নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ প্রকৃতির রাজ্যে রয়েছে নানান বৈচিত্র্য। শুধু চাই দেখার মতো মন বা দেখার মতো চোখ। ঠিক গাছেদের শিকডেও রয়েছে হরেকরকমের সৃষ্টি। শুধু সেই সৃষ্টিকে সেভাবে দেখতে হবে। শিলিগুড়ি লেক টাউনের অসিত খাসনবিশ সেভাবেই গাছের শিকড়ের মধ্যে নানান সৃষ্টি দেখে তার নেশাতে মগ্ন।
গাছের শিকড়ের মধ্যে অসিতবাবু আবিষ্কার করেছেন গণেশ মূর্তি। আবার তাতেই তিনি দেখেছেন হাতির মূর্তি। এরকমভাবে কোনও গাছের শিকড়ে কাক, কোনোটায় ফাইটিং মুডে থাকা বক্সার, কোনোটায় পরিশ্রমে ঝুঁকে পড়া শ্রমিককে দেখতে পেয়েছেন তিনি। আর সেসব শিকড় সংগ্রহ করে বাড়িতে এনে তাতে একটু পালিশ করে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিয়েছেন ঘরে। এরকম একশোর বেশি শিকড় তার সংগ্রহে রয়েছে।
শিলিগুড়ি স্বস্তিকা যুবক সংঘে এবছর পুরুলিয়ার ছৌকে ভিত্তি করে পুজোর মন্ডপ সজ্জা তৈরি করেন অসিতবাবু। বাগডোগরার হাটখোলাতে আবার তিনি তৈরি করেন পুতুলের ওপর ভিত্তি করে মন্ডপ। বর্ধমানের একটি গ্রাম থেকে তিনি সংগ্রহ করে আনেন পুতুল। পুজোর মন্ডপ সজ্জার চেয়ে অসিতবাবুর শিল্প কর্মের আরও বড় পরিচয় হলো, গাছের শিকড় থেকে অসাধারণ সব শিল্প কলা ফুটিয়ে তোলা। এখন তার কাছে একশোর বেশি শিকড় সংগ্রহে রয়েছে। আগুন জ্বালানোর জন্য যারা জ্বালানি কাঠ বিক্রি করেন তাদের থেকেও তিনি অনেক শিকড় সংগ্রহ করেছেন। তার এই শিকড় সংগ্রহের নেশা ৩৫-৪০ বছর বয়সে শুরু হয়। এখন তার বয়স ৭৫ বছর। বহুদিন আগে তিনি যখন এক রাস্তা দিয়ে হাটছিলেন হঠাৎ তার পায়ের নিচে জুতোয় আটকে যায় একটি গাছের শিকড়। তিনি সেই শিকড়টি জুতো থেকে খুলে নিয়ে দেখতে থাকেন। তার মনে হয় যেন কোন ক্রিকেট বোলার বল করছে। তিনি শিকড়টি রাস্তায় ফেলে না দিয়ে তার বাবার কাছে নিয়ে আসেন। তার বাবা সেটি দেখে বলেন খুজলে পাবি! এরপর থেকেই তার শিকড়ের প্রতি অন্যরকম টান তৈরি হয়। শুরু হয় খোঁজাখুজি। শিকড় সংগ্রহ থেকে শিল্পকর্মের নেশা তাকে পেয়ে বসে। আজ এই ৭৫ বছর বয়সেও সেই নেশা অব্যাহত রয়েছে। বহু পুরস্কারও পেয়েছেন। বাকি দিনগুলোয় সহধর্মিণী সাধনা খাসনবীশকে সঙ্গে নিয়ে এভাবেই তিনি পার করে করে দিতে চান।