নিজস্ব প্রতিবেদন,শিলিগুড়িঃ সততা,কঠোর পরিশ্রম এবং মনে সদিচ্ছা থাকলে অনবরত চেষ্টার ফলে শিল্প-বাণিজ্যে সফল হওয়া যায়। অন্তত এমনটাই বিশ্বাস করেন শিলিগুড়ি ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া ফারাবাড়ি ভেল্কিপাড়ার তরুন গৌরপদ মন্ডল ওরফে সুজিত। ভেল্কিপাড়ায় একটি ব্যাগ কারখানা সফলভাবে চালিয়ে তিনি এলাকায় একটি উপমা হয়ে উঠেছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থানার দীঘা লাগোয়া গ্রামে জন্ম গৌরপদ মন্ডলের। তার বয়স এখন ৩৯। তার বাবা প্রয়াত শিবনারায়ণ মন্ডল ছিলেন কৃষক। বাবার সঙ্গে গ্রামের কৃষি জমিতে একসময় জমিতে হাল দেওয়া, বীজ রোপনের মতো কাজ চালিয়ে পড়াশোনা করতে হয় তাকে। ১৯৯৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৯৩ পেয়ে তিনি ভালো রেজাল্ট করেন। পড়াশোনার মাথা ভালো ছিলো। আরও পড়াশোনা তিনি চালিয়ে যেতে চাইলে আর্থিক সঙ্কট তীব্র বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পড়াশোনা নিয়ে এভাবে মতপার্থক্য তৈরি হলে তিনি বাড়ি ছেড়ে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় কখনও মিস্টির দোকান, কখনও হোটেলে কাজ করতে থাকেন। এভাবে ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত একটি নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ করেন। কিন্তু নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ করতে গিয়ে বারবার এদিকওদিক বদলি তার ভালো লাগেনি। তাছাড়া বেতনও তেমন দেওয়া হোত না। ফলে একদিন ভাবতে থাকেন, নিজে কিছু করতে হবে। এভাবে আর চলতে পারে না।
২০১২ সালে চলে আসেন শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি একতিয়াশালে রীতা নামে একজনকে ভালোবেসে বিয়েও করে নেন। আর তখন শুরু হয় আরও সংগ্রাম। নিরাপত্তা সংস্থার কাজ থেকে ইস্তফা দেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিলিগুড়ি জনতানগরে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু করেন ব্যাগ তৈরির কারখানা। একটি মেশিন, একজন মেশিনম্যান আর নিজে সহযোগী। হাতে পুঁজি বলতে নগদ ১৭০০ টাকা, কাঞ্চন পালিত নামে ব্যাগ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭৩৭৬ টাকা ঋন সহ আরও কয়েকজনের কাছ থেকে ঋন। এর আগে অবশ্য ২০১২ সালে শিলিগুড়ির একটি ব্যাগ কারখানায় টানা পাঁচ মাস ব্যাগ তৈরি ও সে ব্যবসা নিয়ে অনেক কিছু শিখে নেন কাজের মাধ্যমে। প্রথমে নিজের জনতানগর ব্যাগ কারখানায় দিনে ত্রিশটি ব্যাগ তৈরি শুরু করলেন। স্কুল ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, পাউচ ব্যাগ, অফিস ব্যাগ।এভাবে চলতে চলতেই জনতা নগর থেকে হায়দরপাড়া হয়ে ফারাবাড়িতে জমি কেনেন। সেখানেই এখন তার ব্যাগের কারখানায় কাজ করেন ১৬ জন কর্মী। আর সেখানে বিভিন্ন ডিজাইনের ব্যাগ উৎপাদন হয় দুশো থেকে আড়াইশোটি। বিভিন্ন ব্যাগের দোকানে তিনি ব্যাগ সরবরাহ করেন। এখন তার বাজারে পাওনা ১১ লাখ টাকা। এই সফলতার জন্য তাকে ভোর পাঁচটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত টানা পরিশ্রম করতে হয়েছে। তার স্ত্রীও তাকে সবসময় সহায়তা করেছেন। এখন তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতাও পালন করছেন। পিছিয়ে পড়া এলাকায় কারও মেয়ের বিয়ের জন্য তার কাছে সহায়তা চাইলে তিনি সহায়তা করছেন। আগামী ২২ আগস্ট তার পিতার মৃত্যু বার্ষিকীতে কুড়ি জন দুঃস্থ মহিলাকে শাড়ি বিতরনের কর্মসূচী নিয়েছেন। তাছাড়া সারদা শিশু তীর্থ স্কুলে ভালো ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা প্রভৃতির জন্য একশ ব্যাগ উপহার হিসাবে বন্টনের কর্মসূচিও নিয়েছেন। তার কারখানার কর্মীরাও কেও কোনও বিপদে পড়লে তিনি আছেন। সুজিত বলেন, কঠোর পরিশ্রম, সততা শিল্প বাণিজ্যে সফলতার চাবিকাঠি।