খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সংসার, ফাদার্স ডে-তে এক বাবার অন্য লড়াইয়ের কাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তিনি চলাফেরা করেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভাতা তিনি পান না। কষ্ট করেই তিনি ভ্যান চালান।সরকার ভাতা দিলো কি দিলো না, তাতে তার বয়েই গেলো। কষ্ট করে হলেও স্ত্রী সন্তানতো তাঁকে প্রতিপালন করতেই হবে। আসলে তিনি যে বাবা, মুখ বুজে তাই বহু বাবার মতোই তিনিও সংগ্রাম করে চলেছেন। রবিবার ফাদার্স ডে-তেও তাঁর সেই সংগ্রামে খামতি ছিলো না অন্যদিনের মতোই।
দু’পায়ে ভর করে ঠিকমত চলতে একেবারেই পারেন না। ভ্যান চালিয়েই দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। সংসারে অভাবঅনটনের মধ্যে যুদ্ধ করে চলছেন পুরাতন মালদার ভ্যান চালক নীরেন পাল । এখন তার বয়স ৫৫, এদিক ওদিক দৌড়েও প্রতিবন্ধী ভাতা মেলেনি। তবুও মাথা নোয়ান নি কারোর কাছে। রবিবার ফাদার্স-ডে তে এই ছবি ক্যামেরা বন্দি হয়েছে পুরাতন মালদা পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপল্লী এলাকায়। প্রতিবছরই ফাদার্স ডে এবং মাদার্স ডেতে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান হয় । কিন্তু নানান সংগ্রামের মধ্যে বেঁচে রয়েছেন কিছু মানুষ।
মালদার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপল্লী এলাকার বাসিন্দা নীরেন পাল অনটনের সংসারে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও বেঁচে থাকার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সোনাপল্লীর বাসিন্দা নীরেন পাল পেশায় ভ্যানচালক।তার পরিবারের সদস্য বলতে স্ত্রী রিনা পাল, দুই ছেলেমেয়ে খোকন পাল এবং মামপি পাল। দুই ছেলেমেয়েই এখন কিছু না কিছু রোজগার করে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে আট বছর আগে । আর ছেলে দিনমজুরি করে কিছু হলেও রোজগার করে।আর এসবের সবটাই হয়েছে তাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাবার জন্য।
মেয়ে মাম্পি পাল বলেন , জন্মের পর থেকেই বাবাকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখেছি। সেই কষ্ট নিয়ে ভ্যান চালিয়ে আমাদের মানুষ করেছেন। এখনো বাবা সেই কাজ করে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে বাবার বয়স হচ্ছে। প্রতিবন্ধী থাকা সত্বেও ভাতা মেলে নি । আমরা চাই বৃদ্ধ বাবাকে সরকার সাহায্য করুক।
গৃহবধূ রিনাদেবী বলেন, কোনরকমে সংসার চলছে । খুব কষ্ট করে ভ্যান চালায় স্বামী । দিনে হয়ত ১০০ থেকে ২০০ টাকার বেশী রোজগার হয় না। তাতেই একটু একটু করে সংসার চলছে । ছেলেমেয়েদের মানুষ করা হয়েছে । এখন বৃদ্ধ বয়সে প্রশাসনের সাহায্য চাই।
ভ্যানচালক নীরেন পাল বলেন, সাত বছর বয়সে অসুস্থ হওয়ার পর হঠাৎ করেই দুটি পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। তখন থেকে খুঁড়িয়ে হাঁটচলা শুরু । অর্থ নেই বলে চিকিৎসা আর হয়নি। তারপর বয়স হয়েছে। কোনরকমে সংসার চলছে। ভ্যান না চালালে কেউ খেতে দেবে না। প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও ভাতা মেলে নি। এখন শুধু সরকারি ভাতা পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছি। তবে কাজ না করলে সংসার চলবে না। তাই শত কষ্ট হলেও ভ্যান চালিয়ে সামান্য রোজগারটুকু করি। পুরসভা এবং প্রশাসন যাতে সহযোগিতা করে এখন সেই আশায় দিন গুনছি।