নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়ি ঃঃ সেখানে রয়েছে হালকা সব আলো। সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ইলেকট্রো থেরাপির মেশিন। মেশিনে থেরাপি শুরু হতেই মিউজিক সিস্টেমে পুরনো দিনের কালজয়ী সব গান বাজতে থেকে। ব্যথা নিয়ে আসা রোগীর যন্ত্রণা কমাতে এক থেকে দেড় ঘন্টা ধরে চলে বিভিন্ন পর্বের থেরাপি। সঙ্গে শোনানো হয় গান। আর তাতেই ধীরে ধীরে কমে আসছে রোগীর ব্যথা। শিলিগুড়ি কলেজ পাড়ায় এ এক অন্যরকম থেরাপি কেন্দ্র খুলেছেন ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসক ডাঃ সৌরভ পাল।
রেল ঠিকাদার পিন্টু চৌধুরী বেশ কিছুদিন ধরে ফ্রোজেন সোল্ডার ও আর্থাইটিসের ব্যথায় ভুগছিলেন। তিনচার মাস ধরে এদিকওদিক থেরাপি করিয়েছেন। কাজ হয়নি। শেষে ডাঃ সৌরভ পালের কাছে গেলে তার ব্যথা হাওয়া হয়ে যায়। পিন্টুবাবু বলেন, সৌরভবাবুর এখানে পরিবেশ বেশ ভালো। ডাক্তারবাবু আন্তরিকও। গানের সুরের সঙ্গে থেরাপির তুলনা হয় না। ব্যবসায়ী বিপ্লব ঘোষ জানালেন, তার বাম কাঁধেে তিন মাস ধরে খুব ব্যথা ছিলো। হাত নাড়াতে পারছিলেন না। ফিজিওথেরাপিস্ট ডাক্তার সৌরভ পালের কাছে সাত দিন এসেই তার ব্যথা কমতে থাকে।
স্পন্ডালাইটিস সহ অন্যান্য শারীরিক ব্যথা মানুষের ক্রমশ বাড়ছে। কিভাবে কমবে ব্যথা, তারজন্য মানুষ এদিকওদিক ছুটছেন। অনেকে দক্ষিন ভারতে চলে যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। অথচ শিলিগুড়িতেই সারছে অনেক ব্যথা। ডাক্তার পাল বলেন, আজকাল অনেকে ঘাড় গুঁজে মোবাইল ব্যবহার করেন। তার পাশাপাশি অনবরত কম্পিউটার ব্যবহার আছে। তারপর অনবরত বাইক বা স্কুটি চালান। ফলে হাতে,ঘাড়ে,কোমড়ে ব্যথা বাড়ছে। বিদেশেতো সাত বছরের শিশুরও সারভাইকাল স্পনডোলাইসিস দেখা যাচ্ছে। আগে কিন্তু এমন ছিলো না। এখন লাইফ স্টাইল চেঞ্জ হতেই এসব রোগ বাড়ছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাতেও আধুনিকতা এসেছে। একদিকে ম্যানুয়াল থেরাপি মানে ব্যায়াম। অন্যদিকে ইলেকট্রোথেরাপি। মেশিনের মধ্যে আলট্রাসাউন্ড, স্টিমুলেটর মেশিন সহ আরও অনেক মেশিন এসেছে।
ডাক্তার পাল এসবের সঙ্গে তার ব্যথা কমানোর চিকিৎসায় জুড়েছেন সঙ্গীত। তার কথায়, গান অনেকটাই ওষুধের মতো কাজ করে। ব্যথাটা একটা স্ট্রেস,একটা চাপ। সেখানে পুরানো দিনের কালজয়ী রিদমের গান চাপ কমাতে সাহায্য করে রোগীর মনে। অবসাদ বলুন আর উদ্বেগ বলুন সেসব দূর হয় রোগীর মনে। একটা রিল্যাক্সেসেশন তৈরি হয় রোগীর মনে। তার সঙ্গে থেরাপি চলতে থাকে। ফলে ব্যথা বিদায় করার কাজ সহজ হয়।
ডাক্তার পাল বলেন, মানুষের ব্যথা দূর করতে পারলে তার ভালো লাগে। অনেক বয়স্ক মানুষ, যারা তার কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা বা থেরাপি নিতে পারেন না, তাদের বাড়ি গিয়েও তিনি থেরাপি করেন। সবচেয়ে বড় কথা, কর্মচারীর ওপর নির্ভর না করে ডাক্তার পাল নিজে হাতে সব থেরাপি করেন। সকাল আটটা থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত প্রতিদিন চলে তার ব্যথা কমানোর এ এক অন্যরকম কাজ। শিলিগুড়ি কলেজপাড়ায় বয়েজ হাইস্কুলের উত্তরপূর্ব কোণে তার ওই ব্যথা নিরাময় কেন্দ্রে রোগীর ভিড় এখন ক্রমশ বাড়ছে। শিলিগুড়ির বাইরে থেকেও অনেকে এখন সেখানে ব্যথা কমাতে আসছেন। ডাক্তার পালের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর– 9434196798