শিল্পী পালিত ঃঃ সকলকে শুভ বিজয়া। সামনে শুভ দীপাবলি। তার জন্যও সকলকে আগাম শুভেচ্ছা। আত্মকথা বিভাগে আজ সমাজকর্মী ও পুলিশ কর্মী বাপন দাসের কথা মেলে ধরা হচ্ছে__
আমি বাপন দাস, উত্তরদিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের হাপতিয়াগছ গ্রামে ১৯৮১ সালের ২মে আমার জন্ম | আমার শিক্ষা জীবনের সূত্রপাত হাপতিয়াগছ নিম্ন বুনিয়াদ বিদ্যালয়ের হাত ধরে | এরপর যথাক্রমে সোনাপুর মহাত্মা গান্ধী উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে শিলিগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি | দ্বাদশ শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমি শিলিগুড়ি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করি | কলেজ জীবনের শেষ বর্ষে সৌভাগ্যক্রমে পুলিশের চাকরিটা পেয়ে যাই | পুলিশে আমার কাজ বিভিন্ন নেতা, মন্ত্রী, আমলাদের নিরাপত্তা প্রদান করা | জীবন ভালোই কাটছিলো | কিন্তু কোথাও মনের এক প্রান্তে সমাজের জন্য কিছু একটা করার ভাবনা মনকে সবসময় বিচলিত করে রাখতো | এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে একদিন গিয়েছিলাম বেলুড় মঠে পুজো দিতে | সেখানে অজান্তেই চোখে পড়ে মা সারদা, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের মতো মহান ব্যক্তিত্বদের কিছু বাণী | আমরা কেন ওনাদের ভগবানের অবতার আসনে বসিয়েছি সেটা ওনাদের বাণী পড়েই বুঝতে পারি | কিন্তু আমাকে যে বাণীটি সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে সেটি হল স্বামী বিবেকানন্দের ” ব্যাটা জন্মেছিস যখন একটা দাগ রেখে যাস ” | এই বাণীটি দেখেই আমার মনের মনিকোঠায় সমাজের জন্য কিছু করার যে একটি সুপ্ত বাসনা ছিল তা সূর্যের আলোর মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার রাস্তা খুঁজে পায় | স্বামীজীর সেই বাণীটি আমার মনে যে দাগ কেটেছিল সেটি আজও বজায় রাখার চেষ্টা করি সমাজের বিভিন্ন মানুষের জন্য ভালো কাজের মাধ্যমে |বর্তমানে আমি শিলিগুড়ি মহকুমার বিধাননগর নিবাসী। ২০১১ সালে বিধাননগর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করি ৬৫ জন কলেজ পড়ুয়া ও বেকার ছেলেমেয়েকে নিয়ে। প্রথম কাজ শুরু করি রক্তদান শিবির আয়োজনের মাধ্যমে। পৃথিবীর সব থেকে বড়ো দান রক্তদান এই কথাটা মাথায় রেখে আস্তে আস্তে আমার সোসাইটির কাজ উত্তরবঙ্গ জানতে শুরু করলো। কোচবিহার বক্সিরহাট থেকে ইসলামপুর, খড়িবাড়ি, বাতাসী, রামগঞ্জ, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বছরে ২০ থেকে ২৫টা রক্তদান শিবির করি। প্রতিবছর নতুন নতুন গ্রাম। শুধু রক্তদান নয়, রক্তদানে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্যে স্কুল, কলেজ, গ্রামগঞ্জে মানুষকে উৎসাহিত করতে শুরু করলাম। ক্লাবগুলো সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশন করলাম।আজ অব্দি প্রায় ৩৫০ এর উপরে ক্লাব রেজিস্ট্রেশন করেছি উত্তরবঙ্গ জুড়ে।এর মাঝে ২০১৩ সালে ইন্দোনিশিয়া ডাক্তার এসোসিয়েশন থেকে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে গ্রামে মানুষের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার জন্য। মাঝে মাঝে ভবঘুরেদের স্নান করিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে থাকি। সেই জন্য ২০১৪ সালে অবুঝ সবুজ ইসলামপুর থেকে পুরস্কার দেয়। ২০১৪তে সুইডেন থেকে অদিতি নামে একটি মেয়ে আসে শিলিগুড়িতে শিখরের সন্ধানে তাকে সাহায্য করি। ২০১৬ সালে উত্তরবঙ্গ পৌষমেলা পুরস্কৃত করে আমাকে। শুধু রক্তদান নয়, নারী অধিকার ও নারী শিক্ষা নিয়ে কাজ করি। প্রতি বছর উত্তরবঙ্গের কিছু নারীকে পুরস্কৃত করি সমাজে কিছু ভালো অবদানের জন্য। কলকাতা পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মচারী আমি মাননীয় সাংসদ সৌগত রায় মহাশয়ের দেহরক্ষী। সাংসদ দিল্লি গেলে শিলিগুড়ির বিধাননগরে সামাজিক কাজ করি। পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ভূল ধারণা ঘোচাতে চাই। বোঝাতে চাই যে, সমাজে এখনো ভালো পুলিশ আছে যারা পরিবারকে সময় না দিয়ে মানুষের কাজ করে দিবারাত। আরো একটি প্রতিজ্ঞা, যতদিন বাঁচবো সরকারি ব্লাড ব্যাংকের জন্য রক্তদান শিবির আয়োজন করে রক্ত পাঠাবো। যাতে গরিব অসুস্থ মানুষেরা বিনেপয়সায় রক্ত পায়। এখনো অনেক কাজ বাকি। পরিশেষে বলি, “ভালো থাকুন ও ভালো রাখুন, আর সবার সঙ্গে হেসে কথা বলুন।