আমার গানের অনুভূতিটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি, লিখেছেন ঝুমকি সমাজদার

শিল্পী পালিত ঃ আজ আমাদের এই ওয়েবনিউজ পোর্টালের আত্মকথা বিভাগে শিলিগুড়ি প্রধান নগর থেকে লিখেছেন সঙ্গীত শিল্পী ঝুমকি সমাজদার—

গান ই আমার প্রাণ
আমি ঝুমকি সমাজদার। আমার গান অনেকেই শুনে থাকেন এবং অনেকে ভালোওবাসেন। তবে কেউ কোনোদিন ইতিহাসটা জানতে চায়নি। আজ খবরের ঘণ্টার সম্পাদক শ্রী বাপি ঘোষ মহাশয় আর সহ-সম্পাদিকা শ্রীমতী শিল্পী পালিত মহাশয়াকে অজস্র ধন্যবাদ জানাই আমাকে আমার গান সম্বন্ধে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমাকে যোগ্য মনে করে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁদের দরবারে।আজ শুধু আমার কথাই জানতে চাওয়া হয়েছে কিন্তু, প্রসঙ্গত বলে রাখি আমরা যমজ দু বোন। কথা যখন গান নিয়ে বোনের কথা আসবেই। আমরা এক আত্মা এক প্রাণ। মায়ের মুখে শোনা রুমকি কথা বলার আগেই,,,” গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি” গানটি যে জীবন যাত্রা শুরু করেছে। ৩ বছর বয়স থেকে আমরা স্টেজ এ গান করি। এ সব কিছুর পেছনে একমাত্র আমার মা Bithika Samajdar এর অবদান।
আমাদের প্রথম শিক্ষা গুরু আমার মা। মায়ের কাছে আমাদের হাতে খড়ি। বাবা late Ashit Baran Samajdar চাকরি সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকার দরুণ অনেক বড়ো বড়ো গুরুর কাছে গান শেখার সুযোগ হয়েছে। গুরু সঞ্জয় দুবে, গুরু সাধন মৈত্র, গুরু ভোলানাথ চক্রবর্তী, গুরু শংকর মুখোপাধ্যায়, গুরু কুমকুম মুখার্জী।
শিলিগুড়ি আকাশবাণী রেডিও সেন্টার এর নিয়মিত শিল্পী ছিলাম আমরা। রুমকি এ গ্রেড, আমি বি হাই গ্রেড। শিশু মহল, যুব বাণীতে নিয়মিত যেতে হতো। সব গান মা তুলে দিত। এমনকি এখনও পর্যন্ত কোথায় কি করবো না করবো সব মা ঠিক করে দেন। মা আমার সবচাইতে বড় প্রেরণা। যখন কোনো প্রতিযোগিতাতে যেতাম মনে মনে চ্যালেঞ্জ করতাম যে আমাকে প্রথম হতেই হবে আর হতামও।জীবনে স্বীকৃতি সেভাবে পাওয়ার সুযোগ হয়নি বললেই চলে। বেলঘরিয়াতে একটা মেলা হতো সাত দিনের। সেখানে একবার গান করেছিলাম। পরের দিন শুধুমাত্র আমার গান শোনার জন্য মেলাটাকে এক্সটেন্ট করেছিল। এটা আমার কাছে অনেক বড়ো প্রাপ্তি। সিটিভিন এ ২ বার গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছে। কলকাতায় নজরুল মঞ্চে নচিকেতা চক্রবর্তীর সাথে এক মঞ্চে গান গাইবার সুযোগ পেয়েছি। সা থেকে সাতে যাবার সুযোগ পেয়েছিলাম , বাচ্চা ছোট থাকায় যাওয়া হলো না।স্কুল, কলেজের বন্ধু, পাড়া প্রতিবেশী সবাই আমাদের গান খুব ভালোবাসে। স্কুলে টিফিন পিরিওড এ টিচার্স রুমে আমাদের ডেকে টিচাররা একের পর এক গান শুনতেন। বহু বছর আগে যখন নিয়মিত সন্ধে বেলায় কারেন্ট চলে গেলে আমরা বারান্দায় বসে গান করতাম তখন আশপাশের সবাই বলতো এটা গা ওটা গা। কেউ কেউ আবার ল্যাম্প পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে চুপ করে গান শুনত। এগুলো যখন ভাবি তখন মনে খুব আনন্দ হয়। একবার রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্রকে সামনে বসে গান শোনানোর সুযোগ হয়েছিল। উনি খুব প্রশংসা করেছিলেন। ছোটবেলায় সবাই খেলনা বাটি, পুতুল নিয়ে খেলে। আমরা অর্কেস্ট্রা অর্কেস্ট্রা খেলতাম সারা দুপুর ধরে।
একবার দীনবন্ধু মঞ্চে অনুষ্ঠান করেছিলাম। পেপারে অনেক প্রশংসনীয় কথা ছাপা হয়েছিল। আমার গান শুনে সবাই হাত তালি দেবে, ভালো বলবে এটাতেই আমার শান্তি। আমার গানের অনুভূতিটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করি। কোনো দুঃখের গান শুনিয়ে কারোর চোখে যদি জল আনতে পারি, রোমান্টিক গান শুনিয়ে যদি কারো মনে রোমান্স জাগাতে পারি তাহলে ওখানেই আমার জয়।এই pandemic situation এ ঘরে বসে বসে সবাইকে একটু আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবুও নিজে কোনোভাবে সন্তুষ্ট হতে পারছি না। আমার গানের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন কোনো প্রোগ্রাম করে সত্যি খুব ভালো লাগে। এখন তো সেটাও বন্ধ।
তবে আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি সব আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে।ভবিষ্যতে অনেক কিছু করতে চাই কিন্তু কতটা কি করতে পারবো জানি না।
Jhumki Samajdar
Nivedita road.
Pradhan Nagar
Palash Priya
Siliguri
Darjeeling.