পিছিয়ে পড়া মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে অনন্যা এই শিক্ষিকা

বাপি ঘোষ ঃ হতে পারতেন তিনি কোনও কলেজের অধ্যাপিকা, যোগ দিতেই পারতেন উচ্চ শিক্ষার কোনও প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু না, সেসবের দিকে না তাকিয়ে তিনি পড়ে থাকছেন পিছিয়ে পড়া অনগ্রসরদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। সমাজের পিছিয়ে পড়া তৃনমুল স্তরের ছেলেমেয়েরা যাতে আরও বেশি বেশি করে শিক্ষার আঙিনায় আসতে পারে সেদিকে তাকিয়েই চলছে তাঁর লড়াই। ২০১৫ সালে রাজ্য সরকারের দেওয়া শিক্ষা রত্ন পেয়েছেন তিনি। ২০১৬ সালে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার গ্রহনের পরও তিনি থেমে নেই। এই করোনার দুর্যোগের সময়ও চলছে তাঁর কাজ।হ্যা,তিনি অবশ্যই বাংলার গর্ব শিলিগুড়ি রবীন্দ্র নগর গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দুর্বা ব্রহ্ম।
ছোট থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল শিক্ষিকা হবেন।সব বিষয়ে লেটার নিয়ে সুনীতি একাডেমি থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন।১৯৮২ সালে ন্যাশনাল স্কলারশিপও পান।আবার ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের সময় কলা বিভাগে দার্জিলিং জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।তারপর উত্তর বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এম এতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। কিন্তু তারপর আরও উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের পর কোনও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হতেই পারতেন তিনি।মেধা যে বেশ উচ্চ মাত্রাতে রয়েছে তার ভিতরে তা তার সব রেজাল্টই বলে দিচ্ছে। কিন্তু তিনি তারপরও আরও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের পথে পা মাড়াননি।কারন তাঁর কথায়,”আমার ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল তৃনমুল স্তরে পিছিয়ে পড়াদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তারে কাজ করা। “তাই সেই স্বপ্নেই চলছে তাঁর অন্যরকম লড়াই। ১৯৯৩ সাল থেকে শিলিগুড়ি জ্যোৎস্নাময়ী গার্লস হাইস্কুলে টানা সহ শিক্ষিকা হিসাবে দশ বছর কাজ করেন।এরপর ২০০৪ সাল থেকে রবীন্দ্র নগর গার্লস হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা।একেবারে পিছিয়ে পড়া মেয়েরাই এই স্কুলে পড়ে। সেই মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো তাঁর একটি স্যালুট জানানোর মতো কাজই বইকি।এই করোনা পরিস্থিতিতে যখন পিছিয়ে পড়া বহু মেয়ে ও তাদের অভিভাবক অসহায় তখন তাদের পাশেও তিনি থাকছেন তাঁর সাধ্য অনুযায়ী যদিও সেসব সংবাদ তিনি প্রচার করতে নারাজ।এই করোনা পরিস্থিতিতেও চলছে অনলাইনে তাদের স্কুল।বহু অভিভাবক সন্ধ্যেবেলা কাজ থেকে বাড়িতে ফেরেন।ফলে মোবাইলের অভাবে দিনে ক্লাস করতে না পারা অনেক ছাত্রী রাতের বেলা অনলাইনে ক্লাস করে। আর সেই দিনরাতের অনলাইন ক্লাস নিতে দুর্বাদেবী বা তাঁর অন্য সহ শিক্ষিকাদের কোনও ক্লান্তি নেই। পিছিয়ে পড়া এইসব মেয়েরা এই দুর্যোগের সময় যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে সেজন্যও দুর্বাদেবী তাদের নানাভাবে উৎসাহিত করে চলেছেন। মেয়েরা যাতে মনের দিক থেকে চাঙা থাকে সেজন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে, সেই গ্রুপে পড়াশোনার আলোচনা যেমন হচ্ছে তেমনই মেয়েরা তাদের সৃজনমূলক কাজ নৃত্য, সঙ্গীত,কবিতা পোস্ট করছে।এভাবে স্কুলকেই নিজের পরিবার, সমাজসেবার মন্দির হিসাবে দেখছেন এই প্রতিভাময়ী শিক্ষিকা দুর্বা ব্রহ্ম। তিনি বিশ্বাস করেন, মানব সম্পদ বিকাশের একমাত্র পথ শিক্ষা। মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তির যথাযথ বিকাশ ঘটাতে পারে একমাত্র শিক্ষাই।