্টেমে টার‌সিয়ারী কন‌জিউমার হিসা‌বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছাত্র সাম্য বসু জানায়,আমি ব্যতিক্রমী দাদা হয়েছি। আমার খুশির সীমা নেই।
আগামী ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। তার আগে এ ধরনের উদ্যোগ জনমানসে সৃজনশীল বার্তা দেবে বলে আশা করছেন অনেকে।যদিও দত্তক নেওয়া সেই শকুনটি বেঙ্গল সাফারিতেই থাকবে।