গুনগত মান কমছে মৃৎ শিল্পের, নতুন মৃৎ শিল্পী তৈরি করতে প্রশিক্ষণ শুরুর চিন্তাভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ একটা সময় ছিল যখন পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে এমন অনেক সদস্য থাকতেন যাদের মধ্যে শিল্পচেতনা ছিল, তাদের মধ্যে একটা আর্টিস্টিক চিন্তাভাবনা ছিল। প্রতিমার বায়না দেওয়া বা প্রতিমা কেনার সময় তারা মৃৎশিল্পীদের নানান প্রশ্নবানে জর্জরিত করতেন– এটা কেন হয়নি, ওটা কেন হয়নি, এই ভুলটি কেন হয়েছে বা প্রতিমার হাতের আঙ্গুলগুলো এমন কেন, পায়ের পাতা এমন কেন ইত্যাদি নানান রকম ভুল ধরতেন । ফলে মৃৎশিল্পীরাও চাপে থাকতেন এবং প্রতিমাকে কত সুন্দরভাবে তৈরি করা যায় তার গুণগত মানের দিকে বেশি করে ধ্যান দিতেন। এখনকার সময় পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিমাকে কেন্দ্র করে সেই ধরনের আর্টিস্টিক প্রশ্ন করার অভাব দেখা যাচ্ছে। ফলে মৃৎশিল্পীরাও যেমনতেমনভাবে প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রতিমা যত তাড়াতাড়ি সহজে তৈরি করে বাণিজ্য কিভাবে করা যায় এই দিক নিয়ে শিল্পীরা বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন। এরফলে মৃৎশিল্পের গুণগত মান কমছে। তাছাড়া নতুন মৃৎশিল্পী সেভাবে তৈরি হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে মৃৎশিল্পী তৈরি না হলে এই শিল্প তার পুরনো মাধুর্য হারিয়ে ফেলবে। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন শিলিগুড়ি কুমোরটুলি মৃৎশিল্প উন্নয়ন সমিতির সভাপতি তথা বিশিষ্ট মৃৎ শিল্পী অধীর পাল। তিনি শিলিগুড়ি কুমোরটুলিতে অবস্থিত রুপ ভারতী মৃৎ শিল্প কারখানার কর্ণধার। বহু বছর ধরে অসাধারণ সব মূর্তি তৈরি করে আসছেন অধীরবাবু। যদিও এখন তিনি দুর্গা প্রতিমা আর আগের মতো তৈরি করেন না। তিনি এখন ভাস্কর্য শিল্পের দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়েছেন। অধীরবাবু বলেন, এই মৃৎ শিল্প একটি কারিগরি শিল্প বা স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য শিল্প। সারা পৃথিবীতে এই শিল্পের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু নতুন নতুন মৃৎশিল্পী তৈরি করা প্রয়োজন বলে তাঁরা উপলব্ধি করছেন। এর জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরও তারা শুরু করতে চান বলে অধীরবাবু জানান। অধীরবাবু আরো বলেন, এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে ধৈর্য কম। তারা অল্প পরিশ্রমে বেশি রোজগার করতে চায়। কিন্তু মৃৎশিল্পে পরিশ্রম বেশি, সময় বেশি দিতে হয়। অথচ নতুনদের মধ্যে ধৈর্য ধরে সময় দেওয়ার প্রবনতা কম।তবু তারা চেষ্টা করছেন নতুন নতুন শিল্পী করার।
সামনে পুজো আসছে। প্রতিমা তৈরীর সমস্ত উপকরণের দাম বেড়েছে। ফলে প্রতিমার দামও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। শিলিগুড়ি কুমারটুলিতে এখন ত্রিশটি প্রতিমা তৈরীর কারখানা রয়েছে। এক একটি কারখানায় পাঁচ থেকে আটজন কাজ করেন। মাটিকে ভিত্তি করে এই মৃৎশিল্প। মাটির জায়গায় এখন কিছু কিছু আধুনিকতা এসেছে। যেমন ফাইবার গ্লাস, সেরাবিক, স্টোন ডাস্ট –সেসব দিয়ে স্ট্যাচু বা মডেল তৈরি করা হয়। তবে যত আধুনিকতাই আসুক না কেন, প্রথমে কিন্তু মাটি দিয়েই মডেলটি তৈরি করে নিতে হয়। পুজোর মুখে শিলিগুড়িতে পাহাড়, বিহার থেকে অনেকে প্রতিমার অর্ডার দিতে আসেন। এখনো সবাই সেভাবে আসেননি তবে মৃৎশিল্পীরা বসে রয়েছেন। প্রতিবেশী রাজ্যগুলো থেকে পুজো উদ্যোক্তারা কবে প্রতিমার জন্য বায়না দিতে আসবেন সেই অপেক্ষায় রয়েছেন অনেক মৃৎ শিল্পী। তবে সাধারণ মানুষ এবং পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে মৃৎ শিল্প নিয়ে সচেতনতা জরুরি প্রয়োজন বলে অধীরবাবু জানান।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন—-