শিল্পী পালিত ঃ আজ আমাদের আত্মকথা বিভাগে কলম ধরেছেন প্রয়াত বিশিষ্ট পুলিশ অফিসার প্রভাত চক্রবর্তীর স্ত্রী অদিতি পি চক্রবর্তী। তিনি ছোট থেকেই লেখালেখি করেন আবার তিনি একজন সঙ্গীত শিল্পীও।পড়ুন তাঁর কথা—
আমার সাংস্কৃতিক জীবন
“”””””””””””””””””””””””””””””””””””
“আমি বনোফুল “”””””””””'”””””””🌼”””””””””””””””
সত্তর সালে হাওড়া বোটানিকেল গার্ডেনে মামাবাড়ি ও ঠাকুরদাদার বাড়ি থেকে সোজা
লাটাগুড়ি চলে আসা তিন মাস বয়সে.বাবা লাটাগুড়ি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন.
বন পাহাড় ঘেরা পরিবেশে আমি বড়ো হয়েছি… তার সাথে ছিলো সাহিত্যের আঙিনা, বাবার কাছে কবিতা লেখার হাতেখড়ি, সাহিত্য ভারতী পিতার অগাধ পান্ডিত্য, শুনে শুনেই সংস্কৃত শ্লোক মুখস্ত হয়ে গেছিলো.
আমার শিক্ষা গুরু আমার পিতা. যতদিন তিনি সুস্থ ছিলেন
ততদিন আমায় পড়িয়ে গেছেন নানা বিষয়ে.
কলকাতা বেতার শিল্পী আমার মা, তিনি আমার সঙ্গীত গুরু.
তার কাছেই আমার সংগীতের হাতে খড়ি.
বাবা লিখতেন মা সুর করে করে গাইতেন, বাবা খুব ভালো নাটক লিখতেন, স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা
বাড়িতে আসতো, রিহার্সাল হতো. এ সব দেখে দেখে বড়ো হয়েছি, যা কিছু পেয়েছি সবই মা বাবার দান.
ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যায়, বিয়ের পড়ে পড়াশোনা করেছি.
স্বামীর পুলিশের কঠিন চাকরি,শিলিগুড়ি কলেজে ভর্তি হয়েও যেতে পারিনি, সামাজিক পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিলো তখন, তাকে ফোনে অনেক হুমকি শুনতে হয়েছিল, নামকরা একজন অপরাধীকে তিনি গ্রেপ্তার করেছিলেন, যাকে বলে আসাধ্য সাধন কাজ. অনেকেই জানেন সেটা. যাহোক আমি ঘরে বসেই পড়াশোনার সাথে সাথে সঙ্গীত চৰ্চা করতাম, কবিতা লিখতাম…এভাবেই দিন কাটছিলো. দুই সন্তান জন্মালো, শশুর শাশুড়ি ছিলেন, বাড়িতে একটা আধ্যাত্মিক পরিবেশ ছিলো।অনেক ঘটনা আমার জীবনে জড়িয়ে আছে তা বলে শেষ করা যাবেনা. গান লেখা সুর করা এ সব খুব সহজাত ব্যাপার আমার কাছে, কিন্তু ধৈর্য কম.
ঈশ্বর আমায় পথ দেখিয়ে নিয়ে চলছেন, আমি স্বামীর কাছ থেকে অনেক প্রেরণা পেয়েছি।তিনি সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন।যখন আমরা মাথাভাঙ্গায় গেলাম তখন জীবনে একটা বড়ো পরিবর্তন আসে আমার,সাংস্কৃতিক চর্চার একটা পীঠস্থান যেন মাথাভাঙ্গা।মাথাভাঙ্গার সারস্বত উৎসব বিশাল বড়ো করে হতো।গান কবিতা নাটক কোনো কিছু বাকি ছিলোনা, অনেক গুণী মানুষের সান্নিধ্যে আমি এসেছি এখানে। সারস্বত উৎসবে গানের প্রতিযোগিতায় অনেক পুরস্কার পেয়েছি, আমার ছেলে মেয়ে আমার লেখা গান করে পুরস্কার পেয়েছে। শুধু হারমোনিয়াম বাজিয়ে কোচবিহার জেলায় আমি প্রথম হই.. রাজ্য স্তরে গিয়েও আমি অংশ গ্রহণ করতে পারিনি, পরিস্থিতির কারনে.সারস্বত উৎসবে আমার লেখা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল, প্রচুর প্রশংসা পেয়েছি।মাথাভাঙ্গা থানায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয়েছিলো, আমার স্বামী রক্তদানের ওপর একটা গান লিখতে বলেছিলেন.
“যদি একফোঁটা রক্ত দাও, তবে বেশী কিছু তুমি করবেনা ”
আমার এই গানের অডিয়োটা অনেক জায়গায় বাজানো হয়.
প্রচুর গান লিখেছি… সুর করেছি, নিজেও গাই.
বিভিন্ন বিষয়ে আমার লেখা গান রয়েছে… শ্যামাসঙ্গীত ভজন আধুনিক,দেশাত্মবোধক, আধ্মাত্মিক, কীর্তন, বাচ্চাদের জন্যও লিখেছি।কিছু গান রেকর্ড করা হয়েছিল, সেগুলো পরে আর ঠিক করা হয়নি. জীবনে অনেক সুযোগ এসেছে কিন্তু পরিবার আগে, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, তার বদলির চাকরি, এটা মাথায় রেখে চলেছি।2003 সালে জলপাইগুড়ি sp সিদ্ধিনাথ গুপ্তা মহাশয় আমার কবিতার বই “স্মৃতির পাতা ”
প্রকাশ করেন. অনেক গুণী জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন.
Dr আনন্দগোপাল ঘোষ মহাশয়,মুকুল সান্যাল, আমাদের পুলিশ আধিকারিকরা, পুলিশ পরিবারের অনেক জন, সঙ্গীত শিল্পীরা.
জলপাইগুড়িতে ট্রাফিকের ওপর নাটক লিখে, পুরস্কার পেয়েছি.. পুলিশ কর্মীরাও অনেকে অংশ গ্রহণ করেছিল তাতে. আমার লেখা গান এখনো অনেকে গায়. আনন্দ গোপাল ঘোষ, কবি বিপদভঞ্জন সরকার ওনাদের সাথে নিখিল বঙ্গ সাহিত্যের এক অনুষ্ঠানে আমার লেখা ও গাওয়া দুটো গান দুরদর্শনে প্রচার করা হয়েছিল. আরও অনেক রয়েছে, বলে শেষ করতে পারবোনা. এখনো কবিতা গান লিখে চলেছি.
বিভিন্ন গ্রুপে লিখছি.
মাঝে এই জগৎ থেকে দূরে চলে গেছিলাম, মুম্বাইতে ছিলাম বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য. যখন ভাবলাম এখন কিছু করবো, স্বামী হাত ছেড়ে চলে গেলেন….
মানুষের ভালোবাসাই আমার সব চেয়ে বড়ো পুরস্কার….
এক জীবনে কি সব কিছু পাওয়া
যায়…! লাটাগুড়ির বন জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশ আজও আমায় ডাকে, মাঝে মাঝে যাই সেখানে.
মন বলে “আমি বনো ফুল “.
এখান থেকেই যে আমি আমাকে জানতে পেরেছি, চিনতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি.
“গুরু আমায় দেখাওনা পথ আর দেরি নয় এই বেলা…
সফল করো মোর সব সাধনা
সাঙ্গ হোক মিছে খেলা ”
হ্যা তবে আর একটা কথা আমি একজন হস্তরেখাবিদ, জ্যোতিষ শাস্ত্র নিয়ে আমি পড়াশোনা করেছি পরবর্তীতে.
শিলিগুড়ি আশ্রম পাড়ায় আমার চেম্বার ছিলো, করোনা কালের জন্য এখন আর বসিনা।
অদিতি পি চক্রবর্তী