বীর বীরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তী, নকশালবাড়িতে পূর্নাবয়ব মূর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ বীর বিরসা মুন্ডার ১৪৬ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে নকশালবাড়ির হাতিঘিসা বিরসা মুন্ডা কলেজের উদ্যোগে কলেজ চত্বরে বীর বিরসা মুন্ডার পূর্ণবায়ব মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় সোমবার। সেখানে নবনির্মিত গ্রন্থাগারের দ্বারোদ্ঘাটনও হয়। তার পাশাপাশি বীর বিরসা মুন্ডা -র জীবনী নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারম্যান গৌতম দেব উপস্থিত ছিলেন।
” অবুয়া রাজ সেতের জনা, মহারানী রাজ টুন্ডু জনা” অর্থাৎ মহারানীর রাজত্ব শেষ হোক আমাদের রাজস্ব স্থাপিত হোক।এই কথা গুলো বেরিয়ে এসেছিল মুন্ডা বিদ্রোহের নায়ক বিরসা মুন্ডার মুখ থেকে। সমাজ সংস্কারক বিরসা মুন্ডা তার মানুষদের কাছে বিরসা ভগবান নামে পরিচিত ছিলেন।
১৪৭ বছর আগে ১৮৭৫ এর ১৫ নভেম্বর তিনি বর্তমান ঝাড়খন্ডের উলিহাটু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পিতা সুগান মুন্ডা ও মা কর্মী হাটুর ঘরে। বৃহস্পতিবার জন্ম বলে মুন্ডাদের প্রথা মতো তার নাম রাখা হয় বিরসা। তখন আদিবাসীদের চরম দারিদ্রতার মধ্যে জীবন যাপন করতে হতো। তাদের বন ও ভূমির অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, ইংরেজদের কুমতলব বিরসা ও তার সহযোগীরা বুঝতে পারেন।এরপর সেখান থেকেই শুরু হয় আন্দোলন বা বিদ্রোহ।
শুরুতে বিরসা মুন্ডা জার্মান মিশনারী স্কুলে ভর্তি হন পরে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন কিন্তু ইংরেজদের ধর্মান্তরকরণ ও জমি দখলের বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই স্কুল এবং খৃষ্টান ধর্ম ত্যাগ করেন অন্য অনেকের সাথে। ধীরে ধীরে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে,১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত তিনি রাঁচিতে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। কথিত আছে ১৮৯৫ সালে বিরসার নাকি ভগবান দর্শন হয়েছিল
তিনি বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। কখনো সখনো বাঁশি বাজাতেন।
১৯০০ সালের ৯ ই জুন বিরসা মুন্ডার ফাঁসি হয় আরো অনেকের সাথে।কথিত আছে, ফাঁসির আগে তার খাবারে বিষ প্রয়োগ করে মারা হয়, ফাঁসি ছিল লোক দেখানো। শিলিগুড়ি শিবমন্দিরের আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক সজল কুমার গুহ বলেছেন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নায়ক বিরসা মুন্ডা সেই ভাবে আমাদের দেশে পুজিত হন না যা সত্যিই কষ্টের।একজন বোধ সম্পন্ন মানুষ, সাধারনের মধ্যে অসাধারণ বিরসা মুন্ডার চরণে শতকোটি প্রণাম তাঁর জন্মদিনে। মাত্র সাড়ে চব্বিশ বছরের আয়ুতে প্রবল প্রতাপ কূট ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিরসা ও তার
প্রিয় মানুষগুলো প্রমাণ করেছিলেন দেশভক্তি কাকে বলে।
সোমবার বীরসা মুন্ডাকে নিয়ে নকশালবাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা হয়। তাতে বর্ধমান ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন কৃতি মানুষ। অনেককে সেখানে সন্মাননা দেওয়া হয় যেমন রাষ্ট্রপতিপদক প্রাপ্ত তথা শিক্ষারত্ন প্রহ্লাদ বিশ্বাসকে তার বিশেষ সহযোগিতার জন্য। অনুষ্ঠানে উন্মোচিত হয় কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ বীরেন্দ্র মৃধার একটি কবিতার বই। আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতির শিলিগুড়ি শাখার সম্পাদক সজল কুমার গুহ ও সহ সম্পাদক অনিল সাহা মহাশেয়র নিজস্ব বই ছাড়া শিবমন্দির থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা “উত্তরের প্রয়াস” এর শারদীয়া সংখ্যা তুলে দেওয়া হয় অধ্যক্ষর হাতে নব নির্মিত পাঠাগারের জন্য।