শিল্পী পালিত :আজ আত্মকথায় দিল্লির আজাদপুর নিবাসী মনীষা কর বাগচির কথা মেলে ধরা হচ্ছে —-
সবুজে ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রামে আমার জন্ম। ধুলোবালিতে খেলতে খেলতে বড় হয়েছি।
আমি মনীষা কর বাগচী। বাড়িতে সবাই আদর করে পাখী বলে ডাকে। আমার বাড়িতে ভাইবোনদের মধ্যে আমি সবার বড়। সুতরাং সবারই আদরের ধন ছিলাম। ঠাম্মির তো আমি চোখের মনি ছিলাম। ঘাস, ফুল, পশু, পাখি, নদী, নালা, গরু, বাছুর সকলকে ভালোবেসে ধীরে ধীরে বড় হয়েছি। বাড়ি ভর্তি লোক, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন সকলের ভালোবাসা পেয়েছি ভরপুর। বেলফুলের গন্ধে শিহরিত হতাম। লেবু ফুলের গন্ধ আমাকে মাতাল করে দিত। আমের মুকুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেছি প্রাণ ভরে। মৌমাছির মত আমার দুটি চোখ ভু ভু করে বেড়িয়েছে ডালে ডালে পাতায় পাতায় ফুলে ফুলে।
একদিন বড় হলাম। বুঝতে শিখলাম এটাই দুনিয়া নয়, এর বাইরেও দুনিয়া আছে। তারপর আরও বড় হলাম। অনেক বড় হলাম। মা বাবার ঘর তখন আমার কাছে ছোট হয়ে গেল। বেরিয়ে পড়লাম বৃহত্তর পৃথিবীর আশায়।
ঘরের বাইরে পা রাখলাম। স্বামীর হাত ধরে পাড়ি দিলাম দিল্লির বুকে। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হয়েছে। এই কংক্রিটের দুনিয়ায় আমি যেন একেবারেই বেমানান। সুখে দুঃখে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। হাসকে জিও চাই রোকে জিও জীনা তো পড়তা হ্যায় জি। বেঁচে বর্তে আছি তাই…
একটি মেয়ে (বিদিশা কর) একটি ছেলে (হিমাদ্রী শেখর কর)। মেয়েটিকে মনের মত মানুষ করেছি। ছেলেটি এখনও পড়ছে। দেখি ওকে কতটা কি করতে পারি। চেষ্টা তো আপ্রাণ করে যাব আগে ওর ভাগ্য।
লেখালেখি শুরু করি স্কুলে থাকাকালীন। আমি লিখি তখন কেউ খুব একটা জানত না। বিয়ের পর কয়েকটি বছর এই দুনিয়া থেকে একেবারেই আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম। ছেলেমেয়ে সংসার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছিলাম। ফেসবুকে এসে আবার নতুন করে শুরু করেছি বেঁচে থাকা।
যা লিখি যেমন লিখি আমি সন্তুষ্ট। অনেকের সমাদর পেয়েছে আমার লেখা। আমার লেখা কোনো একজন মানুষেরও যদি ভালো লাগে আমি মনে করি আমার লেখা সার্থক হয়েছে।
এ পর্যন্ত আমার ছয়টি একক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে:
(১) নীল দিগন্ত(২)চোখের কোণে জল(৩)নূতন ভোর(৪)বসন্তরেণু
(৫)শিউলি বেলার সুর(৬)মূলসন্ধির কবি তপন বাগচী- নিবিড় অনুধ্যান
সত্যি কথা বলতে কি আমার সম্পর্কে কেউ কিছু লিখতে বললে ভারি লজ্জায় পড়ে যাই। কি যে লিখি খুঁজে পাইনা। অতি সাধারণ একটি মানুষ আমি লেখার মত তেমন কিছু তো নেই তাই।
Manisha Kar Bagchi
459/20 Katra Dhanpat Rai
Azadpur Delhi-33