নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বাগোড়াতে একশ বছরেরও অনেক বেশি সময় ধরে চক্রবর্তী জমিদারবাড়ির পুজো হয়ে আসছিল।দেশ ভাগের সময় সব ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। চক্রবর্তী জমিদার পরিবারের সদস্যরা প্রায় সকলে ওপার বাংলা ছেড়ে এপার বাংলায় চলে আসেন।বন্ধ হয়ে যায় পুজো। বহুদিন বন্ধ হয়ে থাকার পর আবার সেই পুজো শিলিগুড়ি দেশবন্ধুপাড়ার অবন ঠাকুর সরনির বাড়িতে শুরু করেছেন পরিবেশবিদ দীপজ্যোতি চক্রবর্তী। এবারে সেই ঐতিহ্যের পুজো চতুর্থ বছরে পা দিচ্ছে। পুজোর মূল বিষয় হল, নিষ্ঠা। পুজো করেন শিলিগুড়ির বিখ্যাত সংস্কৃতজ্ঞ- পন্ডিত শ্রীজীব ভট্টাচার্য। প্রতিমা এবারেও এক চালা,ডাকের সাজের।প্রতিমা তৈরি করছেন মৃৎ শিল্পী সুশান্ত পাল। মন্ডপ সজ্জায় থাকছেন শিল্পী সৈকত দত্ত। আর ঢাক আসছে মালদা থেকে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মন্ডপ চত্বরে মহিলাদের ধুনুচি নাচের ব্যবস্থা থাকছে। চক্রবর্তী-জমিদার পরিবারের উত্তরসূরী দীপজ্যোতি চক্রবর্তী তার স্ত্রী শ্রাবনী চক্রবর্তী এবং পুত্র রিমিককে নিয়ে এখন পুজোর প্রস্তুতিতে ডুব দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে রথ যাত্রার দিন থেকেই এ পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বাগোড়াতে বিরাট জমিদার পরিবার ছিলেন চক্রবর্তীরা।দীপজ্যোতিবাবুর বাবার নাম অনিল চন্দ্র চক্রবর্তী। তার ঠাকুরদার নাম ক্ষিতীশ চন্দ্র চক্রবর্তী। আর প্রপিতামহের নাম ভৈরব চন্দ্র চক্রবর্তী। সেখানে বিরাট করে দুর্গা পুজো হতো।দীপজ্যোতিবাবুর প্রতিবেশী দেশবন্ধুপাড়ার মলিন ঘোষ কিশোর বয়সেও বাংলাদেশে এপুজো দেখেছেন।আজ তার বয়স ৬৪। চল্লিশ বছর আগে তিনি বাংলাদেশের ঢাকা ছেড়ে এসেছেন। তিনি বলেন, চক্রবর্তীদের জমিদার বাড়ির পুজো বিরাট আয়োজনে হোত। সে পুজোয় মহিষও বলি হোত।পুজোর কদিন প্রতিদিন কমপক্ষে চার হাজার লোক প্রসাদ পেতেন। সে বাড়িতে ত্রিশ ফুট উচ্চতার নাট মন্দির আজও রয়ে গিয়েছে। বাড়িটি ছিল দোতলা। আজ সে দালান বাড়ি ভগ্ন স্তূপে পরিণত। বাড়ির মধ্যে জঙ্গল গজিয়ে গিয়েছে। গ্রামের মানুষের কাছে এখনও বিরাট শ্রদ্ধা চক্রবর্তী পরিবারের প্রতি। তারা সেখানে কেও না থাকলেও শ্রদ্ধা রয়েছে সবসময়। কেননা চক্রবর্তী জমিদারেরা এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে বিরাট ভূমিকা নেন। তারা স্কুলও তৈরি করে দেন।আজ সে স্কুলে তিন- চার হাজার ছাত্র পড়ে।
সেই ঐতিহ্যের পুজোয় গতবছর এসেছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। সব্যসাচী চক্রবর্তীর স্ত্রী মিঠু চক্রবর্তী গতবছর প্রতিমা বিসর্জনের সময় ধুনুচি নাচ নেচেছিলেন। পুজোয় এসেছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার চন্দন সেনের মা। এবারে পুজোর থিম গ্রাম বাংলা,জানালেন দীপজ্যোতিবাবু। তিনি আরও জানালেন, প্রতিদিন পুজোয় ২৫০ জন প্রসাদ গ্রহন করবেন। সব আত্মীয়রা চলে আসেন।পুজো হয়ে ওঠে এক মিলনমেলা। কলকাতা থেকে গুনীজনেরা এবারেও আসবেন। তবে সেসব গুনীজনের নাম এখনই বলতে নারাজ দীপজ্যোতিবাবু। মহা ষষ্ঠী থেকে শুরু হয় ভোগের প্রসাদ বিতরন। দশমীতে আমিষ খেয়ে নিরামিষ ভঙ্গ করা হয়। মন্ডপে এবারে এই পুজোর ওপর তৈরি হওয়া লোকসঙ্গীত বাজবে। তার সঙ্গে খবরের ঘন্টার প্রয়াসে তৈরি হওয়া বীণাপাণি শিল্পীর কন্ঠে গাওয়া সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের দূষনের ওপর সচেতনতার সঙ্গীত বাজবে।