
শিল্পী পালিত ঃ নিজের সৃজনমূলক কাজ থেকে শুরু করে পর্যটনের নতুন আইডিয়া হিলিং ভিলেজ নিয়ে লিখেছেন প্রলয় বনিক—–

খুব ছোটবেলা থেকেই মডেলা কেয়ার টেকার স্কুলে পড়াশোনা করেছি। আমি প্রলয় বণিক। শিলিগুড়িতে থাকি।সে সময় যোগাসন শিখতাম, আঁকা শিখতাম। স্কুলের স্পোর্টসে অংশগ্রহন করতাম। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। যোগাসনেও পুরস্কৃত হয়েছিলাম। গানের প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিল। গীটার বাজাতাম। ছবি আঁকতে এখনও ভালবাসি।তারপর ইগনু থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশকরি। ইতিমধ্যে ব্যঙ্গালোরের “ স্কুল অফ আর্ট এণ্ড ফটোগ্রাফিতে” ২০০৯ সালে একটা কোর্স করেছিলাম। আমার শিক্ষক শান্তনু পাল আমার স্কুল জীবনে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করেছেন। তার পরে ভর্তি হই কলকাতায় মধু সরকারের “ ন্যাশনাল একাডেমী অফ ফটোগ্রাফিতে ( ন্যাপ )”। তিন বছর ক্লাস করেছি, কাজ শিখেছি। বাইরে ফটো শ্যুট করার নানান কৌশল ও তার তত্তাবধানে শিখেছি। ওড়িশার নানান জায়গায়, বেনারসে, নাগাল্যান্ডে, মাঝে মাঝে ঋতু অনুযায়ী ফটোগ্রাফির কর্মশালা চলত আমি সব জায়গায় যেতাম শেখার আগ্রহে। কলকাতা শহরের অলি গলিতে , কুমোরটুলিতে, গঙ্গার নানান ঘাটের দৃশ্য, ইছামতীর দশমীর প্রতিমা ভাসানোর দৃশ্যের ছবি তোলার কায়দা ইত্যাদি মধু স্যারের কাছ থেকেই শেখা। প্রতিবছর নন্দন প্রেক্ষাগৃহে ওয়ার্লড ফটোগ্রফিডেতে ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন অনুষ্ঠিত হত। আমার ছবিও প্রদর্শিত হওয়ার জন্য প্রতিবারই মনোনীত হত। একবার এক আর্মি অফিসার আমার তোলা সম্পূর্ণ কাঞ্চনজঙ্ঘার একটি ছবি কিনে নিয়ে যান। ন্যাপের সাথে সাথেই “ সিকিম মণিপাল ইউনিভার্সিটি” থেকে ফটোগ্রাফি কোর্স করি। এই ছবি তোলার নেশায়এরপর শিলিগুড়িতে পাহাড়ে, শান্তিনিকেতনে বাউলদের আখড়ায় গানের টানে ও ছবি তোলার জন্য, কুম্ভ মেলায়, গঙ্গাসাগর মেলায় ঘুরে ছবি তুলতাম। মনটা আমাদের বাড়ীর গুরুদেবের পায়ে যেন লুটিয়ে পড়তে চাইল। দীক্ষা নিয়ে নিজেকে সঁপে দিলাম তাঁর পায়ে , তুমিই আমার মা, বাবা, বন্ধু, সখা, তুমি আমার সব কিছু। পথ চলার আনন্দে ঠাকুর মহারাজকে প্রণাম জানাই “ জীবন রথের হে সারথি , আমি নিত্য পথের পথে, পথে চলার হলো নমস্কার।” শিলিগুড়িতে একটা ট্রাভেল এজেন্সি খুললাম। নাম দিয়েছিলাম “ ট্রাভেলার্স বে” । মন ভরল না। কারন আমার ঘোরা হয় না। এরই মধ্যে পেলাম আমার মনের মত কাজ। “ হেল্প ট্যুরিজম” একটা একটা বেশ নামী সংস্হা সেখানে ফরেন ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ নিয়েছি।এখানে নানান ট্যুর হয়। “ লোকাল বার্ডিং ট্যুর”, “ বাটার ফ্লাই ট্যুর “ , “ ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুর” । ট্রেকিং এ নিয়ে যাই যেমন ‘ সান্দাকফু ট্রেকিং’ , ‘ গোচালা রাউন্ড ট্রেক’ , ‘ ঝোংরি ট্রেক, ‘। ‘ মানতাম, জংগু, কিংসলেক ট্রেক এগুলো কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্কের আন্ডারে পরে। পৃথিবীর নানান দেশের মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরী হয় এই কাজের মাধ্যমে। পুণের এক পয়ষট্টি বছর বয়সের মানুষের আমার প্রতি স্নেহ ভালবাসা আজও আমাকে আপ্লুত করে। আজও নিয়মিত খোঁজ নেন আমার। এমন অনেক মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছি । এগুলি আমাকে শক্তি দেয়। প্রকৃতির উজার করা সৌন্দর্যকে আনন্দের সাথে যেমন উপভোগ করি তেমন ক্যামেরা বন্দীও করি। করোনা পরিবেশের জন্য এতদিন সমস্ত কাজ বন্ধ ছিল। এখন “ হেল্প ট্যুরিজম” নুতন চিন্তাধারায় কাজ করতে চাইছে। নামকরণ করেছে “ হিলিং ভিলেজ”। পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে প্রকৃতির সাথে কয়েকদিন কাটানো। গাছ, পাখি, ঝর্ণা, পাহাড় এদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করা। এদের সাথে একাত্মতা তৈরী করা। রূপ, রস,শব্দ,গন্ধ, স্পর্শ, আমরা যে যে ইন্দ্রিয় দিয়ে আস্বাদন করি তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ককে নিবিড় করে দেখা। এতে শারীরিক ও মানসিক দুয়েরই সুস্হতা বজায় থাকবে। এমন সুন্দর উদ্যোগে সামিল হতে চাইছেন অনেকেই। আমিও খুবই আগ্রহী এই কাজে।( কৃতজ্ঞতা ঃ কবিতা বনিক)