স্বামী আর্ত অসহায় মানুষের চিকিৎসায় নিজেকে সঁপে দিয়েছেন, স্ত্রী বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ে অগ্নিগর্ভ মনিপুর থেকে ফিরলেন,শুনুন রোমহষর্ক বর্ণনা

বাপি ঘোষ ঃ অসমের প্রয়াত বিশ্ব খ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ডঃ ভূপেন হাজারিকার মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য গানের লাইন আমরা অনেকেই জানি।গানটি আমরা অনেক সময় গুনগুনিয়ে গেয়েও ফেলি। মানুষ যদি না হয় মানুষ, লজ্জা কি তুমি পাবে না বন্ধু, সে গানে মানবতার বিরাট কালজয়ী বার্তা দিয়ে গিয়েছেন প্রয়াত সেই প্রতিভাবান শিল্পী। শুধু ভূপেন হাজারিকা কেন, পৃথিবীর ইতিহাসে যত মনিষী এবং মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে তাঁরা সকলেই নিজেদের কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে সর্বোপরি সাধনার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব এবং মানুষে মানুষে প্রেম ও সম্প্রীতির বার্তাই দিয়ে গিয়েছেন।
আজ আমাদের সভ্যতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উন্নতির শিখরে। আজকের এই শিক্ষা বিস্তারের যুগে জাতি ধর্মের বিভেদ মানে আমাদের প্রাচীন বর্বর যুগের কথাই স্মরন করিয়ে দেয়।আর ভারতবর্ষের মূল সুরই হলো বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। বহু মহাপুরুষের আবির্ভাব বিজড়িত পবিত্র এই ভারত ভূমিতে বহু ভাষা বহু জাতি বহু ধর্ম এক সুরে পরস্পর পরিবারের মধ্যে বসবাস করে আসছে।কিন্তু মাঝেমধ্যে কখনো কখনো সেই সুর বা তাল কেটে যায়। যেমন এখন কিছু দিন ধরে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য মনিপুর অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে। অগ্নিগর্ভ মনিপুরের পরিস্থিতি এখন অবর্ননীয়। সেখানে এখন মানবিকতা চরম ভাবে ভূলুণ্ঠিত। কিছু মানুষ সেখানে এখন পশুর চেয়েও অধম রাজ্যে প্রবেশ করেছে।সরকার সবসময় সেখানে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এইরকম অগ্নিগর্ভ আর গোলাগুলির মধ্যেও কিন্তু জীবনকে হাতের মুঠোয় রেখে কোনো কোনো মানুষ কাজ করে চলেছেন।একদল মানুষ যখন হিংসায় উন্মত্ত তখন একদল মানুষ আবার আর্ত অসহায় মানুষের জন্য সেবামূলক ভাবনা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী সেক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে চলেছে। দুপক্ষকে নিরস্ত করা এবং সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ চলছে সেনা বাহিনীর। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর চিকিৎসকদেরও বিরাট অবদান রয়েছে। গত পয়লা জুলাই আমরা চিকিৎসক দিবস পালন করলাম। কিন্তু আমরা শিলিগুড়িনিবাসী ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর ডাক্তার পুস্পল চক্রবর্তীর দেশপ্রেম ও কর্তব্যনিষ্ঠার কথা কতটুকু জানি? শিলিগুড়ির প্রয়াত পুলিশ অফিসার প্রভাত চক্রবর্তীর পুত্র মেজর ডাঃ পুস্পল চক্রবর্তী। তাঁর মা বিখ্যাত কবি ও সঙ্গীত শিল্পী অদিতি পি চক্রবর্তী। এই ডাঃ পুস্পল চক্রবর্তী অগ্নিগর্ভ মনিপুরে থেকে শয়ে শয়ে আহত ও যন্ত্রণা ক্লিষ্ট মানুষকে সেবা দিয়ে চলেছেন যা সত্যি স্যালুট জানানের মতো।মেজর চিকিৎসক ডাঃ পুস্পল চক্রবর্তীর স্ত্রী ময়না চক্রবর্তী অগ্নিগর্ভ মনিপুর থেকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট আর বুলেটপ্রুফ হেলমেট পড়ে কলকাতা হয়ে শিলিগুড়ি ফিরেছেন। শনিবার ৮ জুলাই তাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিলো। কিন্তু জীবনের এই মূল্যবান ও স্মরনীয় মুহূর্ত ময়নাদেবী স্বামীর সঙ্গে কাটাতে পারলেন না।আর এদিন সকালে অগ্নিগর্ভ মনিপুর থেকে মেজর চিকিৎসক স্বামীর মানবিক বার্তা পেয়ে ময়নাদেবী শিলিগুড়িতে অনগ্রসর শিশুদের জন্য খাতা চকোলেট ইত্যাদি তুলে দিলেন ব্যতিক্রমী টোটো চালক ও সমাজসেবী মুনমুন সরকারের মাধ্যমে। অপরদিকে ছেলের জন্য মা অদিতিদেবী সবসময় চিন্তায় থাকলেও ছেলে দেশের জন্য সেবায় মত্ত এ ভাবনাতে গর্ব অনুভব করেন। মেজর চিকিৎসক ডাঃ পুস্পল চক্রবর্তীর স্ত্রী ময়না চক্রবর্তীও তাঁর স্বামীর এই মানবিক সেবায় গর্ব অনুভব করেন। এখন ফোনে ফোনেই যতটা সম্ভব ডাক্তার পুস্পল চক্রবর্তীকে প্রেরনা ও সাহস দিয়ে চলেছেন মা অদিতিদেবী এবং স্ত্রী ময়নাদেবী। অদিতিদেবী কিছু দিন আগে স্বামীকে হারিয়েছেন, এখন পুত্র অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যে। তারমধ্যেও সঙ্গীত ও কবিতা সৃজনে মানসিক শক্তি সঞ্চয় করছেন। অপরদিকে স্বামীর পাশে দাঁড়াতে দুচারদিনের মধ্যে সাহসে ভর করে আবারও অগ্নিগর্ভ মনিপুর রওনা হচ্ছেন ময়নাদেবী। মনিপুরের বিবদমান মানুষদের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, পরম ঈশ্বরের কাছে সবসময় প্রার্থনা চালিয়ে যাচ্ছে এই চক্রবর্তী পরিবার।
মনিপুরের শান্তি কামনায় প্রার্থনা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে চলুন আমরা সবাই মিলে মেজর চিকিৎসক ডাঃ পুস্পল চক্রবর্তী সহ তাঁর সমগ্র পরিবারকে স্যালুট জানাই। তাদের কাজ ও দেশপ্রেমকে চলুন সবাই মিলে বারবার কুর্নিশ জানাই।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —–