ছবি আঁকলেই মন ভালো হয়ে যায় দেবমিতার

শিল্পী পালিতঃ শিলিগুড়ি দেশবন্ধু পাড়ার দেবমিতা দাশগুপ্ত ছবি আঁকতে ভালোবাসে। তাঁর অঙ্কন নিয়েই তাঁর লেখা আত্মকাহিনী—

যথারীতি আর পাঁচটা দিনের মত সন্ধ্যাবেলা বসেছিলাম বিধাতা নিয়ে কম্পিটিভ পরীক্ষার প্র্যাক্টিসে। হঠাৎ করে আমার মা আমার ঘরে এসে বললেন তোর জন্য একটা ভালো খবর আছে। খবরটা কী জানতে চাইলে মা বললেন—তোর যে সমস্ত আঁকা ছবি টেবিলের ওপর ছিল তার থেকে মা একটা আঁকা ছবি ফেসবুকে এ পোস্ট করেছেন, সেই আঁকা ছবি দেখে “বীণাপাণি শিল্পী দিদির খুব ভালো লেগেছে। তাই তিনি আমার জন্য কিছু লিখেছেন মেসেঞ্জারে। মেসেঞ্জারে মেসেজ টা পড়লাম আমার আঁকা ছবি দেখে দিদি আমাকে আরও উৎসাহিত করতে আমার আঁকার জীবন নিয়ে কিছু লিখতে বলেছেন। সত্যি কথা বলতে কী আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।, খুব অবাক হয়ে যাই এবং আনন্দিত হই। বাবা মা ছাড়া আমাকে কেউ এই ভাবে উৎসাহিত করতে পারেন। আর পাঁচটা শিল্পীর মতো আমিও একটু উদাসীন, অগোছালো। দিদির থেকে এভাবে উৎসাহ পাওয়াটা আমার কাছে একটা দারুন ব্যাপার। বীণাপাণি শিল্পী দিদির কথায় আমি কিছু লিখতে উৎসাহিত হয়ে বেশ কিছু ছবি একসাথে করে কিছু লিখতে উদ্যোগী হলাম ।

আমি শিলিগুড়ি দক্ষিণ দেশবন্ধুপাড়া নিবাসী এক মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র কন্যা। বাবা দেবাশিস দাশগুপ্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক। মা সুমিতা দাশগুপ্ত প্রাইভেট স্কুল শিক্ষিকা। একমাত্র সন্তান হবার কারণে আমি আদরের সাথে ও স্বাধীনভাবে মানুষ হয়েছি। ছোটবেলা থেকে আমার নিজের মনে আঁকতে খুব ভালো লাগতো। তাই আমাকে বাবা আমাদের বাড়ির কাছে এক দাদার কাছে আঁকা শিখতে ভর্তি করান। তখন থেকে আমার জীবনে শুরু হলো পড়াশোনার সাথে সাথে অঙ্কন শিক্ষা। পরবর্তী কালে আরও দুই জন শিক্ষকের কাছে অঙ্কন শিক্ষা নিয়েছি।আমার মা যৌথ পরিবারের মেয়ে হওয়ার দরুন অনেক ই‌চ্ছাই পূর্ণ করতে পারে নি। তাই তিনি চেয়েছিলেন আমি যেন আমার ইচ্ছামত সব শিক্ষা নিতে পারি। মার ঐকান্তিক ইচ্ছাতে আমি পঞ্চম শ্রেণি থেকে বেহালা বাজাতে শুরু করি। আমার স্কুলে (শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুল) অনেক বেহালা বাজিয়েছি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আঁকা ও হাতের কাজ করে প্রশংসা এবং পুরস্কার পেয়েছি। বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য মাঝে মাঝে বেহালা বাজনোতে বিরতি পড়লেও আঁকা কিন্তু আমি কোন পরীক্ষার কারণে বন্ধ করিনি। এভাবে আমি সব দিক বজায় রেখে রাষ্ট্রবিঞ্জানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও বি. এড. ডিগ্রী অর্জন করেছি।আঁকতে আমার ভীষন ই ভালো লাগে। আমি আঁকায় মাস্টার্স করেছি। আঁকা আমাকে পড়াশোনাতে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। কিছু ভালো না লাগলে, মন ভালো না থাকলে আমি আঁকি। মন তাতে ভালো হয়ে যায়। মন শান্ত হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি, পুরস্কারও পেয়েছি অনেক। আঁকার প্রতি আগ্রহটা আমাকে সব কাজে উৎসাহ জোগায়। ছোটবেলায় আমি পেন্সিল স্কেচ করতে সব চেয়ে বেশি পছন্দ করতাম। তবে বর্তমানে আমি পেন্সিল স্কেচের সাথে সাথে প্যাস্টেল রং, কালি দিয়ে স্কেচ, জল রং, প্রট্রেট, ক্যানভাস ওয়ার্ক, একর‍্যোলিক দিয়ে কাজ ইত্যাদি ইত্যাদি ধরনের আঁকার কাজ করি। এছাড়া বিভিন্ন ক্র্যাফ্র্ট এর কাজও করি যেমন প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ফুলদানি, সান্তাক্লজ, আইসক্রিমের কাঠি দিয়ে ফটো স্ট্যান্ড, পেপার দিয়ে উইন্ডোজ চেন, পেপার দিয়ে ওয়াল হয্যানগিং ইত্যাদি।আমি আলপনা দিতে ভালোবাসি ছোট থেকে। সরস্বতী পুজো, লক্ষ্মী পুজোতে বাড়িতে এবং স্কুলে আলপনা দিয়ে বেশ প্রশংসাও পেয়েছি ছোট থেকে। দুবছর ধরে আমি নিজের বাড়িতে আঁকার স্কুল করেছি। ছোট বাচ্চাদের আঁকা শেখাই। খুব ভালো লাগে। মনটা ভরে যায়। বর্তমানে ছোট বাচ্চাদের একটি স্কুলে পড়ানোর সাথে সাথে তাদের আমি আঁকাও শিখাই। ভবিষ্যতে আরো কিছু ভালো আঁকার, ওয়ার্ক শপ করা, এক্সিভিশনে যোগ দেওয়া এবং এক্সিভিশনে করার ইচ্ছা আছে।পরিশেষে বলি অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে আমার মতো অন্তর্মুখী মেয়েকে দিয়েও তুমি অনেক কিছু বলিয়ে নিলে। 🙏🙏🙏 দেবমিতা দাশগুপ্ত, দেশবন্ধু পাড়া, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং জেলা।