শিল্পী পালিত : আজ আমাদের খবরের ঘন্টা পোর্টালের আত্মকথা বিভাগে কলকাতা আলমবাজার গর্ভনমেন্ট কোয়ার্টারের রাজা বিশ্বাস লিখেছেন তার সংগ্রামের কাহিনী। চিত্র শিল্পী রাজার কথা পড়ুন —
একটি ছেলের আত্মকথা… কলকাতা শহরে তার বাসস্থান.. একেবারে নিম্নবিত্ত পরিবারে তার জন্ম.. ছোট থেকেই চরমতম অভাবের মধ্যে তার জীবনযাপন শুরু হয়.. তার বাবা খুবই সামান্য একটি ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন.. তাও সে ফ্যাক্টরি অর্ধেক দিন বন্ধ থাকতো প্রোডাকশনের অভাবে.. তবে তাদের পরিবার ছিল শিল্পসৃজন পরিবার.. প্রত্যেকেই নিজ নিজ শিল্পগুনে খ্যাত.. স্বভাবতই সেই ছেলেটিও জন্মগত এবং বংশগত প্রতিভা নিয়েই এই ধরিত্রী তে ভুমিষ্ট হয়.. ছোটবেলা থেকেই তার ছবি আঁকা এবং গানের প্রতি এক অদ্ভুত টান ছিল.. ছোটবেলায় বহুবার সে গান গেয়ে নানান জায়গা থেকে পুরস্কার পায়.. এবং ছবি এঁকেও.. শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি যে, ছেলেটি হাতে খড়ির সময় লেখার বদলে একটি বাড়ি এঁকেছিল.. পুরোহিত মশাই সেইদিনই তার মা বাবা কে বলেছিলো যে, ছেলেকে ভালো কোনো আঁকার স্কুলে ভর্তি করানোর কথা.. কিন্তু বললে কি হবে, ওই অভাবে নিজেদেরই পেট চলতো না.. তার মধ্যে আবার আঁকার স্কুল.. এই ভাবে ছোটবেলা থেকেই তার সংগ্রামী জীবন শুরু হোলো.. ধীরে ধীরে সে বেড়ে উঠতে লাগলো.. সে একটি বিদ্যালয় ভর্তি হোলো.. ছবি আঁকা, গানের সাথে সাথে তার পড়াশোনার মেধাও ছিল অভূতপূর্ব.. কিন্তু পয়সার অভাবে সেটাও সম্পূর্ণ হয়ে ওঠেনি.. মাস্টারকে মাইনে দিতে পারতো না তার বাবা, তাই তাকে বারবার কোচিং চেঞ্জ করতে হতো.. একদিন তার বাবা গত হন.. সংসারের দায়-দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে.. সুতরাং তার পড়াশুনাটাও মাঝ পথে থেমে যায়.. ছবি আঁকাতেও ইতি টানতে হয়.. বাজারে প্রচুর দেনা.. দেনার দায়ে তার মা বাড়ি থেকে বের হতে পারতো না.. পাওনাদাররা ক্রমাগত তাগাদা দিতো.. অবশেষে ছেলেটিকে কাজে কম্মে ঢুকতে হলো, বহু কষ্টে সেই দেনা থেকে মুকুব হলো তারা… গানটাতো ছেলেবেলা তেই বন্ধ হয়েছিল, আঁকাটাও বন্ধ হোলো চিরতরে.. এভাবে কেটে গেলো ছয় বছর.. ছেলেটি হঠাৎ ঠিক করলো যে সে আবার ছবি আঁকা শুরু করবে.. শুরুও করলো.. কিন্তু সেখানেও নানান ঘাত-প্রতিঘাতে, নানান বাধা-বিপত্তিতে জর্জরিত হতে লাগলো সে.. কিন্তু সে থেমে থাকলো না, হার মানলো না.. সমস্ত বিপত্তিকে কাটিয়ে আগে এগিয়ে যেতে লাগলো.. হঠাৎ সেই সময় তার জীবনে এক নারীর আবির্ভাব ঘটে, বড়োই অদ্ভুত সেই নারী.. অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে.. ছেলেটিকে নানান ভাবে সাহায্য করতো.. গরিব বলে তাকে আর্থিক সাহায্যও করতো.. কিন্তু ছেলেটিও তাকে খালি হাতে ফেরাতো না.. মেয়েটিও তার ব্যক্তিগত জীবনে হাজার সমস্যার শিকার ছিল.. ছেলেটি তাকে সঠিক পরামর্শ এবং গভীর ভালোবাসা দিয়ে তাকে আগলে রাখতো সর্বদা.. মেয়েটিও ছবি আঁকতে ভালোবাসতো.. ছেলেটি তাকে নিজে হাতে তাকে আঁকা শেখায়.. একদিন সামান্য কিছু ভুলবোঝাবুঝির কারণে মেয়েটিও তার সঙ্গ ছেড়ে চিরকালের মতো চলে গেলো.. আজ সেই মেয়েটিকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে তার গুরু কে ? মেয়েটি সেই ছেলেটির নাম বলতে অস্বীকার করে.. ব্যাস, আবার ছেলেটির আঁকায় এক বিরাট বাধা পড়লো.. হাসপাতালে ভর্তি হোলো ছেলেটি.. অনেক কষ্টে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ছেলেটি আবার তার আঁকার জীবনে ফিরলো.. আপনাদের সকলের ভালোবাসায় এবং ভগবানের আশীর্বাদে সে আজ একটু দাঁড়িয়েছে.. কলকাতার বহু খ্যাতনামা গ্যালারিতে সে বহুবার চিত্র-প্রদর্শনী করেছে, আগামীতেও করবে.. লেখালেখির জন্যে সে বহু পত্রপত্রিকা এবং বিভিন্ন ম্যাগাজিন থেকেও সে সম্মানিত হয়েছে.. কিন্তু আজও সে তার যোগ্যতা অনুযায়ী জীবনে সফলতা পায়নি.. কিন্তু সে হার মানবার ছেলে নয়.. লড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন, সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তার জীবন এবং এই দুঃসাধ্য কঠিন প্রতিযোগীদের সাথে.. তার বিশ্বাস আগামী দিনে সে আরও অনেক বড়ো চিত্রশিল্পী হয়ে উঠবে, এবং প্রত্যেকটি অপমানের জবাব সে তার কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করবে.. সেই ছেলেটি হলাম “আমি”.. রাজা বিশ্বাস..
2 No. Dayal krishna mukharjee road, Alambazar GOVT. quarter.. block–C/25.. kolkata–700035
Police station– Baranagar.. Post office — Alambazar