সবাইকে সাজিয়েই স্পর্শ সুখ পান স্বপ্না

শিল্পী পালিত ঃ সবাইকে সাজিয়েই রাধারানীর স্পর্শ সুখ পান স্বপ্না কারক। পড়ুন নিচে—-

“ দেখ তো চেয়ে, আমারে তুমি চিনিতে পার কিনা।।” ছোট থেকে রবি ঠাকুরের লেখা এই লাইনটা আমাকে খুব ভাবাত। সাজ গোজ মানুষের চেহারা যেমন সুন্দর করে তেমনি মনেও প্রফুল্লতা এনে দেয়। যেন অন্য মানুষ হয়ে ওঠে। আমি স্বপ্না কারক ,নিজে সাজতাম আর আয়নায় নিজেকে ওই কথাই বলতাম। আমার মা শ্রীমতী উৎপল রায় আমার এই সাজগোজ এর ব্যাপারটাকে উৎসাহই দিতেন। অন্য মেয়ে বউদেরকে আমার কাছেই সাজতে বলতেন। সে সময় অর্থাৎ আমার ছোটবেলায় পার্লারে গিয়ে সাজবার চল সেভাবে ছিল না। ফলে অনেক বিয়েবাড়িতেও আমি সাজাবার ডাক পেতাম। মা আমাকে দূর্গাপুরে এক বছরের বিউটিশিয়ান কোর্সে ভর্তি করেদিলেন। খুব মন দিয়ে শিখেছিলাম। আমার বাবা শ্রী হরিপদ রায় তার ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকতেন।

আমার জন্ম কলকাতায় হলেও বাবার ব্যবসার সূত্রে দূর্গাপুরে আমাদের পড়াশোনা , বড় হয়ে ওঠা। বিবাহ সূত্রে উত্তরবঙ্গের ইসলামপুরে বসবাস শুরু হল। শ্বশুর মশাই , শাশুড়ী মা , ননদ সবাইকে নিয়ে পরিবারের মধ্যে আমার সাজগোজ করানো ব্যাপারটা চলছিলই। আমার তিনটি সন্তান ।দুই মেয়ে এক ছেলে। মানুষের চাহিদায় আর আমার ভালবাসায় যেন পেশাদারী হয়ে উঠতে লাগলাম। ইসলামপুরে আমার স্বামী একটা দোকান ঘর নিয়ে দেন পার্লারের জন্য। সে সময় আমি অপরাজিতা রুদ্রর এক বছরের ক্লাসে ভর্তি হয়ে পরীক্ষায় সসম্মানে পাশ করি। হাবিবের কাছে চুলের জন্য ট্রেনিং নিয়েছি।

বেশ অনেকগুলো বছর পার করে ছোট মেয়ে শিলিগুড়ি কলেজে ভর্তি হলে ওর সাথে মেসে থাকতাম মাঝে মাঝে। সেখানেও মেয়েদের সাজিয়ে খুব সুনাম কিনেছিলাম। অন্যান্য আত্মীয়দের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করত ঠাকুর নিগমানন্দদেবের সংঘে যোগদানের জন্য। জানিনা নিগমানন্দদেবকে আমার উপাসক স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ রূপে দেখে আমি অভিভূত হই। ওনার বই পড়ে জানার চেষ্টা করি। তারপর জানতে পারি কুলগুরুর দীক্ষা নিলেও সদগুরুর দীক্ষা নেওয়া যায়। তাই নিগমানন্দদেব আমার জীবনের ধ্রুবতারা হয়ে রইলেন।মানুষের চাহিদায় আর আমার গুরুদেব ও রাধারাণীর ইচ্ছায় কলেজপাড়ায় একটা দোকান ঘর ও ফ্ল্যাট পেয়ে গেলাম। সেখানে খুললাম পার্লার। আমার কাছে সব মেয়েরাই যেন শ্রীমতী! আমার নিজের দুই মেয়েই আমার কাছে কাজ শিখেছে। আমাকে সময়মতো সাহায্য করে। অনেক মেয়েদের তৈরী করেছি। অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। কলকাতা,দার্জিলিং শিলিগুড়ি, বিহারে অনেক মেয়েরাই সুপ্রতিষ্ঠিত।মনা দাস, পূজা, চন্দ্রা, তনুশ্রী এরা বেশ উল্লেখযোগ্য। শিলিগুড়ির গৃহবঁধু শিবানী সাহাও খুব ভাল কাজ শিখেছে। আমাকে সাহায্যও করে। ছোট থেকে বয়স্ক সকলেই আসেন সাজতে। আমি সবাইকে সাজিয়েই আমার রাধারাণীর স্পর্শসুখ পাই।( সৌজন্যে ঃঃ কবিতা বনিক)