শিল্পী পালিত ঃ আজ খবরের ঘন্টার ওয়েবপোর্টালের আত্মকথায় লেখিকা মালা মুখোপাধ্যায়ের কথা মেলে ধরা হলো–
“খবরের ঘন্টা” থেকে বীণাপাণি আমাকে জানিয়েছেন আমার সম্পর্কে কিছু লিখতে।আমি খুব খুশি হয়েছি।আমি এই বছর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় অশান্ত কার্গিল উপন্যাস প্রকাশ করেছি।এই উপন্যাস আমার প্রথম উপন্যাস।এটি একটি গবেষণা মূলক উপন্যাস।প্রথমে আমি আমার টাইমলাইনে লিখি গতবছর আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে। আমার ফেসবুকে ভীষণ ভাবে সাড়া ফেলে এই লেখাটি।
এক একদিন লিখতে লিখতে ভোরবেলা হয়ে যেতো।আমার টাইমলাইনে পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের ডেলি প্যাসেঞ্জাররা খুব আগ্রহ সহকারে পড়তেন।সঙ্গে সঙ্গে আমার অনেক ফলোয়ার হয়ে গেল। বর্তমানে প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি। সকলকে আমার শুভকামনা জানাই।
দেশ বিদেশের অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যেতো।এই লেখা আমাকে অনেক সাহস জুগিয়েছে। অনেক কিছু পড়ে ,জেনে লিখতে হয়েছে।আর আছে আমার নিজের অভিজ্ঞতা।
আমি পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার কাছে লোহারুন্দী গ্রামে জন্মেছি। আমাদের গ্রাম বাংলার বেশির ভাগ ছেলেরা ডিফেন্স লাইনে যায়।
কখনো যুদ্ধ লাগলে তাদের বাড়ির কি অবস্থা হয় তা আমি প্রত্যক্ষ ভাবে দেখেছি। সেই বেদনা থেকে আমার লেখা এই উপন্যাস।
এখানে বার বার প্রশ্ন করা হয়েছে ,ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ কেন মেনে নেওয়া হলো?
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস বলে, এই জন্যই কি আন্দোলন? এইজন্যই কি তাঁরা নিজেদের জীবন বলি দিয়েছেন?
কী মর্মান্তিক সেই তাড়া খাওয়া অসংখ্য ভদ্র পরিবারের শরনার্থী হয়ে থাকা!
যার ফলে আজো মানুষ ভুগছে কার্গিল নিয়ে।যা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত একটা যুদ্ধক্ষেত্রের।বর্তমান কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে বা বিপক্ষে লেখা নয়।এ লেখা আমার , আপনার সকলের মনের কথা।এই লক্ ডাউনে অনেকেই বইটা চাইলেও পৌঁছাতে দিতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে।একটি রেলস্টেশনের চায়ের দোকানে আড্ডার মাধ্যমে উঠে এসেছে এই সমস্ত কাহিনী। অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায়। সকলের বুঝতে কোনো অসুবিধা হবে না।
আমার ছোট থেকেই লেখার প্রতি ঝোঁক ছিল।স্কুল ম্যাগাজিনে প্রথম গল্প লিখি।আমার স্কুলের নাম –বনয়ারিবাদ মহারাজার হাই স্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক) মুর্শিদাবাদ।ওখান থেকে পিওর সাইন্স নিয়ে পাশ করে কলকাতা আসি অঙ্ক অনার্স নিয়ে পড়তে। যোগমায়া দেবী কলেজের ছাত্রী আমি। ভবানীপুর,হাজরা।
সেই গ্রাম থেকে এসে এতো বড়ো কলেজে পড়া, নানান অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমার জীবন যাপন।
“যা দেখি নতুন লাগে।”
তারপর সংসার যাত্রা—-আবার নতুন করে ফিরে আসা লেখালেখির জগতে ২০১৯ এ।অবশ্য মাঝে মাঝে অনেক পত্রিকা তে ,ম্যাগাজিনে আমার লেখা ছোট গল্প প্রকাশিত হয়েছে।
সময়ের অভাবে অনেক জায়গায় পাঠাতে পারি নি। এখন তো খুব সুবিধা লেখা পাঠানোর।
এখন এই স্মার্টফোনের জমানায় আমি শুরু করলাম প্রথম ছোটো করে লেখা। কারণ এখন খাতা পেন ধরি না। এখানেই লিখি। এখান থেকেই প্রিন্ট আউট। খুব সুবিধা।একে একে আমি প্রচুর ছোটোগল্প লিখেছি। দুটি উপন্যাস আরো লিখলাম। ঈশানী নদীর বাঁকে উপন্যাসটির প্রথম খন্ড শেষ। দ্বিতীয় খণ্ড শুরু হয়েছে।
মাঝে মাঝে অনেক কবিতা লিখছি।এখন ঘরের কাজ সকালে করি।বিকেল পাঁচটার পর লিখতে বসি।তাও লেখার মাঝে মাঝে উঠতে হয়।
কিছু আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত আছি।তিনদিন লিখি। তিনদিন পড়াই। বাড়িতেই পড়াই। লক্ ডাউনে দু’মাস বন্ধ ছিল।ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ছাত্রীদের এই মাস থেকে পড়াচ্ছি অঙ্ক । অঙ্ক বোঝাতে ভালো লাগে।আমার ছাত্র ছাত্রীরা খুব ভালো বাসে আমাকে। আমি মারি না।যতক্ষণ না বোঝে আবার ভালো করে বোঝাবার চেষ্টা করি।
আমি মনে করি বুঝতে না পারাটা তাদের অক্ষমতা নয়।
ছাত্র ছাত্রীদের না বুঝতে পারাটা শিক্ষক শিক্ষিকার অক্ষমতা।
তবে টিভি দেখাটা ছাড়তে হয়েছে।লেখার সময় আমার অবসর সময় থেকে নেওয়া।তাতে দু:খ নেই।খবর এই নেট থেকে পেয়ে যায়।আর জঘন্য সিরিয়াল (কয়েকটি বাদ দিয়ে) দেখা থেকে নিজেকে মুক্তি দিয়ে খুব ভালো আছি।
সকলে ভালো থাকবেন।
আমরা এই করোনা যুদ্ধ থেকে ঘরে বসে লড়াই করে ঠিক জয়ী একদিন হবোই। আমি আশাবাদী।
আমি মালা মুখোপাধ্যায়।(লেখিকা)
১২.৬.২০২০.