নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ শিলিগুড়ি দেশবন্ধু পাড়ায় অবস্থিত ঐতিহ্যমন্ডিত সাংস্কৃতিক সংস্থা আর্য সমিতির ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিগত কিছু দিন ধরে নানা অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। তারই অঙ্গ হিসাবে সোমবার ২১ আগস্ট শুরু হয়েছে ব্রিজ প্রতিযোগিতা। এক অন্যরকম বুদ্ধিমত্তার তাস খেলা হলো ব্রিজ খেলা।একসময় খুব জনপ্রিয় ছিলো ব্রিজ খেলা। কিন্তু সময়ের নিয়মে নতুন প্রজন্মের মধ্যে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ব্রিজ খেলা। সেই দিকে তাকিয়ে শিলিগুড়ির আর্য সমিতি নর্থবেঙ্গল ব্রিজ এসোসিয়েশনের সহযোগিতা সোমবার থেকে শুরু করেছে ব্রিজ প্রতিযোগিতা। আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই ব্রিজ প্রতিযোগিতা। সোমবার এ উপলক্ষে আর্য সমিতির হল ঘরে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়।সেখানে পুরসভার চেয়ারম্যান প্রতুল চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, বরো চেয়ারম্যান জয়ন্ত সাহা,ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রশান্ত চক্রবর্তী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরদিন্দু চক্রবর্তী,আর্য সমিতির সম্পাদক রানা দে সরকার সহ অন্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত শিল্পী অর্পিতা দে সরকার এবং আর্য নারী গ্রুপের সদস্যারা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তবলায় সহযোগিতা করেন রাজদীপ দে সরকার। আর্য নারী গ্রুপে যাঁরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন তাঁরা হলেন শিল্পী চম্পা রায়চৌধুরী, রুমা চক্রবর্তী, মান্তু চ্যাটার্জী,সুদীপা চৌধুরী, জয়িতা সেনগুপ্ত।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও শিলিগুড়ি তখনও একটা গন্ডগ্রাম। মিত্র সম্মিলনী আগেই শুরু করে দিয়েছিল সংস্কৃতি চর্চা। অত্যন্ত অনগ্রসর একটি এলাকায় সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার বিকাশে সেই সময় মিত্র সম্মিলনীর সঙ্গে নিজেদের নামটাও জুড়ে নেয় আর্য সমিতি। শিলিগুড়ির প্রথম যাত্রা দলটি কিন্তু তৈরি হয়েছিল দেশবন্ধু পাড়াতেই।পুজোর পর বিভিন্ন এলাকায় যাত্রা পালা অনুষ্ঠান করতে থাকে সেই দলটি।শিলিগুড়ির ইতিহাস লেখক প্রয়াত শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আর্য সমিতির প্রাচীন সদস্য। তিনি তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন,আর্য সমিতির প্রথম সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে,তদানীন্তন ল্যান্ডেন এন্ড ক্লার্ক কোম্পানির দপ্তরে। আর সেই সভা আয়োজনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত কালীব্রহ্ম মুখোপাধ্যায়, খগেন্দ্র নাথ সেন,ফণীন্দ্রনাথ দত্ত, অমরেন্দ্রনাথ বসু,বিজয় কৃষ্ণ ঘোষ প্রমুখরা।এই আর্য সমিতির ৭৫ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে একটা কবিতা লিখেছেন খবরের ঘন্টার সম্পাদক বাপি ঘোষ। সোমবার সন্ধ্যায় আর্য সমিতির হল ঘরে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় সেই কবিতাটি সকলের সামনে পাঠ করেন খবরের ঘন্টার সহ সম্পাদিকা অর্পিতা দে সরকার। চলুন একবার শুনে নেওয়া যাক, কি আছে সেই কবিতায়—-
আর্য সমিতি, তোমারে প্রনাম
বাপি ঘোষ
তুমি শিলিগুড়ির আর্য সমিতি,
শিলিগুড়ির নাট্য চর্চা এবং সংস্কৃতিতে তোমার অবদান,
এই পঁচাত্তরে এসেও আমরা ভুলতে পারিনি।
সালটা ছিলো ১৯৪৮,দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে,
ওদিকে শিলিগুড়িতে পূর্ব বঙ্গ থেকে উদ্বাস্তুদের স্রোত,
অন্ন নেই, বস্ত্র নেই, খাদ্য নেই —
চোখের জলের মধ্যেই সংস্কৃতি চর্চা!!–
শিখিয়েছে, এই আর্য সমিতি শিখিয়েছে ।।
তখনকার শিলিগুড়িতে নারী শিক্ষা?!!
সে তো বড়ই করুন, অবর্ননীয় —
ইতিহাসবিদরা বলেন,পুজোর আগে একদিনের জন্য বিশেষ ট্রেন আসতো টাউন স্টেশনে,
সে ট্রেনে চপ কাটলেট কেক সহ আরও বহু খাদ্য সামগ্রী থাকতো,
এমনকি তরুনের দল সে ট্রেনের কামরায় উঠে সিনেমাও দেখে আসতো,
কিন্তু মেয়েরা?
যে মেয়েদের জন্য রামমোহন, বিদ্যাসাগরের মতো মনিষীরা দিনরাত লড়াই চালিয়েছিলেন—
সেই মেয়েদের কোনো অধিকার ছিলো না সেই বিশেষ ট্রেনে গিয়ে সিনেমা দেখার!,
শিক্ষা? হাসি পায়, এই তো ছিলো অতীত শিলিগুড়ির নারী শিক্ষা!!
শুনবেন আরও, পুরনো কথা শুনবেন না আরও?
পায়ে থাকতো না চটি,মেয়েরা
পুজো দেখতে বের হতেন পায়ে হেঁটে অথবা সাজানো গরুর গাড়িতে, দল বেঁধে
মেয়েদের সংস্কৃতি চর্চায় অধিকার ছিলো না কারো!!!
কিন্তু হে আর্য সমিতি, তোমার হাত ধরে এসেছিলো নতুন এক বিপ্লব,
হে আর্য সমিতি, তোমারই হাত ধরে শুরু হয়েছিল নতুন এক আলোর যাত্রা —
প্রয়াত ব্রহ্মনাথ চক্রবর্তীর দুই কন্যাকে আজ আর হয়তো কেও মনে রাখে না,
আজ যে আর্য সমিতি, সেই দুই নারীর দান করা এক বিঘা চার কাঠা জমিতেই কিন্তু শুরু হয়েছিল যাত্রা,
আর্য সমিতি, তোমার বীজ মন্ত্রেইতো মাতৃ শক্তি—
অন্ধকারের শিলিগুড়িতে যাত্রা, নাটক,খেলা সহ সংস্কৃতি প্রসারে তোমার অসামান্য অবদান —
আর্য সমিতি, তোমারে নমস্কার, বারবার নমস্কার —
তুমি এগিয়ে চলো ঝড়ের গতিতে,
আবারও তুমি দেখাও নতুন দিশা,
নতুন নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে তুমি নতুন করে পথ দেখাও—
আর্য সমিতি, শুধু এই একটি ৭৫ বছর নয়–
এরকম শত শত ৭৫ বছর আসুক তোমার পথ চলায়,
আর্য সমিতি, তুমি হয়ে ওঠো আকাশের মতো,তুমি হয়ে ওঠো এক অসীম দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের মতো—-
তুমি আমাদের বিরাট বট বৃক্ষের মতো হয়ে ওঠো–
হে আর্য সমিতি, ৭৫ বছরে তোমায় নিয়ে এই রইলো প্রার্থনা।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —