শিল্পী পালিত ঃ সঙ্গীত, নাট্য চর্চা, লেখালেখি, রান্নাবান্না সবনিয়েই এক প্রতিভার বিচ্ছুরন মিলি ভট্টাচার্য। বাড়ি তাঁর শিলিগুড়ি প্রধাননগরে। আত্মকথায় পড়ুন তাঁর কথা —
মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্ম আমার। বাবা , মা দিদি , দাদার উপছে পড়া স্নেহ শাসনে পরিপুষ্ট শৈশব। জ্ঞান হওয়া ইস্তক কানে শুনেছি সুধারস। কখনো মায়ের সুধাকণ্ঠে, কখনো দিদি দাদার সুরের ঝর্ণাধারায় নিত্য স্নান l
আমাকে ঘুম পাড়াতে হতো, কোলের মধ্যে নিয়ে, আমার ফুলো ফুলো গালের উপর নরম গালের ছোঁয়া দিয়ে আর ” ও তোতা পাখিরে ” গান শুনিয়ে !
সেই আদি শৈশব থেকেই দাবী…. ঘুমপাড়ানিয়ার কণ্ঠ সুরেলা হতে হবে l
শুনেছি, একদিন দিদির এক প্রিয় বান্ধবী শখ করে ঘুমপাড়ানিয়ার ভূমিকা পালন করতে গিয়েছিলো….. কিন্তু, সেদিনের সেই শিশুকন্যা ঘুমোই নি l
চোখ পিটপিট করে, মুখ দিয়ে আওয়াজ করে বেসুরো গানের প্রতিবাদ করেছিল l
এই হেন ‘আমি ‘ সুর আর সাহিত্যকে সঙ্গী করে বাল্য থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিলাম এক সময়েl
পড়াশোনায় সেরা বলে একটা প্রচ্ছন্ন অহং বোধ ছিল কিছুটা l
কিন্তু, কি আশ্চর্য্য, মেধাবী সহপাঠীরা যখন প্রাণের বন্ধু হয়ে গেলো…. ভালোবাসা, আন্তরিকতা এসে সেই অহং বোধকে চূর্ণ করে দিলো l
চিরকাল ই পাঠ্য বইয়ের চেয়ে বেশী পড়েছি নানা স্বাদের, নানা ভাবের গল্পের বই ! বলতে দ্বিধা নেই, দশম শ্রেণীতেই পাড়ার সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারের প্রায় 70 শতাংশ বই পড়া হয়ে গেছিলো l
পেয়েছিলাম শ্রেষ্ঠ পাঠকের অভিধাl
তবু অনন্ত তৃষ্ণা….. সুরের আর সাহিত্যের l
বিয়ের পর প্রেমে পড়লাম ঘরকন্না আর রান্নাবান্না র l
হ্যাঁ, রান্না করা আমার passion, এটাও গান আর লেখালেখির মতোই আমার কাছে আরো এক creative zone l
21 বছর যাবৎ মেতে আছি ছাত্রছাত্রী গড়ার কাজে l.. আমি একজন আনন্দিত গর্বিত শিক্ষক l
সংগীত থেকে, সাহিত্য থেকে, পরিবারের সুসংস্কৃতি থেকে, সর্বোপরি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কুল থেকে যে ঐশ্বর্য্য কুড়িয়েছি, আজ তা দুহাত দিয়ে, মনপ্রাণ দিয়ে বিলিয়ে দিই আমার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে l
পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে গান, আবৃত্তি, নাটকচর্চা আমার জীবনচর্চার অঙ্গ, রসদ ও বটে l
আমার ছাত্রছাত্রীরা আমার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের শরিক, বন্ধু, হাতিয়ারও বটেl
ছড়া গান থেকে শুরু করে ব্রতচারী, দেশাত্ববোধক, প্রকৃতি পর্যায়, ভজন, পরিবেশ সচেতনতার গান ওদের কাছে তুলে ধরি ছন্দ সুরে, ওরা আনন্দ নিষ্ঠায় সেই পাঠ নেয় l
বিভিন্ন গল্প লিখে নাটক করাই বর্তমানে, আমার রচনা ও নির্দেশনায় ওরা মঞ্চস্থ করেছে….. মুক্ত শৈশব , এবং মহাত্মা l
আমি ব্যক্তিগতভাবে শিলিগুড়ির সৃজন সেনা নাট্য গোষ্ঠির সাথে যুক্ত l
তাঁদের নিবেদিতা নাটকে আমার প্রথম মঞ্চঅভিনয় l
এর আগে সংগীত পরিবেশন করতেই মঞ্চে উঠতাম l
গান শুনি, গান গাই, পড়ি, কখনো কখনো লিখি, সাধ্যমতো আর্তের সেবা করি…. এই সবকিছু নিয়েই আমি…. সামান্য আমি l
আমার ছোটো ঘরকন্নায় আলো হয়ে, ভালোবাসা হয়ে, আশা হয়ে, প্রেরণা হয়ে যাঁরা থাকেন…. তাঁরা হলেন আমার স্বামী, আমার একমাত্র পুত্র, আমার দাদা দিদি, আমার স্বর্গীয় মা বাবা রা…. যাঁদের দেখানো পথ আজও আদৃত আমার কাছে l
আমার ঘরকন্নার অঙ্গন পেরিয়ে যে উদার উন্মুক্ত ক্ষেত্র, সেখানে আছেন আমার অগণিত বন্ধু, আমার প্রণম্য শিক্ষককুল , আমার সুজনেরা l
এই বৃহৎ জগৎ নিয়েই আমি জীবনের পথ চলি, জীবনের কথা বলি l
যে পঙ্কিলতা, যে অনাবশ্যক জটিলতা প্রতি মুহূর্তে সমাজের বুকে গভীর ক্ষত তৈরি করছে… তার সাথে লড়াই করবার শক্তি আমি এই বৃহৎ জগৎ থেকেই পাইl
পৃথিবীর সব কালো র বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাজারো লোকের ভিড়ে এক আলোর পথযাত্রী l
…… মিলি ভট্টাচার্য, প্রধান নগর, শিলিগুড়ি l