নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ একুশে মেয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা শহিদ দিবস। এই বিশেষ দিনে অমর একুশে স্মরণে সর্বত্র বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। বাংলা ভাষা চর্চার জন্য জোরদার সব দাবি উঠবে। কিন্তু তারপর আবার যেন বিষয়টি থিতিয়ে যাবে। অথচ শিলিগুড়ি মহকুমার শিবমন্দির এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত কিছু বয়স্ক মানুষ নিজেদের পেনশনের টাকায় বাংলা ভাষা চর্চার জন্য প্রতিদিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু ভাষার চর্চা নয়, বাংলার বিভিন্ন মনীষীর জন্ম ও প্রয়াণ দিবস নিয়মিত পালন করে তারা এলাকায় নজিরও তৈরি করছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু,কাজী নজরুল, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিদ্যাসাগর,শরৎ চন্দ্র বসু,বঙ্কিমচন্দ, রামমোহন, জীবনানন্দ দাশ— বাংলার বিভিন্ন মনীষীর জন্ম দিবস পালনের সঙ্গে সঙ্গে তারা এ নিয়ে ক্রোড়পত্র বের করছেন। আর তা প্রচার করে যাচ্ছেন বিভিন্ন মহলে।
শিব মন্দিরে বাড়ি সজল কুমার গুহের। তিনি আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমিতির স্থানীয় সম্পাদক। তার সঙ্গে রয়েছেন সহ-সম্পাদক অনিল সাহা। সজলবাবু ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী আর অনিলবাবু রাজ্য সরকারের খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তাদের সঙ্গে রয়েছেন শিক্ষক আশীষ ঘোষ সহ আরো অনেকে। পেনশনের টাকায় তারা বাংলার মনীষীদের জন্ম ও প্রয়ান দিবস পালনের অনুষ্ঠান করে যাচ্ছেন নিয়মিত। সজলবাবু বলেন, মনীষীদের স্মরণ করা প্রত্যেকের কর্তব্য। প্রত্যেকের বাড়িতে অনুগ্রহ করে অভিভাবকরা যদি মনীষীদের ছবি রাখেন এবং ছেলেমেয়েদের বাংলা ভাষার চর্চা করতে পরামর্শ দেন তবে অনেক উন্নতি হবে পরিবেশের। এই ভাষার মাসে এটা তাদের বিশেষ আবেদন। সজলবাবুরা বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসে নিয়মিত যান। সেখানে গিয়ে তারা ত্রিভাষা সূত্র মেনে সাইনবোর্ডে হিন্দি ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবি করছেন। তাদের দাবি মেনে ইতিমধ্যে সি পি ডব্লিউ ডি, প্রতিরক্ষা দপ্তর, আইওসি ত্রিভাষা সূত্র অনুযায়ী হিন্দি ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলা ভাষায় সাইনবোর্ড লিখেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, প্রতিদিন মাতৃভাষার জন্য তাদের লড়াই চলছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন সজলবাবু। তার বক্তব্য, বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার সম্মান দিতে হবে। একই সঙ্গে একুশে মে এর পাশাপাশি ১৯ মে ভাষা শহীদ দিবস পালনের জন্য তিনি সর্বত্র প্রচার করছেন। এবারে ২১ মে পালনের জন্য সজলবাবু যাচ্ছেন পুরুলিয়ায়। তাদের আর একটি টিম ইতিমধ্যে বাংলাদেশে চলে গিয়েছে। সজলবাবু, আশিষবাবু, অনিলবাবুরা বলেন, এই প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষার চর্চা বাড়িয়ে তুলতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।বাংলা পৃথিবীর একটি অন্যতম মিষ্ট ভাষা।বাংলায় লেখা জনগণমন অধিনায়ক পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি জাতীয় সঙ্গীত। এই ভাষার চর্চার মাধ্যমেই প্রথম অন্ধকারাচ্ছন্ন পরাধীন ভারতে রামমোহন,বিদ্যাসাগর,রবীন্দ্রনাথ,স্বামী বিবেকানন্দ,নেতাজি,বঙ্কিমচন্দ্ররা রেনেসাঁ এনেছিলেন। তাই এসময় বলুন,আমার রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। এই মাতৃভাষা শুধু একুশে নয়,প্রতিদিন চাই।