বাপি ঘোষ ঃ মাংসের ঝোল দিয়ে মুড়ি খেতে বসেছেন নাকি? না, না,ঘাবড়ে যাবেন না।হঠাৎ মাংসের ঝোল দিয়ে মুড়ি খাওয়ার কথা বলা হচ্ছে কেন,তাইতো? আসলে প্রসঙ্গটি তোলা হচ্ছে সচেতনতার জন্য। আমরা কেও চাই না আপনাদের অবস্থা চোপড়ার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহিলা আকলানি খাতুনের মতো হোক।রীতিমতো প্রান সংশয় হয়ে দাড়িয়েছিলো আকলানির।যদিও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ই এন টি বিভাগের প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো সহ সেখানকার সব চিকিৎসক, নার্স এবং অচিকিৎসকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এখন বিপদমুক্ত আকলানি।
কিন্তু মাংসের ঝোলের সঙ্গে মুড়ি খাওয়ার কি সম্পর্ক? হ্যাঁ, এবারে শুনুন। খাসির মাংসের ঝোলের সঙ্গে মুড়ি মিশিয়ে খাচ্ছিলেন আকলানি। তার মেয়ে শাহনাজ বেগম সেই মুড়ি খেতে দিচ্ছিল। একবার খাওয়ার পর দ্বিতীয়বার খেতেই ঘটে বিপত্তি। আকলানি গলার মধ্যে একটি অস্বস্তি অনুভব করতে থাকেন, বুঝতে পারেন গলার ভিতরে কিছু আটকে গিয়েছে। মুখে আঙ্গুল দিয়ে বমি করার চেষ্টা করেন, গোটা ভাত গিলে খান, কলা খাওয়ানো হয় কিন্তু তবুও গলার মধ্যে সেই অস্বস্তি যাচ্ছিল না। শেষে তাকে দৌড়ে যেতে হয় প্রথমে ইসলামপুর হাসপাতাল, সেখান থেকে কিশানগঞ্জ। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। শেষমেষ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে যোগাযোগ করতে হয়। সেখানকার ব্যতিক্রমী চিকিৎসক ডাক্তার রাধেশ্যাম মাহাতো পুরো টিম নিয়ে কাজে নেমে পড়েন এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পান, আকলানীর গলার মধ্যে একটি ধাতব তার আটকে রয়েছে। অপারেশন ছাড়া সেই তার বের করবার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু কাজ হয়নি। শেষে প্রায় এক ঘন্টা ধরে অপারেশনের পর গলার একেবারে ভিতরে আটকে থাকা সেই ধাতব তার বের করা হয়। ডাক্তার রাধেশ্যাম মাহাতো জানিয়েছেন, মুড়ি ভাজার সময় যে ঝাড়ু ব্যবহার করা হয় সেই ঝাড়ু বাধার জন্য এক ধরনের ধাতব তার ব্যবহার করা হয় গ্রামে। ভুলবশত সেই ধাতব তার ঝাড়ু থেকে খুলে গিয়ে মুড়ির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। আর সাবধান ভাবে সেই মুড়ি না দেখে শুনে খেতে গিয়ে বিপত্তি ঘটে আকলানীর। মুড়ির মধ্যে থাকা সেই ধাতব তারটি তার গলায় চলে যায়। এখন আকলানি বিপদমুক্ত, তবে অপারেশন না হলে তার জীবন সংশয় হতে পারতো। এই কাজে ডাক্তার রাধেশ্যাম মাহাতোকে যারা সহযোগিতা করেন তারা হলেন ইএনটি বিভাগের অধ্যাপক সৌমিক দাস, ডাক্তার গৌতম দাস, ডাক্তার মনি দীপা সরকার, ডাক্তার সৌমেন্দু ভৌমিক, ডাক্তার সন্দীপ ঘোষ। অপারেশন থিয়েটারের ডাক্তার অভিষেক গাঙ্গুলী, নার্স বিনতা, শালিনী, রুথ গুরুং সহ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের অন্যান্য কর্মীরা এই ঝুকিপূর্ণ অপারেশনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
চিকিৎসক ডাক্তার রাধেশ্যাম মাহাতোর নেতৃত্বে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বিগত বেশ কিছুদিন ধরে এইরকম বিরল এবং কঠিন সব ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন হচ্ছে। ফলে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচছে। বিশেষ করে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচিয়ে নজির সৃষ্টি করছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগ। সেখানে যেসব কাজ হচ্ছে তা বেসরকারি যেকোনো হাসপাতালকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতোই। এদিন আকলানির মেয়ে সহ সমগ্র পরিবার ইএনটি বিভাগের সমস্ত চিকিৎসক এবং কর্মীদের অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —-