বাপি ঘোষ ঃ “আঠারোশো কুড়ি সালের ছাব্বিশে সেপ্টেম্বর, /ঈশ্বরচন্দ্র জন্ম নিলেন,ছোট্ট সে এক ঘর।/আজকের এই মেদিনীপুর, জেলার সে এক গ্রাম,/ হুগলি জেলায় আগে ছিল–বীরসিংহ নাম।/ বাবা ঠাকুর দাস আর তাঁর মা যে ভগবতী, / বড়ো কষ্টের সংসার তাই বাড়ে যে দুর্গতি। / উপার্জনের পথটা খুঁজতে বাবা কলকাতায়,/ দুটাকারই মাইনেতে তাঁর চাকরি জুটে যায়।”
শুনলেনতো ছড়াটি? পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামতো সবাই জানেন। ভারতবর্ষে নারী শিক্ষার বিস্তার থেকে বিধবা বিবাহ প্রবর্তন, অসহায় দরিদ্র মানুষের সঙ্গে থাকা সর্বোপরি সমাজের সংস্কার করতে বিদ্যাসাগরের মতো মনিষী পৃথিবীর ইতিহাসে এক দৃষ্টান্ত। তিনি দয়ার সাগর নামেও পরিচিত ছিলেন।এই মনিষীকে শিশু কিশোরদের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছে দিতে ছড়ায় ছবিতে ঈশ্বরচন্দ্রের জীবন কাহিনী বইয়ের আকারে মেলে ধরলেন বাংলার বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুনির্মল চক্রবর্তী। শিশু সাহিত্যে ধারাবাহিকভাবে অসামান্য অবদানের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন সুনির্মল চক্রবর্তী। কলকাতার সন্তোষ পুরে তিনি এখন থাকলেও মাঝেমধ্যে শিলিগুড়ি আসেন।শিলিগুড়িতে তার শৈশব কেটেছে। প্রয়াত বিশ্ব বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সংস্পর্শে বেশ কয়েকবার এসেছেন এই প্রতিভাবান সাহিত্যিক।সত্যজিৎ রায়ের সংস্পর্শে আসার উল্লেখযোগ্য স্মৃতিও তিনি মেলে ধরেছেন খবরের ঘন্টার কাছে। সবটা জানতে হলে এই ভিডিওটি পুরো দেখুন।
তবে তার আগে জানানো দরকার,এই বার্ধক্যে পৌঁছেও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিশু সাহিত্যিক সুনির্মল চক্রবর্তী ভালো আছেন শুধু কাগজ কলম নিয়ে। এখনো তিনি একের পর এক বই প্রকাশ করে চলেছেন।এই মোবাইল ইন্টারনেটের যুগে যখন কাগজ কলম নিয়ে লেখালেখি বা প্রিন্ট মিডিয়াকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয়েছে তখন সুনির্মলবাবুর মতো অসাধারণ লেখকদের লড়াইকে অবশ্যই কুর্নিশ জানাতে হয়।
শিশুদের নিয়ে তিনি ভেবে চলেছেন সবসময়।অভিভাবকদের কাছে তাঁর আবেদন, আপনার সন্তানকে হাতে মোবাইল নয়,বই তুলে দেওয়ার অভ্যেস করুন। তাঁর দাবি,ছড়ায় ছবিতে বিদ্যাসাগর বইটি বাংলা ভাষায় প্রথম। বইটিতে একুশটি ছড়া রয়েছে বিদ্যাসাগরের ওপর।রাজ্য সরকারের স্কুল পাঠ্যসূচিতেও তাঁর কিছু বই ও লেখা পড়ানো হয় ছেলেমেয়েদের।
সবশেষে বিদ্যাসাগর বই থেকে আর একটি ছড়া উল্লেখ করে এই প্রতিবেদনের লেখা শেষ করছি।তবে বইটিতে বিদ্যাসাগরের মহানুভবতা, বিদ্যাসাগরের অসামান্য সব কাজ নিয়ে যেসব ছড়ার আকারে মেলে ধরেছেন লেখক তা এককথায় অনবদ্য বলতেই হয়,তবে শুনুন আর একটি ছড়া–
ছড়ার নাম, বাংলা ভাষায়
“বাংলা ভাষায় অ আ ক খ যদি জানতে হয়,/শিখতে তোমায় হবেই জেনো বর্ণ পরিচয়।/আঠারোশো পঞ্চান্নোয় প্রকাশ হল তার,/নীলমাধব মুখোপাধ্যায় টাকা দিলেন ধার।/সহজ কথা সহজ ভাষার সুন্দর-এ বই,/সব ছোটোরাই পড়ছে লিখছে করছে যে হইচই।/বোধোদয় আর কথামালা পড়েও তোমায় চিনি,/ বিদ্যাসাগর,তোমার কাছে বাংলা ভাষা ঋনী।/ তাঁর গদ্যেই ঝংকার ছিল ধ্বনির ছিল সুর,/ সেই সুরটাই ছড়িয়ে গেল অনেক অনেক দূর।/ এই সুরেতেই বাঁধা ছিলো তাঁরই গদ্যের প্রান,/ সুন্দর হয়ে উঠত লেখা বইত খুশির বান।”
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ——